বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পাইপলাইনে আসবে তেল

বিদ্যুৎ সংযোগ ও সড়ক পাচ্ছে রোহিঙ্গারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেল ঢাকায় আসবে পাইপলাইনে। জ্বালানি তেল সহজ, সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনের জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের এই পাইলাইন কুমিল্লা ও চাঁদপুরেও যাবে। জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনের জন্যই প্রথমবারের মতো এমন উদ্যোগে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। ট্যাংকারের মাধ্যমে জ্বালানি পরিবহনের পরিবর্তে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য প্রকল্পটি নেয়া হচ্ছে। এতে করে সিস্টেম লস কমানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দুই হাজার ৮৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বর্তমান ব্যবস্থায় দেশের সব অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল পরিবহনে সরকারকে বড় অংকের খরচ এবং পরিবহন ঘাটতি বহন করতে হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল সহজ, সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনের জন্য এমন উদ্যোগ।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। সভায় মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া দশ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাদের চলাচলের সুবিধার্থে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কক্সবাজার-টেকনাফ বিদ্যমান সড়ক সংস্থারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) এই সংক্রান্ত আলাদা তিনটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সভা শেষে পরিকল্পনমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, একনেক বৈঠকে নতুন ও পুরনো মিলে মোট ২০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ৩২ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। বাকি টাকা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। এছাড়া পরিকল্পনামন্ত্রী তার নিজ ক্ষমতাবলে ৫০ কোটি টাকার নিচে আরো চারটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। যেসব প্রকল্প গতকাল একনেক সভায় অবগতির জন্য উঠানো হয়েছে। সবমিলিয়ে গতকাল একনেক সভায় ২৪টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে গতকালের একনেক সভায় সবচেয়ে বেশি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী জানান- বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে প্রকল্পগুলো এগিয়ে যাবে। আর সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে এসব প্রকল্পের ভবিষ্যত হুমকিতে পড়বে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, নির্বাচনের আগে প্রয়োজনে প্রতিদিন একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে। এমনকি তফসিল ঘোষণার পরও একনেক সভা হবে।
নির্বাচনের আগে কেন এত প্রকল্প পাস করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে যদি প্রয়োজন হয় প্রতিদিন বৈঠক করব। আগামী বৃহস্পতিবারও আরেকটি একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় বেসরকারি খাত খুঁজে পাওয়া যাবে না, কম আসবে। তারা ভাবে, ২-৩ মাস দেখি। সেটা সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে পুষিয়ে নেওয়া হবে। চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সোয়া ৮ শতাংশ হবে বলে জানান মন্ত্রী।
নির্বাচনকালীন সরকার শুধু নিয়মমাফিক কাজ করবেন-এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে মন্ত্রী বলেন, কোনটি রুটিন কাজ নয়। সংবিধানকে কী লেখা আছে, মঙ্গলবার ছাড়া একনেক সভা করা যাবে না। যখন বেসরকারি খাত পিছিয়ে যাবে, তখন সরকারি খাতই অর্থনীতির চালক আসনে বসে।
পরিকল্পনা কমিশনের দেওয়া তথ্য মতে, মিয়ানমার থেকে উদ্ভাস্তু হিসেবে কক্সবাজার জেলার ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া দশ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের নিরাপত্তা ও জীবনমানের উন্নয়নে জন্য সরকার সেখানে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আরইবি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ‘রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি সহায়তা’ শিরোনামের প্রকল্পটিতে খরচ হবে ১০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অনুদান দেবে ৭৮ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৫০ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন একটি, বর্জ্র নিরোধক পোল ২০০টি, উন্নত চুলা দেওয়া হবে ৭০ হাজার।
রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের অভ্যন্তরীণ ও ক্যাম্পের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কের উন্নয়নে আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে গতকালের একনেক সভায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ২৯৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি অনুদান দেবে ২৪৬ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় সড়ক নির্মাণ করা হবে ৩০ কিলোমিটার। ড্রেন নির্মাণ করা হবে চার হাজার ৫০০ মিটার। সেতু নির্মাণ করা হবে ১৯৫ মিটার। এছাড়া ক্যাম্পের ভেতরে নির্মাণ করা হবে সিড়ি ও ড্রেণ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে দশটি।
রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে তাদের খাদ্য, পানিসহ অন্যান্য সহায়তা সঠিকভাবে পৌছে দিতে বিদ্যমান কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক উন্নয়নে একনেক সভায় আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪৫৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবি অনুদান দেবে ৩৮৭ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান ৮১ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসামগ্রী পরিবহন ও যানবাহন চলাচল সহজ করা হবে।
একনেক সভায় কেরাণীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাস স্থাপনে জমি অধিগ্রহণ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একনেকের সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৯২০ কোটি টাকা। পুরো টাকাই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
এদিন একনেকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- দশ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প, এক হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিল্লা নির্মাণ, ৬০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুর্ণবার্সন প্রকল্প, ৪২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি ক্যাডেট কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধাদি স¤প্রসারন প্রকল্প, ৫৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৫নং গুদারাঘাটের নিকট শীতলক্ষ্যা নদীর উপর কদমরসুল ব্রীজ নির্মাণ প্রকল্প এবং এক হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সড়ক কাম বেড়ি বাধঁ প্রতিরক্ষা এবং নিস্কাশন প্রকল্প।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Bertha ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:২৮ পিএম says : 0
It’s perfect time to make a few plans for the future and it is time to be happy.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন