বৈদেশিক সাহায্য, অনুদান, দান বা ঋণ গ্রহণ করতে হলে এখন থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এ ধরনের বিধিমালা দিয়ে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৮-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (২০১২ সালের ৫ নং আইন আইন)-এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এই আইনের ধারা ২৯-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার এই বিধিমালা প্রণয়ন করেছে বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এই বিধিমালার বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। এই বিধিমালার আলোকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে জাতীয় সমন্বয় কমিটি, ওয়ার্কিং কমিটি ও প্রাথমিক যোগাযোগ কর্মকর্তাদের দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। জাতীয় সমন্বয় কমিটির বিষয়ে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন প্রতিরোধে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রীকে আহবায়ক করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রধানদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় সমন্বয় কমিটি থাকবে, যা সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত হবে।
কমিটির কাজের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন, প্রণীত নীতিমালা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নিদের্শনা প্রদান করবে। একই সাথে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিতকরণ, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান পর্যালোচনা এবং উক্ত মানদন্ড বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণ করবে। এই কমিটি বছরে অন্যূন তিনটি সভায় মিলিত হবে, তবে প্রয়োজনে কমিটির আহবায়ক যে কোনো সময় সভা আহবান করতে পারবেন। প্রয়োজনে কমিটিতে সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তিকে কো-অপট করতে পারবে। বিএফআইইউ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।
বিধিমালায় রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান (এনপিও), বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) বা সমবায় সমিতির কথা বলা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানকে যেসব কাজ করতে হবে সেগুলো হলো- ‘তাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কার্যাবলী সংক্রান্ত তথ্যাদি সংরক্ষণ করবে। সংস্থার কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের (উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, পরিচালনা পরিষদের সদস্য, নির্বাহী কমিটি, ট্রাস্টি বোর্ড বা অন্যান্য) পরিচিত, দায়দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংক্রান্ত সহায়ক দলিলাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবে। উল্লেখিত সংরক্ষিত তথ্যাদি সংস্থার ওয়েবসাইট প্রকাশসহ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তাদের বৈদেশিক শাখার কার্যক্রম ও সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবে। গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক অবসান হওয়ার তারিখ হতে অন্তত পাঁচ বছর উক্ত তথ্য ও দলিলাদি সংরক্ষণ করতে হবে।
রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা তাদের দাতাদের পরিচিতিমূলক সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও সহায়ক দলিলাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র ছাড়া কেনো বৈদেশিক সাহায্য, অনুদান, দান বা ঋণ গ্রহণ করা যাবে না। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিদ্যমান ব্যবস্থার সাথে সংঘর্ষিক কোনো কাজে ব্যবহারের জন্য কোনো দাতা দ্বারা অনুরোধ প্রাপ্ত হলে বা অন্য কোনো সন্দেহ থাকলে অবিলম্বে তা বিএফআইইউ বরাবর রিপোর্ট করতে হবে। বিএফআইইউ থেকে যাচিত সব তথ্য এবং কাগজপত্র/দলিলাদি বিএআইইউ বরাবরে সরবরাহ করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন