বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। বহুপ্রতিক্ষিত এই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের ফাঁসি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এ মামলায় ১১ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন গতকাল বুধবার হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা দুই মামলার এই রায় ঘোষণা করেন। ১৪টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আদালত এ কয়েকটি পর্যেেবক্ষণসহ এ রায় দেন। এর মধ্য দিয়ে ১৪ বছর আগে সংঘটিত নৃশংস এই হত্যাকান্ডের বিচার বিচারিক আদালতে শেষ হলো।
এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ার আসামী পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তারা। অপরদিকে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। আইনমন্ত্রী বলেছেন, আমরা এ রায়ে খুশি। তবে তারেক রহমানের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক রায় ঘোষণার জন্য এই দিন ধার্য করেন। রায়কে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল থেকেই আদালতের আশপাশের এলাকায় নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্তক অবস্থান নেয়। আসামিদের অস্থায়ী আদালতে উপস্থিত রাখতে ভোরেই তাদের গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকায় আনা হয়। প্রথমে তাদের রাখা হয় বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসায় অস্থায়ী আদালতের গারদে। পরে তাদের আদালতে তোলা হয়। এসময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল, রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান। আসামী পক্ষে সানাউল্লাহ মিয়া, এস এ এম শাহজাহান, আশরাফ-উল- আলম ও মাসুদ রানা প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শ ম রেজাউল করিম। বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে এজলাসে ঢোকেন বিচারক। তিনি আদালতে প্রবেশের ১মিনিটের মধ্যেই আদালত কক্ষ থেকে বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন মোবাইলের আলোতে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। এভাবে কয়েক মিনিট রায় পড়ার পর চার্জলাইট আনা হয়। এ লাইটের আলোতে রায় পড়ে শোনান বিচারক। এরপর বিদ্যুৎ আসে। তখন পর্যবেক্ষণ পড়া শুরু হয়। কিন্তু দুই মিনিট পর আবারও বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন আবারও চার্জলাইটে পর্যবেক্ষণ পড়তে থাকেন বিচারক। বিচারক এজলাসে আসার আগেই বেলা ১১টা ২০ মিনিটে আসামিদের কাঠগড়ায় তোলা হয়।
ফাঁসিরদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন:
জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন (পলাতক), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, শেখ আবদুস সালাম, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল সালাম পিন্টু, আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউছুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা ওরফে জিএম, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিব উল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সায়ীদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গির আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামীম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামীম ওরফে রাশেদ, মো. উজ্জল ওরফে রতন, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ। রায়ে বলা হয়, তারা গ্রেনেড নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং এই অপরাধে সহায়তা করে হত্যা সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রত্যককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন:
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (পলাতক), বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর ওরফে আবু হুমাইয়া, মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, ঢাকা মহানগরীর ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন (পলাতক), মোহাম্মদ খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গির আলম বদর (পলাতক),সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক), রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক),মোঃ ইকবাল (পলাতক) ও লিটন ওরফে মাওলানা লিটন(পলাতক)। গ্রেনেড নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং এই অপরাধে সহায়তা করে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডের সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর কারাদন্ড দেয়া হয়। সব সাজা একযোগে কার্যকর হবে বলে এই ১৯ আসামির ক্ষেত্রে কেবল যাবজ্জীবন কারাদন্ড কার্যকর হবে।
অন্যদিকে মামলার ৫২ আসামির মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলমের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
এছাড়া পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, খোদা বক্স চৌধুরী ও শহুদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদন্ড দিয়েছেন।
রায়ে যা বলা হয়েছে
গ্রেনেড নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং ওই অপরাধে সহায়তা করে অত্র মোকদ্দমার নিহতগণকে হত্যা করার অভিযোগে ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইন (সংশোধনী-২০০২)-এর ৩ ও ৬ ধারায় দোষী সাব্যস্তক্রমে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেককে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হলো এবং প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা জরিমানা প্রদান করা হলো। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আসামীদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
আরো বলা হয়েছে, গ্রেনেড নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং ওই অপরাধে সহায়তা করে অত্র মোকদ্দমার নিহতগণকে হত্যা করার অভিযোগে প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও প্রত্যেককে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হলো। জরিমানা অনাদায়ে আরোও এক বৎসরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হলো।
মামলায় জখম প্রাপ্ত ভিকটিমগণকে অভিন্ন অভিপ্রায় পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখম করার প্রত্যেককে ২০বৎসরের সশ্রম কারাদন্ড ও প্রত্যেককে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হলো। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বৎসরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হলো।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের হাইকোর্ট ডিভিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হলে প্রদত্ত ২০ বছর কারাদন্ডদেশ কার্যকর হবে না। । দন্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামীদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ও দন্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হোক।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
রাজনীতি মানে কি বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ? এই রাজনীতি এ দেশের জনগণ চায় না। সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে শত বিরোধ থাকবে, তাই বলে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা চালানো হবে? রাজনীতিতে এমন ধারা চালু থাকলে মানুষ রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়বে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক এসব মন্তব্য করেছেন। এতে আরো বলা হয়েছে, বিরোধী দলের নেতাদের হত্যা করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ফায়দা লোটা মোটেও গণতান্ত্রিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ নয়। রাজনৈতিক জনসমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ জনগণকে হত্যার এ ধারা চালু থাকলে সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়বে। আদালত এ দেশে আর এমন হামলার পুনরাবৃত্তি চান না এমন মন্তব্য করে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ওপর হামলা বা রমনা বটমূলে হামলার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দিয়ে নৃশংস হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো সম্ভব। আদালত বলেন, এ আদালত চিকিৎসক অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত, আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাহারা খাতুন, বাহাউদ্দিন নাছিমের জবানবন্দি গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছেন। সাক্ষী নীলা চৌধুরী গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। আদালত বলেন, ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ফলে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডান কান গুরুতম জখম হয়।
আইনজীবীদের বক্তব্য:
য়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি দাবি করে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেয়া হয়েছে। এ মামলায় আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে আসলে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আমরা এ রায়ে শুকরিয়া প্রকাশ করছি। তবে তারেক রহমানের যাবজ্জীবন রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা- সে বিষয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতাকর্মী ও অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি নিহত হন। হামলার পরদিন ২২ আগস্ট মতিঝিল থানার এস আই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে দন্ডবিধির ১২০/বি, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ২০১, ১১৮, ১১৯, ২১২, ৩৩০, ২১৮, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় একটি মামলা (নং-৯৭) দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর প্রথমে মতিঝিল থানা পুলিশ ও পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। গোয়েন্দা পুলিশ কিছুদিন মামলাটির তদন্ত চালানোর পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ পর্যায়ক্রমে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়ে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তদন্ত শুরুর কয়েক দিন পরই নোয়াখালীর সেনবাগের জজ মিয়া নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে গ্রেনেড হামলার রহস্য উদঘাটনের দাবি করেন সিআইডি কর্মকর্তারা। কিন্তু ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের পটপরিবর্তনের পর ২১ আগস্ট হামলা মামলারও চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির এএসপি ফজলুল কবিরকে। ২০০৮ সালের ৯ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে সিএমএম আদালতে দুটি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন এএসপি ফজলুল কবির। ওই বছরই মামলা দুটির কার্যক্রম দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল ১-এ স্থানান্তর করা হয়। এ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের ২৯/১১ (হত্যা) ও ৩০/১১ (বিস্ফোরক) ধারায় মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে পিডব্লিউডির একটি পুরনো সরকারি ভবনকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হয়। এ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের ২৯/১১ (হত্যা) ও ৩০/১১ (বিস্ফোরক) ধারায় মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম চলে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুরোপুরি পাল্টে যায় এ মামলার তদন্তের ধারা। ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর ২০০৯ সালের ২৫ জুন আদালতের কাছে এ মামলার অধিকতর তদন্তের আবেদন জানান রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ওই বছরের ৩ আগস্ট আদালত অধিকতর তদন্তের আবেদন মঞ্জুর করেন। অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় চুক্তিভিক্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দকে। দীর্ঘ তদন্তের পর তিনি তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ আরও ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১১ সালের ২ জুলাই আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। অধিকতর তদন্তে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) পাশাপাশি হাওয়া ভবনের সংশ্লিষ্টতাও খুঁজে পান তিনি। মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অভিযোগে সিআইডি’র প্রথম তিন তদন্ত কর্মকর্তাকেও অধিকতর তদন্তে অভিযুক্ত করেন আবদুল কাহার আকন্দ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন