সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বিএনপির কেউ জড়িত নয়

রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

২১ আগস্ট বোমা হামলার ঘটনার সাথে বিএনপির কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না করে, প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের না করে সম্পূর্ণ রাজনৈতিকবাবে পুরো বিষয়টাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে তারেক রহমান, আব্দুস সালাম পিন্টুসহ অন্যান্য বিএনপি নেতাদের এর মধ্যে জড়িয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই এদেশ থেকে বাংলাদেশী জাতীয়বাদকে ধ্বংস করা। গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শহীদ জিহাদের ২৮তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে জিহাদ স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সরকার ঘটনার পরপরই মামলা করেছে, তদন্তের ব্যবস্থা করেছে। এমনকি এফবিআইকে আনা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১/১১ সরকারের সময় যে চার্জশিট দেয়া হয়েছিল, যে তদন্ত করা হয়েছিল সেখানে কোথাও তারেক রহমান কিংবা বিএনপির কোন নেতার নাম উল্লেখ করা হয়নি। ৬১জন সাক্ষি সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের কেউ তারেক রহমানের নাম বলেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই গোটা পরিস্থিতি বদলে গেলো। আবার নতুন করে তদন্ত শুরু করে, কাহার আকন্দকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হলো। বিএনপি সরকারের সময় যিনি চাকরি হারিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিল। তাকে দেয়া হলো তদন্ত কর্মকর্তা। মুফতি হান্নানকে ৪১০দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে। আদালতে সে নিজেই বলেছে আমার নকগুলো তুলে ফেলা হয়েছে। অত্যাচার করে তার কাছ থেকে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। সেভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম জড়িয়েছে।

তিনি বলেন, তারেক রহমান, আব্দুস সালাম পিন্টু, লুৎফর রহমান বাবরসহ বিএনপির কোন নেতাই ২১ আগস্ট ঘটনার সাথে জড়িত না। কারণ যে কোন ঘটনার একটা মোটিভ থাকে। এই ঘটনায় বেনিফিশিয়ারি (লাভবান) কে হয়েছে? আওয়ামী লীগ হয়েছে। আওয়ামী লীগ এটিকে ইস্যু করে বিএনপিকে ধ্বংস করা চেষ্টা করছে, বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে। সঠিক তদন্ত করা হলে, প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করলে আসল সত্য বেরিয়ে আসতো। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতাদের জড়িত করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে ঘটনার একটি সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত ছিল, প্রকৃত আসামীদের বের করে এনে বিচার করা উচিত ছিল। তা না করে সরকার রাজনৈতিকভাবে পুরো বিষয়টাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে তারেক রহমান, আব্দুস সালাম পিন্টুসহ অন্যান্য বিএনপি নেতাদের এর মধ্যে জড়িত করলো।

বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়া পঙ্গু হতে চলেছেন অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, কারাগারে অত্যন্ত অসুস্থ ছিলেন। আমরা বারবার তার চিকিৎসার দাবি জানিয়েছি, ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির কথা বলেছি। কিন্তু কোনটাই শুনেনি। তার কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। এরফলে কি হয়েছে? আজকে বিনা চিকিৎসায় পঙ্গু হওয়ার উপক্রম হয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে আজকেও সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ভয়েস অব আমেরিকায় এক সাক্ষাতকারে বলেছেন বাংলাদেশে এখন আইনের শাসন বলতে কিছু নাই। সবচেয়ে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হয়েছে নিম্ন আদালত। এটি পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কারণ কে পদোন্নতি পাবে, কে হাইকোর্টে যাবে, কাকে বেনিফিট দেয়া হবে সেটা সরকার করছে। এভাবে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আমরা বহুবার বলেছি বিচার বিভাগকে স্বাধীন রাখতে হবে।

শেখ হাসিনার এখন আর জনগণের দরকার নেই মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে। এরা জনগণকে বিশ্বাস করে না। তাদের আর কোন রাজনীতি নাই, জনগণ তাদের কাছে কোন ব্যাপার না। তাদের কাছে বিষয় হলো পুলিশ ঠিক থাকলো কিনা? আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঠিক কিনা? বিচার বিভাগ সব নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলো কিনা? হুকুম দিয়ে বিচার করতে পারলো কিনা? এই বিষয়গুলো তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, এর আগে নির্বাচনে স্কুলের শিক্ষক, অধ্যাপক, বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বানানো হতো। এবার নাকি তাও হবে না। শুধু যারা সরকারি চাকরি করেন তাদেরকে করা হবে। কারণ তারা সরকারি নিেের্দশের বাইরে যেতে পারবে না।
সবাইকে বেড়িয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল বলেন, সঙ্কট অত্যন্ত গভিরতম, জাতির অস্তিত্ব থাকবে কিনা সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আপনি কি একটা স্বাধীন দেশে বাস করতে পারবেন কিনা? মুক্ত সমাজে বাস করতে পারবেন কিনা সেই বিষয়গুলো এখন সামনে উঠে এসেছে। এ কেমন রাষ্ট্র? যে রাষ্ট্র আমার সমস্ত স্বাধীনতাকে হরণ করে নিয়ে যাবে। সবাইকে বেড়িয়ে আসা দরকার, প্রতিবাদ করা দরকার। প্রতিবাদের কোন বিকল্প নেই। কেউ আপনাকে এসে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না, এই সরকারকে সরিয়ে দেবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না জনগণ সরিয়ে দেবে। আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণকে সংগঠিত করা, তাদেরকে উদ্দীপ্ত করা। জনগণকে নিয়ে রাস্তায় নামা। কোন শর্টকাট পদ্ধতি নেই। যখন একটি ফ্যাসিস্ট সরকার বুকের ওপর চেপে বসে তার সঙ্গে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা কঠিন। সেই কঠিন কাজটি আমাদের করতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়েই প্রতিরোধ রচনা করতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমের পরিচালনায় স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, ডিএলের সভাপতি সাইফ উদ্দীন মনি, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান আসাদ প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন