ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনায় যে প্রতিষ্ঠানটি মানুষের হাড়ভাঙা জোড়া দেয়ার কথা অথচ সে প্রতিষ্ঠানটিকেই জোড়াতালি দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত এবং প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ না থাকায় উদ্বোধনের ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও সম্পূর্ণরূপে চালু হয়নি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার দাউদকান্দির ট্টমা সেন্টারটি। অথচ জোট ও মহাজোট সরকারের দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রীই এর উদ্বোধন ঘোষণা করেছিলেন। কোনো কর্যক্রম না থাকায় বর্তমানে এটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিতে দাউদকান্দির শহীদনগর এলাকায় গড়ে ওঠে একটি ট্টমা সেন্টার। গণপূর্ত বিভাগের অর্থায়নে ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেন্টারটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে উদ্বোধন করা হলেও আজও চালু করা সম্ভব হয়নি। অথচ মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই কুমিল্লার কোন না কোন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় সংঘটিত হলে স্থানীয় ডাক্তাররা দ্রæত ঢাকার পঙ্গু হাসাপাতালে রেফার করে। কিন্তু ঢাকা নেওয়ার পথে চিকিৎসার অভাবে প্রতি বছর সড়ক দুঘর্টনায় প্রাণ হারাচ্ছেন শত শত যাত্রী।
জানা গেছে, বিগত বিএনপি দলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার আগ মুহূর্তে সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর সেন্টারটির প্রথমে উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে মাস খানেক পর সেন্টারটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে আওয়ামী লীগ মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ আ.ন.ম রুহুল হক ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মত ট্টমা সেন্টারটি ঢাকঢোল বাজিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের কালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনা কবলিত যাত্রীদের উন্নত চিকিৎসা সেবার প্রদানের কথা মাথায় রেখে আগামী ১ মাসের মধ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্টমা সেন্টারের প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি এবং জনবল দেত্তয়া হবে, কিন্তু ঘোষণার প্রায় ৮ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো এর কোনো কার্যক্রম চালু হয়নি।
জানা গেছে, ট্টমা সেন্টারটি কার্যক্রম চালু না হত্তয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ গৌরীপুর-হোমনা-বাঞ্ছারামপুর, গৌরীপুর-সাচার-কচুয়া, গৌরীপুর-মতলব-চাঁদপুর, ইলিয়টগঞ্জ-মুরাদনগর রোডে প্রায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কোনো রোগী চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। গত ৮ আগষ্ট নিজ মোটরসাইকেল যোগে ঔষধ কোম্পানির রিপপ্রেজেনটিভ আমিনুল ইসলাম অফিসের কাছে গৌরীপুর-মতলব সড়কে প্রচন্ড ব্যাথা পায়। স্থানীয়রা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলেও কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। মেঘনা ব্রীজ পার হতেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আমিলুলের চাচাতো ভাই কাইয়ুম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা যারা গাড়ীতে ছিলাম তাদের আমিনুলের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর যেন কিছুই করার ছিলো না।
এ ব্যাপারে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ সুন্দর একটি ভবন ছাড়া আমরা আর কিছুই পাইনি। স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলমগীর খান অভিযোগ করে বলেন, আর কতবার উদ্বোধন করলে এ ট্টমা সেন্টারের কার্যক্রম চালু হবে? সেন্টারটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা থাকলেও গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সেন্টারটি তালাবন্ধ।
এ ব্যাপারে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডাঃ মজিবুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ট্টমা সেন্টার উদ্বোধনকালে মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ডেপুটেশনে সাময়িকভাবে কয়েকজন ডাক্তার দেত্তয়া হলেও পরবর্তীতে জনবল কাঠামোর কোটার অভাবে তাও প্রত্যাহার করে নিয়ে যায়। মন্ত্রণালয় থেকে জনবল ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না দেত্তয়ায় ট্টমা সেন্টারের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন