নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসন ক্যাডারের মতো সুপার নিউমারারি পদোন্নতি চায় পুলিশ। সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সাত সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। পুলিশ সুপার থেকে অতিরিক্ত আইজি পদমর্যাদার ৪৯৫ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে পুলিশ সদরদফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই চিঠিতে। খবর সংশ্লিস্ট্র সূত্রের।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পদোন্নতির জন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে পুলিশের শত শত কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। তারা পদোন্নতি বঞ্চিত অবস্থায় রয়েছেন। আমরা মনে করি সুপার নিউমারারি বিশেষ কোন ক্যাডারের জন্য নয়, এটি সকলের জন্য প্রযোজ্য।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন। এসপি, অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিআইজি ও অতিরিক্ত আইজি পদে ৪৯৫ জন কর্মকর্তা দ্রুত সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি পাবেন বলে আমরা আশা করছি। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মোঃ সোহেল রানা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র দৈনিক ইনকিলাবকে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরলেই বিষয়টির সুরাহা হবে। অক্টোবরের প্রথমদিকেই পুলিশ ক্যাডারে সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতির বিষয়টি সামনে আসবে। তবে পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী ৪৯৫ জন পদোন্নতি না পেলেও বেশির ভাগেরই পদোন্নতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ওই সূত্র জানায়।
পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গত ৪ জুলাই পুলিশ সদর দফতরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ওঅ্যান্ডএম)সই করা চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন পুলিশ সদরদফতরের কর্মকর্তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, তাদের একই ব্যাচের অন্যান্য ক্যাডারের সহকর্মীরা প্রত্যাশিত পদে পদোন্নতি পেয়ে গেছেন। শুধু পুলিশের বেলায় পদোন্নতি নিয়ে নানারকম জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। অক্টোবরের মধ্যে যদি এ পদোন্নতি না হয় তবে নির্বাচনের কারণে আরও কয়েক মাস পিছিয়ে যাবে। যথাসময়ে পদোন্নতি না পেলে কর্মস্পৃহা কমে যাবে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সামনে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হলে বিষয়টি ঝুঁলে যাবে। কারণ সেসময় সবকিছু করতে হবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী। এজন্য তারা নির্বাচনকালীন সরকারের আগেই বিষয়টির সুরাহা করতে চান। পুলিশের মধ্যে যারা বঞ্চিত হয়েছেন তারাও সুপার নিউমারারি পদোন্নতির ফলে পদোন্নতি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তারা।
ওই কর্মকর্তারা আরো বলেন, অতীতে অনেক কর্মকর্তাই পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এখন যেন কেউ বঞ্চিত না হন সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। নির্বাচনের আগে কোন প্রকার বৈষম্য ঠিক হবে না বলে ওই কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুপার নিউমারারি বা ইনসিটু পদোন্নতির জন্য গত কয়েক মাস ধরেই কর্মকর্তারা অভ্যন্তরীণ বৈঠক করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে বিষয়টি অবহিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পুলিশের আইজি।
সূত্র জানায়, সুপার নিউমারারি পদোন্নতি সংক্রান্ত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে। ক্যাডার সার্ভিসে বিসিএস প্রশাসন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন্দ্রীয় ক্যাডার হিসেবে বিবেচিত। প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে পুলিশ ক্যাডারের সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে খুবই ঘনিষ্ঠ। দুটি বিভাগই সরকারকে মাঠ পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোর তুলনা করলে পুলিশ ক্যাডারের তদারকি পর্যায়ে পদের অপ্রতুলতা খুব সহজে দৃষ্টিগোচর হয়।
চিঠিতে প্রশাসন এবং পুলিশ ক্যাডারের সাংগঠনিক কাঠামোর তুলনা করে বলা হয়েছে, গ্রেড-১ পদমর্যাদার সচিব পদে ৮৯টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ৬৭টি মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে। সুপার নিউমারারিসহ সচিব পদে ৬৭ জন কর্মরত রয়েছেন। সেখানে গ্রেড-১ পদমর্যাদার অতিরিক্ত আইজিপি পদে মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে দুটি। প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত পদ সংখ্যার অনুপাতে পুলিশের পদ ৩৮টি। গ্রেড-২ পদমর্যাদার অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ১২১টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৯০টি মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে। কিন্তু এই পদে ৩৭৪ জন কর্মরত রয়েছেন, এর মধ্যে ২৮৪টি সুপার নিউমারারি পদ। পুলিশে গ্রেড-২ পদমর্যাদার মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে ১৩টি। প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত পদ সংখ্যার অনুপাতে পুলিশের পদ ২২৭টি। গ্রে-১ ও গ্রেড-২ ছাড়াও চিঠিতে গ্রেড-২-এর তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রসাশন ছাড়াও অন্যান্য ক্যাডার সড়ক ও জনপদ, ফরেন সার্ভিস, শুল্ক ও আবগারি, কর ইত্যাদির তুলনায়ও বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চতর পদে ব্যাপক ঘাটতি তুলে ধরা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ৪৯৫ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে সুপার নিউমারারি বা ইনসিটু পদোন্নতি করার ক্ষেত্রে সরকারের (সম্ভাব্য) মাত্র চার লাখ ৯৮ হাজার ৪৮০ টাকা আর্থিক সংশ্লেষের প্রয়োজন হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন