২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় হতাশ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করেছিল, এই রায়ে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তার সর্বোচ্চ সাজা হবে।
গতকাল রায় উপলক্ষে সকাল থেকেই আদালত পাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারেক রহমানের ফাঁসি হবে জেনে আগের দিন আনন্দ মিছিলের জন্য ব্যানারও তৈরী করে আনা হয়। মিষ্টির দোকানে মিষ্টির অর্ডার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাবজ্জীবন সাজার রায়ে অখুশি ও অসন্তুষ্ট হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে কর্মী এবং সে সময়ে গ্রেনেড হামলায় আহত ব্যক্তিরা। রায়ের পর নেতাকর্মীরা স্লোগান দেয় ‘যাবজ্জীবন বিধান নাই, তারেক জিয়ার ফাঁসি চাই’।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের নেতাকর্মীরা। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জমান বাবরের ফাঁসি হলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যাবজ্জীবন হওয়ায় অসন্তুষ্ট তারা। প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিলম্বিত হলেও এই রায়ে আমরা অখুশি নই, তবে পুরোপুরি সন্তুষ্টও নই। গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি। আমরা তারেক রহমানের ফাঁসি দাবি করছি। পাশাপাশি এ মামলায় খালেদা জিয়ারও বিচার দাবি করছি। আইনমন্ত্রী গতকালই বলেছেন, তারেক রহমানের ফাঁসির জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের বলেন, ১৬৪ ধারায় মুফতি হান্নান বলেছিলেন, তারেক রহমানের অনুমতি নিয়েই আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তারা হামলা করেছিন। ২১ আগস্টের ঘটনা ছিল রাষ্ট্রীয় মদদে সরকারি জঙ্গি হামলা। ঐ সময়ে দায়িত্বরত সেনা গেয়েন্দা সংস্থার প্রধানের ভাষ্য থেকে একথা পরিস্কার খালেদা জিয়া এ হামলা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল রাষ্ট্রীয় পাপ। আমরা খালেদা জিয়ারও বিচার দাবি করছি।
এ মামলায় উচ্চ আদালতে আপিল করবেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা ন্যায়বিচার চেয়েছি। বিচারকে কখনো প্রভাবিত করিনি। আমরা মনে করি এটি ভাল রায়। আদালতকে ধন্যবাদ জানাই, তবে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তারেক রহমানের মৃত্যুদন্ডই হওয়া উচিত ছিল। তার কারণ তিনিই হচ্ছেন এ হামলার মুলহোতা। এই হামলা কার্যকর করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন যারা, তাদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। যদিও তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় বেগম খালেদা জিয়া এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকেও এ মামলায় বিচারের আওতায় আনতে হবে।
যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের দলীয় সিদ্ধান্তে এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই হামলা সংঘটিত হয়েছিল। মামলায় রায়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের শুধু ফাঁসি নয় রাজনীতিও নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান তিনি। ওমর ফারুক বলেন, তখনকার সময়ের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদও এই হামলার দায় এড়াতে পারেন না। তারও বিচার হওয়া দরকার।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম রেজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ। আরো উপস্থিত ছিলেন, মৎসজীবি লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান খান বোরহান, যুবলীগের ইকবাল মাহমুদ বাবলু, মাহবুবুর রহমান পলাশ। সমাবেশ শেষে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। এছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগ কয়েকটি স্থানে আনন্দ মিছিল করেছে।
রায়ে সন্তুষ্ট নয় আহতরা ও নিহতদের স্বজনরা: দীর্ঘ ১৪ বছর অপেক্ষার পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন ওই ঘটনায় আহতরা ও নিহতদের স্বজনরা। রায়ের পরে বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে কথা হয় তাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। সেদিনের ঘটনায় আহত বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খুরশিদা বেবী হেনা বলেন, আমার সারা শরীরে স্পিন্টার। এখনও আমি রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারি না। তাই এই রায়ে আমরা খুশি নই। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল নায়ক তারেক রহমানকে তো ফাঁসি দেওয়া হয়নি। তার ফাঁসি দিলে বেশি খুশি হতাম। তবে আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
আওয়ামী লীগের কর্মী হেনা বেগমও সেদিন আহত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আমি আহত হয়েছি। আমি দীর্ঘ দিন হাসপাতালে থেকেছি। এখনও মাঝে মাঝে শরীরে ব্যাথা হয়। আমরা এই রায় মানি না। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না।
আওয়ামী লীগের আরেক কর্মী আয়েশা খানম। তার মামি সেদিন নিহত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমার মামী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদ হয়েছেন। রায়ে আমি সন্তুষ্ট নই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন