শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ডিসেম্বরেই ফিরছে প্রাণ

লাইফলাইনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ তিন সেতুর কাজ

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮

দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা, গোমতী ও কাঁচপুর সেতুর নির্মাণকাজ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই তিনটি সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে-এমন কর্মপরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছে সবকিছু। দিন-রাত কাজ করছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা। নির্ধারিত সময়ের আগেই সেতু তিনটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে চলছে এ মহাকর্মযজ্ঞ। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই উদ্বোধনের কথা মাথায় রেখেই খুব দ্রুত এগিয়ে চলছে সেতু তিনটির নির্মাণকাজ।
এদিকে, তিনটি সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি দেখতে প্রায়ই ছুটে যান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি নির্মাণকাজের খোঁজখবর নেন প্রতিনিয়ত। এ কারনেই অনেকেই আশাবাদী আগামী ডিসেম্বরেইে সতু তিনটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
ভুক্তভোগিদের মতে, নতুন সেতু তিনটি খুলে দেয়া হলে মহাসড়কের চলাচলে জ্বালানি তেল খরচ যেমন কমবে তেমনি সময়েরও সাশ্রয় হবে। যানজটের ভোগান্তি আর থাকবে না। সচল হয়ে উঠবে দেশের অর্থনীতির চাকা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তিনটি ফ্লাইওভারের কাজ বাকী রেখেই ২০১৬ সালে চাল লেনের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু যানজটের কারনে চার লেনের সুফল ম্লান হয়ে যায়। তিনটি সেতুকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ভয়াবহ যানজটে মানুষের ভোগান্তি ক্রমেই বাড়তে থাকে। অর্থনীতিতে পড়তে থাকে বিরুপ প্রভাব।
সওজ সূত্র জানায়, ঝুঁকির মুখে থাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিদ্যমান তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর পাশেই মহাসড়কে জনদুর্ভোগ কমাতে আরও তিনটি সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ঠিকাদারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সেতু বিভাগ। ২০১৬ সালে তিন সেতু নির্মাণের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদকাল হলেও তিনটি সেতুরই কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত গতিতে কাজ চলতে থাকে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে নতুন তিনটি সেতুর মধ্যে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর জন্য ভিয়েতনাম থেকে আনা ৬৪টি বক্স গার্ডার সেট ও ডেক স্ল্যাব প্যানেল সেতুর সুপারস্ট্রাকচারে বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। তবে সিলেট মহাসড়কের সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারী ওভারপাসের নির্মাণকাজ চলছে।
চারলেন বিশিষ্ট দ্বিতীয় মেঘনা সেতুটি ৯৩০ মিটার দীর্ঘ। এ সেতুর উভয় পাশে থাকবে ছয়লেনবিশিষ্ট সংযোগ সড়ক। ইতিমধ্যে ভিয়েতনাম থেকে আনা ১০৮টি বক্স গার্ডার, ৭২টি ক্রস গার্ডার এবং ২১৬টি ডেক স্ল্যাব বসানোর কাজ প্রায় শেষ। অন্যদিকে, দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুটিও হবে চার লেনের। এ সেতুর জন্য মিয়ানমার থেকে আনা ১৪৪টি বক্স গার্ডার ও ২৩৬টি ডেক স্ল্যাব প্যানেল সেতুর সুপারস্ট্রাকচারে বসানোর কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। ইতিমধ্যে সেতুর উভয়পাশের সংযোগ সড়ক, ডাইভারশন সড়কসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয়েছে।
দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (জাইকা) আর্থিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে। তিনটি সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে জাইকার প্রকল্প সাহায্য রয়েছে ৬ হাজার ৪২৯ দশমিক ২৮৯৬ কোটি টাকা। সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে ২ হাজার ৫৭ দশমিক ৬৪৮৭ কোটি টাকা। জাইকার অর্থ সেতুগুলোর নির্মাণ, পুনর্বাসন ও পরামর্শ সংক্রান্ত কাজে ব্যয় করা হচ্ছে। ভ্যাট, ট্যাক্সসহ প্রশাসনিক ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত ব্যয় করা হচ্ছে সরকারি তহবিল থেকে।
সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান বলেন, কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটলে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে সেতুগুলো যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই এ কাজ সম্পন্ন হবে। এতে মহাসড়কে বিদ্যমান ভোগান্তি অনেকটাই নিরসন হবে।
অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সেতু তিনটি খুলে দিলে ঢাকা-চট্টগ্রামের ভ্রমণ সময় অর্ধেকে নেমে আসবে। দীর্ঘ সময়ের পরিবর্তে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে। এ ছাড়া এতে যানজট লাঘবের পাশাপাশি দুর্ঘটনা নূন্যতম পর্যায়ে নেমে আসবে। পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন সহজতর, সাশ্রয়ী হবে বলেও আশা করছেন এ সড়কে চলাচলরত ব্যবসায়ী ও চালকরা ।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে বিদ্যমান সেতুগুলোর মেরামত কাজে হাত দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এই তিনটি সেতুর মেরামতেও অন্তত এক বছর সময় লাগতে পারে। তারা আশা ব্যক্ত করে বলেছেন, পুরোনো তিন সেতু মেরামতের পর নতুন তিনটির সঙ্গে যান চলাচলে যুক্ত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যোগাযোগব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। কমে যাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময়। বর্তমানে তিন সেতুতে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। সেই সময় অনায়াসে কমে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়া যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন