বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ইসলাম : আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথিকৃৎ

প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

॥ ছয় ॥
পূর্বে বাগদাদ ও পশ্চিমে কর্ডোভা-গ্রানাডাকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার বিকাশ ঘটে। এ সময়ে অসভ্য বর্বরতা বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রগুলো মুসলমানদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। তখন থেকেই ব্যাহত হয় মুসলমানদের বিজ্ঞান চর্চার ধারা। বস্তুতপক্ষে এটা ছিল বিজ্ঞানের ইতিহাসের জন্য একটা দুর্যোগ ও দুর্ভাগ্য। কারণ, তখনো মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। হাতেলেখা পা-ুলিপিগুলো জমা থাকতো গ্রন্থাগার সমূহে। এর সংখ্যা ছিল শত সহস্র। অসভ্য বর্বররা বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রগুলো নিজেদের দখলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যবান পা-ুলিপি ও গ্রন্থাগার পুড়িয়ে ফেলে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ইতিহাসে এটা ছিল একটা অবর্ণনীয় ও অপূরণীয় ক্ষতি। এমন কি তাদের নৃশংসতা থেকে বৈজ্ঞানিক ও বুদ্ধিজীবীরা অব্যাহতি পেলেন না। তাদেরকেও তারা নির্দয়ভাবে হত্যা করল। বৈজ্ঞানিক তথা বুদ্ধিজীবীগণের শত শত বছরের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে যে জ্ঞান সঞ্চিত হয়েছিল, মাত্র দিন কয়েকের নৃশংসতায় তা নিঃশেষ হয়ে গেল। এ ধরনের দুর্যোগের কারণে কোন সভ্যতার ধ্বংস হলে তা পুনরুদ্ধার করা সত্যিকার অর্থেই দুরূহ ব্যাপার। এর জন্য কয়েক শতাব্দীর দরকার হয়। প্রয়োজন পড়ে অফুরন্ত সম্পদের। আরো প্রয়োজন অন্যান্য সভ্যতা সম্পর্কে ব্যাপক চর্চা ও পর্যালোচনার। তার চেয়ে বড় কথা এই যে, যখন তখন প্রতিভাবান ব্যক্তি ও মহৎ হৃদয়ের আবির্ভাব ঘটে না। এ দুটোই আসে আল্লাহর বিশেষ রহমত ও দান হিসাবে। বিজ্ঞানের বিকাশে কুরআন মজীদের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তেমনিভাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে শিল্পকলার উন্নয়নের ক্ষেত্রে। বস্তুতপক্ষে কুরআন মজীদ মুসলমানদের শিল্পকলার চর্চায় উৎসাহিত করেছে। যেমন- সুন্দর সহীহভাবে কুরআন সংরক্ষণ প্রচেষ্টা থেকেই ক্যালিগ্রাফি বা সুন্দর হস্তলিখন এবং বাঁধাই শিল্পের সূত্রপাত ঘটেছে। মসজিদ নির্মাণশৈলী থেকেই সৃষ্টি হয়েছে আর্কিটেকচার বা স্থাপত্য এবং অলঙ্করণ শিল্পের।
এক সময়ে ধর্মীয় অনুভূতি ও উপলব্ধি থেকে যে শিল্পের উদ্ভব ঘটে পরবর্তী সময়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিগণের বিলাসিতা সে শিল্পকলাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে ইসলাম আত্মিক ও পার্থিব চাহিদার মধ্যে একটি সামঞ্জস্য বিধান করার নীতি শিক্ষা দেয়। শিক্ষা দেয় সকল বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করার। অর্থাৎ ইসলামের হুকুম এই যে, মানুষের স্বভাবজাত প্রতিভার অবশ্যই বিকাশ ঘটাতে হবে। তবে তা হতে হবে সঠিক এবং আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশিত পথে। তাকে গড়ে উঠতে হবে পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে।
নবী করীম (সা.) বলেছেন যে, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন (মুসলিম ও মাসনদ্-ই-ইব্ন হাম্বল)। অন্য একটি হাদীসে উল্লেখ আছে যে, ‘সবকিছুর মধ্যেই সৌন্দর্য বজায় রাখতে হবে। এমনকি তুমি যদি কাউকে হত্যা কর, তাহলে সে কাজটিও করতে হবে সুন্দর ও রুচি সম্মতভাবে।’ কুরআন মজীদে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন ঃ ‘আমি নিকটবর্তী আকাশকে সংশোভিত করেছি প্রদীপ মালাদ্বারা’ (৬ঃ৫) ‘পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা করেছি...’ (১৮ঃ৬)।
এ প্রসঙ্গে নবী করীম (সা.) একদিন কবরস্থান দেখতে পেলেন। কিন্তু কবরস্থানটি পুরোপুরি সমান ছিল না। তখনি কবরস্থানটি সংস্কার করার নির্দেশ দিলেন এবং বললেন যে, কবরস্থানটি সংস্কার করার সঙ্গে মৃত ব্যক্তির মঙ্গল-অমঙ্গলের কোন সম্পর্ক নেই। তবে আমাদের চোখে এটা দেখতে ভাল লাগে। আল্লাহ এটা পছন্দ করেন যে, আমরা যখন কোন কাজ করব, তখন তা অবশ্যই যথাসম্ভব সুন্দরভাবে করব (ইব্ন সা’দ)।
ললিতকলার প্রতি মানুষের একটি স্বভাবজাত আকর্ষণ রয়েছে। আল্লাহ ত’আলার অফুরন্ত প্রাকৃতিক নিয়ামতের মতো শিল্পকলা সম্পর্কিত প্রতিভাও একটা নিয়ামত। শিল্পকলা মানুষের জীবনাচরণের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। এখানে বলে রাখা আবশ্যক যে, ইসলামে কোন রকম বাড়াবাড়ির অবকাশ নেই। এমনকি সংযমের নামে মাত্রাতিরিক্ত কৃচ্ছ্রসাধন এবং বৈরাগ্য ইসলামে নেই।
নবী করীম (সা.)-এর জন্য সর্বপ্রথম যে মিম্বরটি তৈরী করা হয়েছিল তাও দুটি গোলক বা গোলাকার বস্তু দ্বারা সাজান হয়েছিল। গোলক দুটি ছিল অনেকটা ডালিমের মতো। নবী করীম (সা:)-এর দুই প্রিয় নাতী ও গোলাক দুটি দিয়ে বেশ মজা করে খেলতেন। এখান থেকেই কাঠের কারুকাজের সূত্রপাত ঘটে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন