শাসক পরিবারের কঠোর সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার উত্তেজনার মধ্যে হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে সউদী আরব। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যখন সউদী আরব সফর করছিলেন, তখনই ওই অর্থ সউদী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। খবর ডেইলি সাবাহ।
এদিকে, কনস্যুলেটে প্রবেশের সাত মিনিটের মধ্যে ঘাতকরা সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়। খাশোগির জীবনের শেষ মুহূর্তের অডিও রেকর্ডিং পুরোটা শুনেছেন এমন একজন তুর্কি কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর মিডল ইস্ট আই।
ডলার দেয়ার প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে ডেইলি সাবাহর খবরে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সহায়তার জন্য গত আগস্ট মাসে সউদী আরব ১০০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ অর্থ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে সউদী কর্তৃপক্ষ। তবে জামাল খাশোগির বিষয়ে সউদী বাদশাহ ও যুবরাজের সঙ্গে মিটিং করতে মাইক পম্পেও সউদী যাওয়ার পরপরই এই বিশাল অর্থের লেনদেন অনেকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তাছাড়া অর্থ স্থানান্তরের দিনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সুর পাল্টে ফেলায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, খাশোগিকে হত্যা করা হলে সউদী আরবকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এরপরই সুর পাল্টে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে সউদী আরবকে এখনি দায়ী করা যাবে না। এটি দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।”
এদিকে, খাশোগিকে সউদী এজেন্টরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় ভুলক্রমে তিনি নিহত হন, সউদী আরব এমন রিপোর্ট তৈরি করছে বলে খবর প্রকাশ হওয়ার পর মিডল ইস্ট আই হত্যাকাণ্ডের বিশদ বিবরণ প্রকাশ করে। বীভৎস হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে তারা জানায়, খাশোগিকে কনসাল জেনারেলের অফিস থেকে টেনে-হিঁচড়ে পাশের একটি কক্ষের টেবিলের ওপর নিয়ে ফেলা হয়। এসময় নিচের তলায় উপস্থিত একজন ব্যক্তিও ভয়ঙ্কর চিৎকারের শব্দ শুনতে পান বলে জানায় সূত্রটি।
‘স্বয়ং কনসালকেও তার কক্ষ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের কোনো চেষ্টাই করা হয়নি। ঘাতকরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই গিয়েছিল’ মিডল ইস্ট আইকে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এর আগের দিন একটি ব্যক্তিগত বিমানে ১৫ জন ঘাতকের একটি দল সউদী থেকে ইস্তাম্বুলে গিয়ে পৌঁছান। এদের মধ্যে সউদী নিরাপত্তা বিভাগে ফরেনসিক প্রধান সালাহ মুহাম্মদ আল-তুবাইগিও ছিলেন।
খাশোগি জীবিত থাকতেই তাকে টেবিলের ওপর টুকরো টুকরো করতে শুরু করে তুবাইগি, জানায় তুরস্কের সূত্রটি। হত্যাকাÐ শেষ করতে সাত মিনিট সময় লাগে, যোগ করে সূত্রটি।
খাশোগির দেহ কাটার সময় তুবাইগি কানে ইয়ারফোন দিয়ে গান শুরু করে এবং দলের অন্যান্যদেরও একই কাজ করতে বলে। ‘আমি কাজ করার সময় গান শুনি। তোমাদেরও একই কাজ করা উচিৎ,’ অডিও রেকর্ডিং-এ তুবাইগিকে বলতে শোনা যায়।
মিডল ইস্ট আই জানায়, অডিও রেকর্ডিং-এর তিন মিনিট অংশ তুরস্কের সাবাহ পত্রিকাকে দেয়া হয়েছে তবে তারা সেটি এখনও প্রকাশ করেনি।
তুরস্কের একটি সূত্র মার্কিন পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানায়, তুবাইগি সউদী ফেলোশিপ অফ ফরেনসিক প্যাথলজির প্রেসিডেন্ট। ২০১৪ সালে লন্ডনভিত্তিক সউদী পত্রিকা আশারাক আল-আসওয়াত তুবাইগির একটি সাক্ষাৎকার নেয়। সেখানে সে একটি মোবাইল ক্লিনিকে কিভাবে সাত মিনিটের মধ্যে মৃত হজ যাত্রীদের অটোপসি করার বিষয়ে কথা বলে। এই মোবাইল ক্লিনিক ক্রাইম সিনেও ব্যবহার করা সম্ভব বলে জানায় সে।
মঙ্গলবার তুর্কি পুলিশ বলেছিল, ইস্তানবুলের সউদী কনস্যুলেটে খাশোগিকে হত্যা করা হয় এবং কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। এ বিষয়ে তাদের যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আছে। তুর্কি পুলিশের বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে অজ্ঞাত এ সূত্রটি এ দাবি করেছে।
একই দিন তুরস্কের একজন সরকারি কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, পুলিশ বিশ্বাস করে খাশোগিকে নির্মমভাবে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। এর আগে নিউইয়র্ক টাইমসও তাদের প্রতিবেদনে একই তথ্য দেয়।
তুরস্কে থাকা সউদী কনস্যুলেট থেকে জামাল খোশোগির নিখোঁজ হওয়ার পর সবার সন্দেহের তীর সউদী আরবের দিকেই। তুরস্ক বলছে, খাশোগিকে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করার যথেষ্ট প্রমাণ তাদের হাতে আছে। যদিও খাশোগিকে হত্যার অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছে সউদী সরকার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন