বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিএনপি দমনে গায়েবি মামলা ও গ্রেফতার

| প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

গত ১০ বছরে প্রায় ৯৫ হাজার মামলায় বিএনপি’র ২৫ লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে বলে দলের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে। একদিকে মামলার জটাজাল, অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বাঁধা ও অঘোষিত নিষেধাজ্ঞায় বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকান্ড কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিএনপি যখন কিছু সুনির্দিষ্ট দাবী দাওয়া সামনে রেখে আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখন পুরনো মামলায় ধরপাকড়ের পাশাপাশি নতুন করে হাজার হাজার মামলা দিয়ে গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করার পরও বিএনপি কোনো কঠোর আন্দোলনে নামেনি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতেও হাজার হাজার নেতাকর্মীর স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মত। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১লা সেপ্টেম্বরে নয়া পল্টনে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশে লাখো মানুষের ঢল নামে। এরপর থেকেই নতুন করে অব্যাহতভাবে পুলিশি মামলাবাজি চলছে। মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে অনুমতি দেয়া হলেও ৩০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের মহাসমাবেশটি জনসমুদ্রে পরিনত হয়। আর এই সমাবেশ শেষে পুলিশের গায়েবি মামলা নতুন মাত্রা লাভ করে। নাশকতার আশঙ্কা, পুলিশের কাজে বাঁধা ইত্যাদি অভিযোগে মাত্র দুইদিনে ঢাকার ৩৩ টি থানায় অন্তত ৪৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলামসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরও অভিযুক্ত করা হয়েছে। প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত গায়েবি মামলার সংখ্যা৪ হাজার ৯৪টি এবং এসব মামলায় নামে-বেনামে আসামী করা হয়েছে বিএনপির প্রায় পৌনে ৩ লাখ নেতাকর্মীকে।
দেশের ৭০টি কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার হলেও বর্তমানে সেখানে বন্দীর সংখ্যা ৮০ হাজারের বেশী। কোনো কোনো কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধার কয়েকগুণ বেশী বন্দী থাকায় এক প্রকার মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে ইতিপূর্বে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায় দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে লঘুদন্ডে সাজাপ্রাপ্ত হাজার হাজার কয়েদিকে বিশেষ বিবেচনায় মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অপরাধে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মুক্তি দিয়ে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে কারাগারগুলো বোঝাই করা হচ্ছে। এসব মামলা নিয়ে সমাজে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কোন তথ্য-প্রমান ছাড়া, ঘটনার সময় বা নাশকতার উদ্দেশ্যে কথিত মিটিং বা সলাপরামর্শের অভিযোগে এমন সব ব্যক্তির বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে যাদের কেউ দীর্ঘদিন দেশের বাইরে রয়েছেন, এমনকি মৃত ব্যক্তিকেও আসামী করার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে পুলিশ। মূলত: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে হাজার হাজার মামলা দিয়ে বিএনপির জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ কঠিন করে তুলতে চাইছে সরকার। বাহ্যত সরকার একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বললেও এ ধরনের নির্বাচনের জন্য প্রত্যাশিত পরিবেশ আরো ঘোলাটে ও জটিল করে তোলা হচ্ছে।
অপরাধ প্রবণতা এবং সরকারের দলীয় ক্যাডারের ভ’মিকা পালনের কারণে এমনিতেই দেশের পুলিশ বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা তলানিতে ঠেকেছে। পুলিশ বাহিনীতে অনেক দক্ষ, চৌকষ ও পেশাদার অফিসার রয়েছেন। তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা ও পুলিশের ভাবমর্যাদা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করছেন। রাজনৈতিক কারণে হাজার হাজার মিথ্যা ও গায়েবি মামলা পুলিশের ভাবমর্যাদা ও জনআস্থা পুন:প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে চরমভাবে বিনষ্ট করবে। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সেনা মোতায়েনের দাবী করেছে। সেনা মোতায়েন হোক বা না হোক, নির্বাচনে পুলিশকেই মূল ভ‚মিকা পালন করতে হয়। বিরোধি দলের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির সাথে জড়িত পুলিশ কি নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভ‚মিকা পালন করবে? এমন প্রশ্ন এখন উঠে আসবেই। নির্বাচনে পুলিশের ভ‚মিকা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হলে তা হবে পুলিশ বাহিনীর জন্য অনেক বড় ক্ষতি। দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ বাহিনী দু’টি প্রতিষ্ঠানই আইনানুগ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানকে হীন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হলে দেশের সামাজিক নিরাপত্তা এবং অর্থনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। পুলিশের গায়েবি মামলার মত রাজনৈতিক কারণে দুদকের মামলাবাজি ও হয়রানির ঘটনা দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও সম্ভাবনাকে বাঁধাগ্রস্ত করবে। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা যতই আত্মতুষ্টিতে ভুগি না কেন, বাণিজ্য বৈষম্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতির বড় উন্নতি না হলে আগামীতে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। নাগরিকদের মানবাধিকার সুরক্ষা, গণতান্ত্রিক,শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। হাজার হাজার মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় বিরোধিদলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রত্যাশিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ পথ পরিহার করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন