আল্লাহর পাক মানব ও জ্বীন জাতিকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারা আল্লাহর হুকুম মেনে চলবে, তার দাসত্ব করবে। ইবাদাত করতে গিয়ে কখনো কখনো বান্দা শিরক ও বিদআত করে ফেলে, অনেক সময় তা সে বুঝতে ও সক্ষম হয় না। বান্দা যখন পাপ করে, তার মৃত্যুর কথা ও আল্লাহর শাস্তির কথা স্মরণ হলে সে তাওবা করে, ফলে তার পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে বিদআতি নেক কাজ মনে করে বিদআত করতে থাকে, তাই সে এ কাজ থেকে তাওবা করে না ফলে মৃত্যুর পূর্বে তার ভাগ্যে তাওবা নসিব হয় না। পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে- “নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শিরককারীকে ক্ষমা করেন না. তাছাড়া যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে দেন (সূরা-নিসা,আয়াত-১১৬)। রাসুল (স.) বলেছেন- বান্দাহর উপর আল্লাহর হক হল সে আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবেনা, আর আল্লাহর নিকট বান্দার হক হল- যে তার সাথে শরীক করেনি তাকে শাস্তি না দেয়া (বুখারী)। রাসুল (স.) আরো বলেছেন- যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরীক করা অবস্থায় মারা গেল সে অগ্নিতে (জাহান্নামে) প্রবেশ করবে, আর যে শরীক করা ব্যতীত মারা গেল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (মুসলিম)। আল্লাহপাক শেষ নবী মোহাম্মদ (স.) এর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে মানুষের নিকট তার হুকুম প্রেরণ করেছেন। নবী (স.) আল্লাহর হুকুম তথা ইবাদাত কিভাবে করতে হবে তা বাস্তবে আমল করে দেখিয়ে গিয়েছেন। নবী (স.) এর পর সাহাবায়ে কেরাম (রা.), তাদের পর তাবেয়ীনে কেরাম (রা.) যারা নবী (স.) এর নিকটতম সময়ের মানুষ ছিল এবং রাসুল (স.) যে যুগকে উত্তম যুগ হিসেবে আখ্যায়িত করে গেছেন তারা আমল করে আমাদেরকে পথ দেখিয়ে গিয়েছেন। নতুন আবিষ্কৃত যন্ত্র, একান্ত দ্বীন পালনের ও দ্বীনের শৃংখলা রক্ষা করার ইজমায়ে উম্মাত স্বীকৃত পদ্ধতি ছাড়া ইবাদাতের মধ্যে সংযোজন করা বিদআত। রাসুল (স.), সাহাবা ও তাবেয়ীনদের সময়ে সুযোগ থাকা সত্তে¡ও উনারা যা করেননি আমরা যদি বিনা প্রয়োজনে আমলের মধ্যে সেরুপ কিছু সংযোজন করি তবে বিষয়টি এমন হয় যে- নবী (স.) দ্বীনকে অপূর্ণ বা অসুন্দর রেখে গেছেন আমরা তার পুর্ণতা দান করছি, যা নবী (স.) এর শানের সাথে দৃষ্টতা প্রদর্শন ব্যতীত কিছু নয়। নবী (স.) বলেছেন বৈধ বিষয় গুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে অবৈধ বিষয়গুলো ও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। উভয়ের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে সন্দেহ যুক্ত বিষয় (বৈধ কি অবৈধ তা স্পষ্ট বর্ণনা নেই এমন বিষয়) সন্দেহ যুক্ত বিষয় থেকে দুরে এমনভাবে থাকার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যেমনি কেহ ফসলের জমিনের কাছে তার পশুকে যদি রশি বরাবর মেপে বাঁধে তবে পশুটি রশি কিছুটা টেনে ফসলে মুখ দিবে। কিন্তু যদি আরো দুরে বাঁধা হয় তবে ফসলে মুখ দেয়া সম্ভব হবেনা। এ ভাবে আমাদেরকে শিরক ও বিদআত থেকে দুরে থাকা বাঞ্চনীয়। এ দৃষ্টি কোন থেকেই আল্লাহপাক আদম ও হাওয়া (আ.) কে সৃষ্টি করে একটি গাছের ফল খেতে নিষেধ করার জন্য ঐ গাছের ফল খেওনা, না বলে ঐ গাছের নিকটে যেওনা এ ভাষা প্রয়োগ করেছেন। মদ যখন নিষিদ্ধ হলো তখন সাধারণত যে সকল পাত্রে মদ তৈরী করা হত অন্য কাজের জন্য সে পাত্র গুলো (দুব্বা, হানতাম, নকীর) ব্যবহারকে নবী (স.) নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। হুদায়বিয়ার যে গাছের নিচে রাসুল (স.) এর হাতে হাত রেখে মুসলমানগণ আমরণ যুদ্ধের শপথ নিয়েছিল যাকে বায়াতে রিদওয়ান বা বায়াতুশ শাজারা নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যে গাছের কথা কুরআনে উল্লেখ হয়েছে, নবী (স.) এর পরবর্তী সময়ে মানুষ হজে¦ গমনের সময় সে পথে আসতে ঐ গাছের নিছে নফল সালাত আদায় করা শুরু করলে শিরক ও বিদআতের সম্ভাবনা নস্যাৎ করার জন্য ওমর (রা.) সে ঐতিহাসিক গাছটি কেটে ফেলেন। অনেকে ভাবতে পারেন- যে গুলোকে বিদআত বলা হচ্ছে সেগুলো ও তো আমল, বাহ্যত ভাল কাজ, এটা করলে ক্ষতির কিছু নেই। জানা দরকার, শরীয়ত যে ভাবে যা করতে বলেছে তার ব্যতিক্রম করা ইবাদত হয় না যেমন জোহর নামাজের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলে কেহ যদি আরো এক বা দুই রাকাত বাড়িয়ে চার রাকাআতের স্থলে পাঁচ বা ছয় রাকাত আদায় করে আর মনে মনে ভাবে ইবাদাত একটু বেশী হয়েছে, কিরআত, রুকু, সিজদা কিছু বেশী হয়েছে অসুবিধা কি? মুলত এ বেশী হওয়ার কারণে তার নামাজই আদায় হবে না। বিদআতের অবস্থা ও তদ্রæপ। ডাক্তার যদি ঔষধ দৈনিক দুইবার সেবন করার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়, আর রোগী যদি দ্রæত সুস্থ্য হওয়ার জন্য ডাক্তারের নির্ধারণ করা পরিমাণ বাদ দিয়ে দিনে পাঁচ ছয়বার ঔষধ সেবন করে সে দ্রæত সুস্থ্য হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্থ হবে, বিদআত ও তদ্রæপই। আরো একটি উপমা দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করছি- একজন যুবতী যার উচ্চতা, শারীরিক গঠন যথাযথ আছে, গায়ের রং ও মোটামুটি ফর্সা, বাস্তবে সে অন্য দশটা যুবতীর চেয়ে আকর্ষণীয়। কিন্তু সে একদম সাদা ফর্সা হওয়ার বাসনায় একজন রুপ বিশেষজ্ঞের নিকট গেল। রুপ বিশেষজ্ঞ তাকে দেখে বলল- আপনিতো যা আছেন তা যথেষ্ট, আরো ফর্সা হওয়ার দরকার কি? তারপরও ঐ যুবতী আরো ফর্সা হওয়ার বাসনা প্রকাশ করল। তখন রুপ বিশেষজ্ঞ বলল- আপনার ফর্সা হওয়ার একমাত্র ঔষধ আছে যার অবস্থা এমন, ঔষধটি ব্যবহার করলে হয় আপনি আরো ফর্সা হবেন নচেৎ ঔষধের বিক্রিয়ায় আপনার ত্বক জ¦লে যাবে আপনি আরো কুৎসিত হয়ে যাবেন এমনকি ত্বকে পচন ও ধরতে পারে, সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি। এমতাবস্থায় পাগল ছাড়া কেহ কি এ ধরণের ঔষধ ব্যবহারের ঝুঁকি নিবে? তা হলে যেখানে ফরয, ওয়াজির সুন্নাতে মোয়াক্কাদা ও সহীহ সুত্রে বর্ণিত তাছবীহ ও নফলাদী পালন করলে মুক্তি পাওয়ার ও জান্নাতি হিসেবে গণ্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে সে ক্ষেত্রে বিতর্কিত ও সন্দেহ জনক কাজকে মুস্তাহাব বা মুস্তাহছান হিসেবে আমল করে বিদআতী হওয়ার ঝুঁকি নেয়ার দরকার কি? অথচ আল্লাহর রাসুল বলেছেন- যে ব্যক্তি কোন বিদআতিকে সাহায্য করল আল্লাহর নিকট সে অভিশপ্ত (মুসলিম)। নবী (স.) আরো বলেছেন- যে কোন বিদআতিকে সম্মান দেখাল সে ইসলামকে ধ্বংস করার কাজে সাহায্য করল (মিশকাত)।
আমাদের সকল চাওয়া পাওয়া আমরা আল্লাহর নিকট চাইব, কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর উপর ক্ষমতাবান মনে করব না। কোন ব্যক্তির নিকট, মাজারের নিকট সন্তান কামনা, ধন বৃদ্ধি, পার্থিব উন্নতি চাওয়া থেকে বিরত থাকব। রাশিচক্রে বিশ^াস, ভাগ্য গণনা, সৌভাগ্য সংখ্যা (৭), দুভার্গ্য সংখ্যা (১৩), যাদু মন্ত্র, ভাঙা আয়না দেখায় অমঙ্গল, খালি কলস দেখে, কালো বিড়াল দেখে যাত্রা অশুভ হওয়া, ইত্যাদি কুসংস্কারে আবদ্ধ হব না। তামা, লোহা, কোন ধাতু, কোন পৈতা ব্যবহারের মাধ্যমে রোগ মুক্তি কামনা করবনা। নবী (স.) থেকে বর্ণিত নেই, উম্মাতের ইজমাতে যে আমল বর্ণিত নেই সেরুপ বিতর্কিত আমল থেকে বিরত থাকব, আল্লাহ আমাদিগকে শিরক ও বিদআত মুক্তভাবে আমল করার তৈৗফিক দিন, আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন