২০ দলীয় জোট, বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে আসন বণ্টন চূড়ান্ত হয়েছে। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী বিএনপি হাতে রেখেছে ২৪১টি আসন, জামায়াতকে দেওয়া হয়েছে ২২টি আসন এবং ঐক্যফ্রন্টকে দেওয়া হয়েছে ১৯টি আসন। এর মধ্যে গণফোরাম ৭, জেএসডি ৪, নাগরিক ঐক্য ৪, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৪। অপরদিকে ২০ দলীয় জোটের অপর শরীকদের দেয়া হয়েছে ১৮টি আসন। এনপিপি, কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, বিজেপি, পিপিবি ১টি করে আসন পেয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পেয়েছে ৪টি, জাপা (জাফর) ২টি, খেলাফত মজলিস ২টি এবং এলডিপি ৫টি আসন।
শরিকদলের সকলকে কমবেশি খুশি করে নমিনেশন দেওয়া ছিল একটি হারকুলিয়ান টাস্ক। আওয়ামী বিরোধী শিবির অর্থাৎ বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি প্রার্থী। বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট ও জামায়াতসহ দল ছিল প্রায় ৩৫টি। এতগুলি দলের মধ্যে মাত্র ৩০০টি আসন বণ্টন ছিল একটি দুঃসাধ্য কাজ। কিন্তু বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটি, বিশেষ করে মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর অত্যন্ত ধৈর্য, বিনয় ও সহনশীলতার সাথে এই কাজটি করেছেন। তাকে একদিকে সামলাতে হয়েছে ২০ দলের দাবি। এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক যে প্রত্যেকেই অনেক বেশি করে আসন চাইবে। একদিকে তাদের প্রত্যাশা, অন্যদিকে বাস্তবতা- এই দুটির মধ্যে সমন্বয় করা চাট্টিখানি কথা নয়। আবার অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্ট। সেখানে রয়েছে গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং ঐক্য প্রক্রিয়া। ঐক্যফ্রন্টের দলগুলি ছোট, কিন্তু নেতারা অনেক বড়। ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে আন্দোলন, ত্যাগ ও তিতিক্ষার এক সুদীর্ঘ ইতিহাস।
ড. কামাল যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ সহচর, অন্যদিকে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান। আসম আব্দুর রব বাংলাদেশের স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিলেন। তিনি ডাকসুর ভিপি ছিলেন। কাদের সিদ্দিকী অসীম বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করার জন্য বেসামরিক ব্যক্তি হয়েও বঙ্গবীর খেতাব পেয়েছেন। মাহমুদুর রহমান মান্না চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় বা চাকসুর জিএস ছিলেন। এছাড়াও তিনি ডাকসুর পর পর দুই বারের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। তিনি ২৩ বছর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ডাকসুর ভিপি এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। মোস্তফা মহসিন মন্টু বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী লন্ডনে ডাক্তারি পড়া শেষ করে উচ্চ শিক্ষা তথা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না হয়েই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তিনি ভারতে এসেছিলেন।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ভেতরে ৩ জন ডাকসুর ভিপি, দুই জন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একজন বাংলাদেশের সংবিধান রচয়িতা ছিলেন। তাই বলছিলাম যে, এই সব ব্যক্তিত্বের দল ছোট হলেও নেতা হিসেবে দেশ-বিদেশে তাদের ইমেজ বিরাট। সুতরাং আসন সংখ্যার দিক দিয়ে তাদের চাহিদাও মোটামুটি বড়ই ছিল। কিন্তু বিএনপি তথা মির্জা ফখরুল তাদেরকেও সামাল দিয়েছেন। সকলের সাথে মৈত্রী ও সমঝোতার পরিবেশের মধ্যদিয়ে তিনি আসন বণ্টন সমস্যার সমাধান করেছেন।
আরও একটি বিষয় সত্যিই বিএনপির দক্ষতার পরিচয় বহন করে। একদিকে ধর্ম নিরপেক্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি, অন্যদিকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং অন্যদিকে জামায়াতেই ইসলামীর মতো ধর্মভিত্তিক দল-এই ত্রিবিধ শক্তিকে এক প্ল্যাট ফর্মে আনা এবং তাদের সাথে মোর্চা করা সোজা কথা নয়। শুধুমাত্র বিএনপি নয়, ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্ট সকলের অনন্য সাধারণ অ্যাচিভমেন্ট হলো এই যে, আওয়ামী লীগ তথা আওয়ামী জোটের বিরুদ্ধে যারা একাট্টা হয়ে নির্বাচনী লড়াই করছেন তারা সকলেই ধানের শীষ নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়ছেন। যাদের নাম বললাম তাদের হাতে অর্থাৎ রব, মান্না, মন্টু, সুলতান, কাদের সিদ্দিকী, মেজর জেনারেল আমিন, রেজা কিবরিয়া, গোলাম মওলা রনি, অধ্যাপক আবু সাঈদ, মির্জা ফখরুল এবং জামায়াত- সকলের হাতে ধানের শীষ- এটিই এক অবিশ্বাস্য অনন্যসাধারণ দৃশ্য। এই অবিশ্বাস্যকেই সম্ভব করেছেন ২০ দল, বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
দুই
সবচেয়ে জটিল যে বিষয়, সেই আসন বণ্টন সমস্যার মোটামুটি সন্তোষজনক সমাধান হয়েছে। এরপর ঐক্যফ্রন্ট বিশেষ করে ২০ দলীয় জোট এবং বিএনপির ওপর এক অসাধারণ দায়িত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অর্পিত হয়েছে। এই দায়িত্ব তাদের সফলভাবে পালন করতেই হবে। অন্যথায় বৃহত্তর ঐক্য গঠনের মূল উদ্দেশ্যই বানচাল হয়ে যাবে। ৪০ বছর আগে বিএনপি গঠিত হয়েছিল। ৪০ বছর পর এবারই সর্বপ্রথম বিএনপি তাদের অবিসংবাদিত নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানকে ছাড়াই নির্বাচনে নেমেছে। একথা ঠিক যে, তাদেরকে ছেড়ে নির্বাচনে না নেমে বিএনপির কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু একথাও ঠিক যে, নির্বাচনে নেমে তাদের মূল নেতা-নেত্রীর কথা বিস্মৃত হলে চলবে না। বিএনপি নিজেই এই বিষয়টি কতখানি জানে সেটি আমরা জানি না। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থা এমন একটি পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, বিএনপির চেয়ে মনে হয় বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাই বেশি। সুতরাং নেত্রীকে মুক্ত মানবী হিসেবে বাংলাদেশে বিচরণের দাবিতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটকে বুলন্দ আওয়াজ তুলতে হবে। নির্বাচনী প্রচারণার একটি মুহূর্তও শীর্ষ নেত্রীকে ভুলে গেলে চলবে না। বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোট নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি যে মুক্ত মানবী বেগম জিয়ার চেয়ে বন্দী মানবী বেগম জিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী।
আমি সরাসরি রাজনীতি করি না। যখন বগুড়া জিলা স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ি তখন থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলাম। এরপর এম এ পাশ করা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম। তারপর সংসারের দাবি, পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ এসব কারণে আর প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের রাজনীতি অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। আমার ব্যক্তিগত মতে, শেখ হাসিনার সরকার যতগুলো ভুল করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং হিমালয় সদৃশ্য ব্লান্ডার করেছে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে। তার মামলা যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক, সেটি প্রত্যেকটি মানুষ বোঝে। খালেদা জিয়া যদি মাঠে থাকেন তাহলে আওয়ামী লীগের ৫০ ভাগ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। ১৯৭০ সালে শেখ মুজিবুর রহমান জনপ্রিয়তার যে শিখরদেশে পৌঁছেছিলেন ঠিক সেই জায়গায় আজ পর্যন্ত কেউ যেতে পারেনি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম জিয়াকে সাজানো মামলায় কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই তার জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়ছে। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা যে উচ্চতায় পৌঁছেছিল সেখানে না পৌঁছলেও বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তা আজ তার কাছাকাছি পৌঁছেছে।
বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা আজ যে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে সেটির প্রমাণ যদি আওয়ামী লীগ সরকার পেতে চায় তাহলে তাকে একবার মুক্ত করে দেখুক এবং তাকে একটি জনসভা করতে দিক। দেখা যাবে, বেগম জিয়ার সেই জনসভা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের জনসভার সমান না হলেও তার কাছাকাছি গিয়েছে।
তিন
এমন অসাধারণ জনপ্রিয় এক নেত্রীকে কারার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আটকে রাখা হয়েছে। কারার ঐ লৌহ কপাট থেকে দেশনেত্রীকে উদ্ধার করতে পারে একমাত্র এই দেশের ১৭ কোটি মানুষ। আর সেটি করতে পারে ১৭ কোটি মানুষের প্রত্যেকের একটি করে ভোট। আজ ২০ দলীয় জোট, বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের এক নম্বর প্রায়োরিটি হলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারার ঐ লৌহ কপাট থেকে গণতান্ত্রিক পন্থায় মুক্ত করা। আর সেটি পারে তাদের একটি ভোট। আজ তাই নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রতিটি জনসভায়, প্রতিটি মিছিলে, প্রতিটি উঠান বৈঠকে ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোট নির্বিশেষে জনগণের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাতে হবে এই বলে: আমরা আপনাদের কাছে কিছুই চাই না। আমরা চাই দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য আপনাদের একটি ভোট। আপনাদের একটি মূল্যবান ভোট তাকে মুক্ত করতে পারে। সুতরাং আপনারা দলে দলে ধানের শীষে ভোট দিন।
চার
সবশেষে আপনাদেরকে একটি সুসংবাদ জানাই। আপনারা সকলেই জানেন লন্ডনের দি ইকোনোমিস্ট পত্রিকা পৃথিবীর অন্যতম খ্যাতিমান পত্রিকা এবং পৃথিবীর সমস্ত সুধীজনের কাছে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য, নির্ভরশীল এবং শ্রদ্ধার পাত্র। তেমন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পত্রিকাটি ‘ওয়ার্ল্ড ইন ২০১৯’ সংখ্যায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভবিষ্যৎবাণী করেছে যে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসছে। এটি অত্যন্ত লম্বা একটি রিপোর্ট। ১২৫৬ শব্দের এই রিপোর্টটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক রিপোর্ট। এই রিপোর্টটি পুরাপুরি উদ্ধৃত করা যাবে না। রিপোর্টে বলা হয়েছে, The Awami League, in power since 2009, but BNP set to win another parliamentary majority in December 2018
A secular icon who drafted Bangladesh’s constitution has emerged as the face of an embattled opposition seeking to end the decade-long rule of Prime Minister Sheikh Hasina, who has been accused of authoritarianism.
In a general election due at the end of this month, Hasina’s ruling Awami League (AL) will be fighting to retain power against a new alliance led by Kamal Hossain, an Oxford-educated international jurist and a former foreign minister, whom Hasina grew up calling “kaka”, or uncle.
The 82-year-old lawyer activist joined hands with the main opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) and two other parties to form the Jatiya Oikya Front (National Unity Front) in October.
The BNP is hoping the alliance will help boost its support and move on after a series of setbacks, including the jailing of its leader former Prime Minister of Bangladesh Khaleda Zia for corruption in February and the sentencing of exiled acting leader, her son, in October.
সংক্ষিপ্ত অনুবাদ: বিএনপি আশা করছে যে, তাদের নেত্রীকে কারাগারে নিক্ষেপ, তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দুর্নীতির অভিযোগ আনয়ন এবং তাকে জেলে দেওয়ার পটভূমিকায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যজোট তাদের জনসমর্থন অনেক বৃদ্ধি করবে।
journalist15@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন