রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

আত্মহত্যা প্রতিরোধে ইসলাম

মু. জাকারিয়া শাহিন | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:৫২ পিএম

শেষ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালে আত্মহত্যায় বাংলাদেশর অবস্থান ছিল ৩৪ তম। বর্তমানে ১০ম স্থান অতিক্রম করছে। জাতীয় পর্যায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধের প্রচেষ্টা করলেও বিন্দু পরিমান সফল হয়নি। বাংলাদেশ কেন
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ সহ বিশ্বের ২৮ টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন কৌশল তৈরী করছে কিন্তু তারা সফল হয়নি। সকলেই নিরোপায় নিস্তব্ধ হয়ে ব্যর্থতাকে বরণ করে নিয়েছে।
আত্মহত্যারোধ একমাত্র ধর্মীয় নীতি-আদর্শ বাস্তবায়ণের মাধ্যমেই সম্ভব। কারণ ধর্মীয় নীতি-আদর্শ মানুষকে আত্মবোধ, আত্মমর্যাদা ও নৈতিকতা শিক্ষা দেয়। অনৈতিক আত্মঘাতি কাজ থেকে বিরত রাখে। ইসলামে আত্মহত্যাকে কবিরা গুনাহ বা জঘন্য
অপরাধ হিসাবে বিবেচিত করেছে। সকল ফকিহ্বিদ এবং চার মাযহাবের ইমামগণ আত্মহত্যাকে হারাম ফতোয়া দিয়েছেন। বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান কুরআন মাজীদে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “তোমরা নিজেদের হত্যা করো না ।নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো।আল্লাহর পক্ষে তা সহজ সাধ্য।(সূরা নিসা ২৯-৩০) হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত ছাবিত বিন যিহাক রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কেয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি প্রদান করা হবে ।(বুখারী-৫,৭০০) হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ হয়েছে, হযরত জাবের বিন সামুরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমীপে এক ব্যক্তিকে আনা হলো যিনি নিজেকে তরবারির ফলা দিয়ে হত্যা করেছে ।ফলে তিনি তার জানাজা পড়ালেন না ।(মুসলিম শরীফ) এছাড়াও হাদীস শরীফে আত্মহত্যা কারীর শাস্তি স¤পর্কে ব্যাপক
আলোচনা করা হয়েছে ।
বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে আত্মহত্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় পদ্ধতি এবং এর পরিণাম ও ভয়াবহতার বর্ণনা করেছেন।প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তা’য়ালা কে ভয় করে এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অনুসরণ করে, তার পক্ষে এরূপ আত্মঘাতি অন্যায় কাজ করা সম্ভব নয়।হযরত আতিয়্যাহ ইবনে উরওয়াহ সা’দী রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন, রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে এবং শয়তানকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।আগুন পানি দ্বারা নেভানো যায় ।যখন তোমাদের মধ্যে কারো রাগ আসে তবে সে যেন অজু করে। (আবু দাউদ শরীফ) অপর বর্ণনায় আছে, হযরত আবু যার
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কারো রাগ বা ক্রোধ হয়, সে যেন বসে পড়ে ।তাতেও রাগ না কমলে সে যেন চিৎ হয়ে শোয়ে পড়ে। (সুনান আহমদ)
মানুষের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো আদর্শের অনুসরণ করা। ব্যক্তি জীবনে মানুষ যে আদর্শ বা ধর্মকে মনে প্রাণে গ্রহণ করে, তার পক্ষে এর নীতি-নিয়মের বিপরীত কাজ করা খুবই কঠিন।তবে যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ ধর্মপ্রাণ মানুষ বসবাস করা সত্তেও কেন এত অনৈতিক কর্মকান্ড প্রতিনিয়ত ঘটছে? এর কারণ কী? এর অন্যতম কারণ হলো শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ ধর্মের পরিচয় দেয়, কিন্তু শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ ধর্মের অনুসরণ করে না।সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ ধর্মীয় নীতি আদর্শের অনুসরণ করছে।এ ২৫ ভাগ মানুষ থেকে কখনো রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, পারিবারিক অঙ্গনে অনৈতিক কাজ প্রকাশিত হয় না। এ সব মানুষই প্রকৃত শিক্ষিত ও ধর্মের অনুসারী।
জাতীয় পর্যায়ে আত্মহত্যা রোধ করতে হলে অবশ্যই জাতীয় পর্যায়ে প্রত্যেকটি বিভাগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে ও দেশব্যাপী ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে সকল স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে ধর্মীয় শিক্ষা আবশ্যকীয় করতে হবে।
এতে অতি সল্প সময়ে মানব জীবনে মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা, আত্মপরিচয়বোধ অর্জন হবে।ফলে প্রতিষ্ঠিত হবে আত্মহত্যা মুক্ত নিরাপদ সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন