বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ইসলাম : আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথিকৃৎ

প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

॥ শেষ কিস্তি ॥
পরবর্তীকালে কুরআন মজীদের কপিসমূহ নানা রং-এ সুশোভিত করা হয় এবং সেগুলো বাঁধাইয়ে দারুণ যতœ নেয়া হয়।
সংক্ষেপে শুধু এটুকু বলা যেতে পারে, শিল্পকলার বিকাশ ও প্রসারের ক্ষেত্রে ইসলাম কোন রকমের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে না। বিধি-নিষেধ আরোপ করে থাকে শুধুমাত্র প্রাণীর প্রতিকৃতি চিত্রায়ণ বা নির্মাণের ক্ষেত্রে। এর পশ্চাতেও কতকগুলো যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে। কারণগুলো প্রধানত মনোজাগতিক, সামাজিক, জীববিদ্যা ও আধ্যাত্মিক বিষয় সম্পর্কিত।
অবশ্য কতকগুলো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন, শিশুদের খেলনা, চাদর ও কার্পেট সাজ-সজ্জার বেলায় নবী করীম (সা.) আপত্তি করেননি। বৈজ্ঞানিক চাহিদা যেমন চিকিৎসা, নেতৃত্ব, শিক্ষার ক্ষেত্রে এ বিধি ছাড় দেয়া হয়েছে। আরো ছাড় দেয়া হয়েছে নিরাপত্তাজনিত চাহিদা যেমন পুলিশের পরিচয়পত্র, পলাতক অপরাধীদের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে। তাছাড়া সমসাময়িককালে বিদেশে সফরের জন্য পাসপোর্ট জাতীয় বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও এ বিধিনিষেধ আরোপ করা যায় না।
ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, মূর্তিমান শিল্পের ব্যাপারে ইসলাম যে বিধি-নিষেধ রয়েছে তা কখনো মুসলমানদের শিল্পচর্চাকে ব্যাহত করতে পারেনি, বরং তাদের হাতে বিমূর্ত শিল্পচর্চার যে বিকাশ ঘটেছে তা খুবই বিস্ময়কর। কুরআন মজীদে মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে সাজ-সজ্জার অনুমোদন রয়েছে (সূরা নূর ঃ ৩৬)। বাস্তব উদাহরণ হিসাবে মদীনার মসজিদে নববী, জেরুযালেমের মসজিদ, ইস্তাম্বুলের সোলায়মানিয়া মসজিদ, আগ্রার তাজমহল, গ্রানাডার আল-হামরা প্রাসাদ এবং এ জাতীয় আরো কতকগুলো কীর্তির উল্লেখ করা যেতে পারে। অন্য যে কোন সভ্যতার অসামান্য স্থাপত্য কর্ম বা শিল্প সৌকর্যের তুলনায় এগুলোকে খাট করে দেখার অবকাশ নেই।
মুসলমানরা ছবি আঁকার পরিবর্তে ক্যালিগ্রাফিকে গ্রহণ করেছে একটি শিল্পকর্ম হিসাবে। বলতে গেলে এটি তাদের একান্ত নিজস্ব সম্পদ। তারা প্রধানত অঙ্কন, কাপড় ও বিভিন্ন দ্রব্য চিত্রায়ণের কাছে ক্যালিগ্রাফি ব্যবহার করে থাকে। যে সমস্ত ক্যালিগ্রাফি দরদ, যতœ ও নৈপূণ্যের সঙ্গে প্রণীত হয়েছে, সেগুলোর মান খুবই উন্নত। দেখতেও চমৎকার ও মনমুগ্ধকর। এগুলোর সৌন্দর্য সত্যই অবর্ণনীয়।
কুরআন তিলাওয়াত মুসলমানদের শিল্পচর্চার আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। কুরআন তিলাওয়াতে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের অবকাশ নেই। কুরআনের সকল আয়াত সমান ও একই মাত্রার নয়। নবী করীম (সা.)-এর কাল থেকেই মুসলমানরা পরম আগ্রহের সঙ্গে কুরআন তিলাওয়াত করে আসছেন। কুরআন মজীদের নিজস্ব একটি গতি ও ছন্দ আছে। এর আয়াতগুলো খুবই শ্রুতিমধুর ও মিষ্টি। অন্য যে কোন ভাষার গতি ও ছন্দের মান যত উন্নত ও চিত্তাকর্ষকই হোক না কেন, তা কখনো কুরআন মজীদের মিষ্টি-মধুর সুরকে মøান করতে পারে না। যারা ক্বারী সাহেবের তিলাওয়াত অথবা প্রতিনিয়ত মুয়ায্যিনের কণ্ঠে উচ্চারিত আযানের ধ্বনি শ্রবণ করে, তারা ভালভাবেই জানে যে, এ মুসলমানদের একটা অনন্য সম্পদ। এর স্বাদ ও বৈশিষ্ট্যই আলাদা। এর সঙ্গে এমন একটা পরিতৃপ্তি ও আনন্দ মিশে আছে যার সঙ্গে অন্যকোন কিছুর তুলনা হয় না। মুসলমানদের হাতে গান-বাজনারও যথেষ্ট বিকাশ ঘটে। গান-বাজনাগুলো ছিল পার্থিব জগত সম্পর্কিত। রাজা-বাদশা-ধনাঢ্য ব্যক্তিরা ছিল এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। গান-বাজনার উন্নয়নে যারা অসাধারণ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আল-ফারাবী, ইবনেসিনা এবং আরো অনেকে। তাদের অবদানগুলো অমর কীর্তি হিসাবে বিরাজ করছে। গ্রীক এবং ভারতীয় সঙ্গীতের সংস্কারে তাদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তারা সঙ্গীতে বিভিন্ন সংকেত ব্যবহার করেন এবং সঙ্গীত যন্ত্রের বিষদ বিবরণ দেন। তাছাড়া আনন্দ, বেদনা, দুঃখ, অসুস্থতা অর্থাৎ কোন পরিস্থিতিতে কী ধরনের যন্ত্র ব্যবহৃত হবে, কবিতার সুর ও ছন্দ কেমন হবে- তা ছিল তাদের গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কবিতা সম্পর্কে নবী করীম (সা.) বলেছেন যে, এমন কিছু কবিতা আছে যেগুলো জ্ঞানের গভীরতায় পরিপূর্ণ। আবার কোন কোন বক্তার বক্তব্য কার্যকর ম্যাজিকের মতো ও চিত্তাকর্ষক। কুরআনুল করীমে নৈতিকতা বিরোধী কবিতাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কুরআনুল করীমের এই বিধানের প্রতি লক্ষ্য রেখেই নবী করীম (সা.) তদানীন্তন কবিদেরকে সঠিক পথ-নির্দেশ দিয়েছে। তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন তাঁদের সীমাবদ্ধতার সম্পর্কে। বলে রাখা আবশ্যক যে, সে আমলের শ্রেষ্ঠতম কবিগণ নিয়মিত তাঁর দরবারে আসতেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন