বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রæ সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় মিয়ানমারের দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলি ও এক পর্যায়ে শিবিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শেষ আশ্রয় হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন ভুক্তভোগি রোহিঙ্গারা। সবকিছু হারিয়ে অনেকেই শূন্যরেখার কাছাকাছি তুমব্রæ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশে ঠাঁই নিয়েছে কয়েক’শ পরিবারের হাজারো রোহিঙ্গা। অতর্কিত অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে খোলা আকাশের নিচে প্রচÐ শীতে খাবার, শীতবস্ত্র, ওষুধ, ছাড়া অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা। অনেকেই আবার শূন্যরেখায় বাঁশ, কাঠ, ত্রিপল দিয়ে কোন প্রকার মাথা গুজাবার ঠাঁই সৃষ্টি করে বৃদ্ধ, মহিলা ও শিশুদের নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা শূন্য রেখায় আবারো বসতি স্থাপন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৫ বছর সময়ের অধিককাল তারা বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী শূন্যরেখায় অবস্থান করে আসছিল। হঠাৎ করে তাদের জীবনের ছন্দপতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
শূন্যরেখা শিবিরে আগুনে শেড হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে তুমব্রæ বাজারে আশ্রয় খুঁজতে আসা সৈয়দ হামজা নামেক এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘বার্মা ও বাংলাদেশের মাজে আর বিবি বাচ্চা, ৫ জন লইয়েনে আছিলাম। আরার ঘর বাড়ি অইন দিয়েনে পোড়াই দিয়ে বাজি। দুওয়া পাটি হইজ্জ্যা গইচ্ছে, আরা হন পক্ষর নই বাজি। বিজ্ঞিন পুড়ি ছাই হই গিয়ই, গার হরগান লইয়েনে হো প্রহার ধাই আসচি আর বিবির অসুখ, পরিবার লইয়েনে হোন প্রহার আশ্রয় খুজমেদ্দে এর আগে রক হিন্দু ভাইয়র গরত ঠাই লইয়ি’ অর্থাৎ বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যবর্তী শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসকারীদের মধ্যে আমিও আমার পরিবারের আরো ৫ সদস্য ছিলাম। রোহিঙ্গা দুটি পক্ষের বিবাদ হয়, আমরা কোন পক্ষের না হলেও আগুন দিয়ে আমাদের ঘরবাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা নিরীহ মানুষ, কোনও পক্ষের না। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, গায়ে পরনের জামা ছাড়া কিছু বের করতে পারেনি। আমার স্ত্রী অসুস্থ, পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিতে একটি জায়গা খুঁজছি। এর আগের দিন স্থানীয় এক হিন্দু পরিবারের কাছে একদিন আশ্রয় নিয়েছিলাম।’
অন্য ভুক্তভোগী আবুল শামা বলেন, (বুধবার ঘটনার পর আরা মিয়ান্মারত গলি গই, মিয়ান্মার বাইনি আরারে গইলতে ন দে। ইতারা আবার আরারে বাংলাদেশত পাড়াই দিয়ে। এহন আরা হড়ে যাইয়ম বাজি? এড়ে হাবার নাই, থাইবার জাইগা নাই, পায়খানা গরিত ন পারির, বিবি, বাচ্চা লইয়েনা সমাস্যাত আছি।)› অর্থাৎ বুধবারের ঘটনার পরে আমরা মিয়ানমারের অংশে প্রবেশ করি। এক রাত থাকার পর আবার বার্মা (মিয়ানমার) থেকে এপারে পার করে দিয়েছে সেই দেশের বাহিনী। এখন আমরা কোথায় যাবো? এখানে থাকার ব্যবস্থা নেই, নেই খাবার ও টয়লেটও। এতে নারী-শিশুদের নিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, ‘তুমব্রæ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ তার আশপাশে কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে শুনেছি। রোহিঙ্গারা যাতে করে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। তবে কতজন রোহিঙ্গা এখানে আশ্রয় নিয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। সীমান্তের সবাই সর্তক অবস্থানে রয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত আছে।’
জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রæ-টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের পূর্বে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিজিপির সাথে বিদ্রোহী আরকান আর্মি (এএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) র মধ্যে প্রচÐ সংঘর্ষ হয়। গুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফের সীমান্ত এলাকার স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর গত বুধবার থেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র গ্রæপের সংঘাতে ফের সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন