শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

এই প্রাণহানি ও ক্ষতির দায় কে নেবে

| প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দেশের রাজনীতিতে হরতাল ধর্মঘটের ইতিহাস নতুন নয়। দিনের পর দিন ধর্মঘট ও অবরোধের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজপথের বিরোধিদলকে জনভোগান্তি সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার করে যখন মানববন্ধন, অনশন, অবস্থান ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলের মত কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা যাচ্ছে তখন সরকারের একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে চরম নৈরাজ্যকর ও আত্মঘাতী পরিবহন ধর্মঘট পালিত হয়েছে। নিরাপদ সড়কের আন্দোলন ও গণদাবীর প্রেক্ষাপটে গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সড়ক নিরাপত্তা আইনের সবচেয়ে কাঙ্খিত ধারাগুলো বাতিলের দাবীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর ৪৮ ঘন্টার ধর্মঘট পালন করে। পরিবহণ শ্রমিকদের এই ধর্মঘট যদি স্রেফ কর্মবিরতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো, তা এতটা আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠত না। গণপরিবহন শ্রমিকদের এই কর্মবিরতির ৪৮ ঘন্টায় দেশের কোটি কোটি কর্মজীবী মানুষকে অশেষ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সেই সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী,পরিবহন যাত্রী ও চালক, ব্যক্তিগত গাড়ীর যাত্রী ও চালকদের অভাবনীয় লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্স চলাচল ও মুমুর্ষু রোগীর চলাচলে বাঁধ সৃষ্টির কারণে অন্তত ৩ জন শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
৪৮ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সৃষ্ট বিয়োগান্তক মমার্ন্তিক সব ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে আসেনি। দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সর্বোচ্য সংগঠন এফবিসিসিআই’র বরাতে গতকাল একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, অপ্রত্যাশিত নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে পালিত দুইদিনের পরিবহন ধর্মঘট দেশের অর্থনীতির জন্য অনেক বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে এনেছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমান ৭ হাজার কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষত: রফতানি বাণিজ্য ব্যহত করার মাধ্যমে অনেক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সুখ্যাতি নষ্ট করা হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের অর্থনৈতিক-সামাজিক কর্মকান্ড স্থবির ও জিম্মি করে ফেলা হয়েছে। অতীতে গণতান্ত্রিক- রাজনৈতিক দাবী দাওয়া নিয়ে আহুত বিরোধিদলের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি প্রতিহত করতে সরকার ও সরকারীদলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেক বেশী সোচ্চার ভ‚মিকায় দেখা গেলেও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা কর্মবিরতিতে সব ধরনের গণপরিবহন, ব্যক্তিগত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, এমনকি অ্যাম্বুলেন্স আটকে শিশু মৃত্যুর ঘটনার পরও তাদেরকে নিরব ভ‚মিকা পালন করতে দেখা গেছে। মানুষের ভোগান্তির অজুহাত তুলে বিরোধিদলের নিয়মতান্ত্রিক সমাবেশ করতে বাঁধা দেয়া হলেও দেশের সব গণপরিবহন, রফতানি বাণিজ্য ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিরবতা ও পুলিশের নিস্ক্রীয়তা বিষ্ময়কর।
জুলাই মাসের ২৯ তারিখে ঢাকার কুর্মিটোলায় ফুটপাথে দাড়িয়ে থাকা দুই শিক্ষার্থীর বাসচাপায় মৃত্যুর ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা ছিলনা। দুই বাসের চালক প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালিয়ে ফুটপাথে গাড়ি তুলে দিয়ে এই দুজনকে হত্যা করেছিল বলেই রিপোর্টে বলা হয়েছে। দেশে সড়ক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ও কঠোর আইন না থাকায় গণপরিবহনের চালকরা দুর্ঘটনা ও হত্যাকান্ডের ঝুঁকি নিতেও ভয় পায় না। সড়ক নিরাপত্তায় আরো অনেক বিষয় জড়িত থাকলেও চালকের অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় প্রাণহানীতে কঠোর শাস্তির বিধান এ ক্ষেত্রে একটি বড় রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে পারে। এ কারণেই এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান থাকা আবশ্যক। সড়ক পরিবহন ফেডারেশন যে ৮ দফা দাবীতে কর্মবিরতি, আন্দোলন করছে এবং আল্টিমেটাম দিয়েছে তা মেনে নিলে দেশের সড়ক- মহাসড়কের নিরাপত্তা যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও রসাতলে যাবে। অদক্ষ চালকরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেবে। তবে সড়কে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রতি নজর না দিলে শুধু আইন করেই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের ঘোষিত ৮ দফা দাবী আদায়ের আন্দোলন কর্মসূচিতে তারা পরবর্তিতে ৯৬ ঘন্টা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। বিগত ৪৮ ঘন্টার ধর্মঘটের সময় যে নজিরবিহীন নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা , জনভোগান্তি, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটেছে তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করা না হলে এ ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে। অনৈতিক দাবী আদায়ের নামে বর্বর কার্যকলাপের মাধ্যমে সবকিছু স্তব্ধ করে দিয়ে জনভোগান্তি ও হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতির এই তৎপরতা মেনে নেয়া যায় না। রাস্তা বন্ধ রেখে শিশু হত্যা, কলেজ ছাত্রীদের গায়ে পোড়া মবিল, ব্যক্তিগত গাড়ী চালকদের মুখে পোড়া মবিল মেখে তারা আমাদের নাগরিক ও মানবাধিকারকে সারাবিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাদের বেপরোয়া নৈরাজ্য ও বর্বরতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন