রু মা ন হা ফি জ
ছোট্ট শিশু মাহফুজ। সবেমাত্র বয়স তার চার কিংবা পাঁচ হবে। বাড়িতে আরো অনেক মানুষ থাকলেও মাহফুজের মতো ছোট আর কেউ নেই। সে যেমন চঞ্চল তেমনিভাবে বুদ্ধিমান। বাড়ির সবাই তাকে খুব আদর করে। মাহফুজের পিতা বিদেশে থাকায় পাশের ঘরের এক চাচ্চুকে সে আব্বু বলে ডকতো এবং তিনিও তাকে নিজের ছেলেন মতো বেশ আদর করতেন। কখনো কোনো জায়গায় গেলে তিনি মাহফুজকে সঙ্গে নিতেন।
এবার প্রাইমারি স্কুলে সে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠেছে। পড়ালেখায়ও সে খুব ভালো। সে জন্য স্কুলের স্যারদের কাছে মাহফুজ প্রিয় ছাত্র। নিয়মিত স্কুলে যাওয়া এবং পড়ালেখাটাও নিয়মিতভাবে করছে আগ্রহের সাথে। তবে অনেকটা বুজ হওয়ার পর থেকেই দাদুর প্রতি তার মায়াটা একটু বেশি। রাতের বেলা কখনো সে মায়ের কাছে ঘুমাতে যায় না। সব সময় দাদুর কাছেই ঘুমায়। খুব চেষ্টা করেও তাকে দাদুর কাছ থেকে নেয়া যেতো না। মা জিজ্ঞেস করলেন আব্বু ‘তুমি আমার কাছে কেনো ঘুমোতে আসো না।’ ‘আমি তোমার কাছে ঘুমোলে ভয় পাই কিন্তু দাদুর কাছে ঘুমোলে আর ভয় পাই না’ মাহফুজ উত্তর দিলো। কখনো যদি ঘুমের মধ্যে দাদীর কাছ থেকে তাকে উঠিয়ে নেওয়া হতো তাহলে সে কেঁদে উঠতো এবং দাদুর কাছে না আসা পর্যন্ত তার কান্না থামতো না। খাবারের সময় এক সাথে খাওয়া, দাদুর সাথে মজার মজার গল্প শুনা। বলতে গেলে দাদু ছাড়া যেন মাহফুজের কোনো কিছ্ইু আর ভালো লাগে না। মাহফুজের আম্মু কোথাও বেড়াতে গেলে তাকে সাথে নিতে পারেন না। কারণ দাদু ছাড়া সে কোথাও যাবে না। নানুবাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময় মায়ের সাথে লুকোচুরি করে নানা বাহানা খুঁজতে থাকে না যাওয়ার জন্য। এ ক্ষেত্রে ছেলের সাথে সবসময় ব্যর্থ মাহফুজের আম্মু।
এদিকে মাহফুজ এবার ক্লাস ফাইভের সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। পরিবারের সবার সম্মতিক্রমে তাকে বাড়ির পাশের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়া হলো। দাদু সব সময় তার পড়ালেখার খোঁজখবর নিতেন। সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য মেজো চাচ্চু তার জন্য একটি নতুন বাইসাইকেল কিনে দিয়েছেন। এতে করে মাহফুজ খুব খুশি। প্রতিদিন স্কুলে সে সাইকেল নিয়ে যাওয়া আসা করে। এদিকে দাদু বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের রোগ্যব্যাধীতে ভুগছেন। বয়সের ভারে রোগাক্রান্ত শরীরে দুর্বলতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন আর সেই আগের মতো মাহফুজকে নিয়ে এক সাথে খাওয়া-দাওয়া কিংবা বেড়াতে যাওয়া হয় না। তবুও নাতীর খোঁজখবর রাখতে ভুলে যাননি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে সময়টা পার করতে হচ্ছে তাকে। নিজে নিজে তেমন একটা দাঁড়াতেও পারছেন না এখন আর। বাড়ির সবাই মিলে দাদুর পাশে বসে গল্প করছেন এমনি এক অবস্থায় হঠাৎ করে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। সবাই তো অবাক। হঠাৎ করে এ কি হলো। অনেকক্ষণ সবাই মিলে চেষ্টা করলেন কিন্তু না, জ্ঞান তো আর ফিরছে না। সাথে সাথে গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তারেরা তার জ্ঞান ফিরাতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিলেন। অনেকক্ষণ পর তিনি চোখের পাতা খুললেন। সবাই সমস্বরে আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। দাদু- তখন কাউকে কিছু না বলে মাহফুজের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করলে, সাথে সাথে মাহফুজ তার দাদুর পাশে গেল। তিনি তখন মাহফুজকে মুখ দিয়ে কি যেন বলতে চাইলেন কিন্তু পারলেন না। আবারো জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। এটাই ছিল মাহফুজকে তার শেষ দেখা। তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বেহুশের মতো কেঁদে উঠলো মাহফুজ।
মাহফুজ প্রতিদিন তার দাদুর কবরের পাশে গিয়ে দু’হাত তুলে মোনাজাত করে। আর চোখে পানি অঝরে পড়তে থাকে মায়াময়ী দাদুর জন্য এখন আর মাহফুজকে আগের মতো সবার সাথে মিশতে দেখা যায় না। সবসময় একা একা আনমনে বসে থাকে। খাওয়া-দাওয়া পড়ালেখাও আগের মতো এখন আর তার মন বসে না। কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেল মাহফুজ। সে খুঁজতে থাকে তার দাদুর মায়া...
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন