২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা ডেথ রেফারেন্স এবং অন্য আসামিরা খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর প্রত্যাশা অনুযারী সাজা না হওয়ার রাষ্ট্রপক্ষেরও সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আপিলেরও পর্যালোচনা চলছে। ইতোমধ্যে রায়ের সত্যায়িত কপি (নকল) পেতে সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করেছেন দন্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামি। বহুল আলোচিত মামলাটি রায় ঘোষণার পর মামলার নথি বিচারকের খাস কামরায় রয়েছে বলে জানা যায়। নিয়ম অনুয়ারী মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা কপি হাতে পাওয়ার পর ৭ দিনের; যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। রায় ঘোষণার পর পর আসামী পক্ষের আইনজীবীরা বলেছিলেন, তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। আর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেছিলেন, রায় পড়ার পর সাজা বৃদ্ধির বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের আসামীদের পক্ষে রায়ে সত্যায়িত কপি (নকল) পেতে আবেদন করেছি। আশা করছি ২/৩ দিনের মধ্যে কপি হাতে পাব। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পেলে পর্যবেক্ষণ ও সাজার অংশ পড়ে আমরা আপিল করব। তিনি আরো বলেন, আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমের পক্ষে নকল পেতে ওই আদালতে আবেদন করেছি।
আদালত সূত্র জান যায়, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুদন্ড দেশপ্রাপ্ত আসামিদের ক্ষেত্রে সাত দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। আর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। বিচারিক আদালতের রায় হাতে পাওয়ার পর এ মামলায় সব আসামি খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন। তবে পলাতক আসামিরা সে সুযোগ পাবেন না। গত ১০ অক্টোবর আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন। বর্তমানে মামলার নথিটি বর্তমানে বিচারকের খাস কামরায় রয়েছে বলে জানা যায়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে সংযোজন, বিয়োজন ও পরিমার্জন করা হচ্ছে। রায়ের নকল আসামিপক্ষ কিংবা বাদীপক্ষকে সরবরাহের পর ছোটখাটো কোনো ভুলত্রুটি ধরা পড়লে তা সংশোধনের আর সুযোগ থাকে না। মামলাটি আলোচিত হওয়ায় রায়ের নকল দেয়ার আগে বিচারক সেটি পরিমার্জন করবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আপিল ও জামিনের বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এটি অনেক বড় রায়। এ জন্য প্রথমে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে। আপিলে জামিন চাওয়া হবে এবং হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করা হবে। রায়ের পরের দিনই পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত কপি পেতে দন্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামির পক্ষের আইনজীবীরা ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আবেদন করেন।
১১ আসামী হলেন: সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইর সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, হোসাইন আহমেদ তামিম, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর আবু হোমাইরা ও আরিফ হাসান সুমন স্যত্যায়িত কপি পেতে আবেদন করেছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া। রায় ঘোষণার পর পরই আসামী পক্ষের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছিলেন, রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ও যাবতজ্জীবন প্রাপ্ত আসামিরা উচ্চ আদালতে খালাস পাবেন। তিনি বলেন, আশা করি তারেক রহমান এবং যাদেরকে এ মামলায় মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে সকল আসামিকে আমরা খালাস করাতে সক্ষম হব। আর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এ মামলায় তারেক রহমানকে যদি নাটের গুরু বলা হয়ে থাকে, তবে সেটা রায় পর্যালোচনা করে দেখবো। রায় পড়ে যদি দেখি তারও মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিৎ ছিল তবে দন্ড বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিল করবো। কিন্তু সবটাই নির্ভর করবে রায়টি পড়ার পর। তিনি আরো বলেন, যাদের মৃত্যুদন্ড হয়েছে, তারা আপিল করলে সেটা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসবে। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ যত দ্রুত সম্ভব আপিল শুনানিতে পদক্ষে নেবো। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, রায়ের বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারিনি। বসে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেব। আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, রায়ের সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করেছি। কপি পাওয়ার পর আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন