শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শুভ হোক সম্ভাবনাময় পথচলা

| প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বছরের শুরুতেই বেশীরভাগ নতুন মুখ নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভার দায়িত্ব গ্রহণ চলতি বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নতুন মাত্রা লাভের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থনীতির বিশ্বমন্দাসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা সংকট সত্তে¡ও বিগত ১০ বছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নানাক্ষেত্রে উন্নয়নের সূচক অদম্য গতিতে এগিয়েছে। গত সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য এবং উন্নয়নের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও বিচক্ষণ দিক-নির্দেশনা ছিল তার পেছনে সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছেন। বড় উন্নয়ন প্রকল্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ একনেক সভার শেষে পরিকল্পনামন্ত্রীর ব্রিফিং থেকে এ ধারণা সহজেই লাভ করা যায়। সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার যোগ্য আসনটিই দিয়েছেন। প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদ আবুল মাল আব্দুল মুহিতের অবসর গ্রহণের মধ্য দিয়ে মন্ত্রী পরিষদের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর যোগ্যতর উত্তরসুরী হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। নতুন প্রেক্ষাপটে নতুন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাঁর অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও গতিশীল নেতৃত্বের প্রতিফলন খুব শীঘ্রই দেখতে পাবে দেশের মানুষ। এই প্রত্যাশা আমাদের। শিক্ষা, সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ও কর্মজীবনে তাঁর ইতিহাস কৃতিত্ব ও সাফল্যের ইতিহাস। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রিকেট আন্তর্জাতিকভাবে একটি সম্মানজনক অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে বিগত সরকারের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবার তাঁর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রাপ্তি জাতিকে আশান্বিত করেছে।
দারিদ্র্য বিমোচন, বৈষম্য দূরীকরণ, মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সূচকে মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণ বাংলাদেশের আগামী রাজনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একজন সুযোগ্য, প্রফেশনাল ও অ্যাকাডেমিক দক্ষ এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার কোনো বিকল্প ছিলনা। যদিও দেশের সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলা এবং মানুষের সামগ্রিক প্রত্যাশা পুরণে শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রীর দক্ষতা-যোগ্যতাই সব নয়। পুরো মন্ত্রীসভা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার সুসমন্বিত উদ্যোগই দেশকে কাঙ্খিত উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারে। বিগত সময়ে দেশ একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়েছে, অন্যদিকে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, ব্যাংক জালিয়াতি, ব্যাপক মানিলন্ডারিং, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফ্ট কোড হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লোপাটের মত ঘটনাও ঘটেছে। সে সব ঘটনার তদন্ত ও বিচার এখনো অস্বচ্ছতা ঢাকা রয়েছে। সে সব ঘটনা সম্পর্কে সৃষ্ট ধূ¤্রজাল ও অস্বচ্ছতা দূর করার পাশাপাশি এ ধরনের কেলেঙ্কারির পুনরাবৃত্তি রোধে নতুন অর্থমন্ত্রীকে খুব সতর্ক পদক্ষেপ ও বাড়তি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। দায়িত্ব গ্রহণের পর গণমাধ্যমে দেয়া প্রথম মন্তব্যেই অর্থমন্ত্রী অতীতের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ‘অর্থ মন্ত্রনালয় যেভাবে চলছিল সেভাবে আর নয়’ বলে মন্তব্য করে তিনি স্পষ্টতই অর্থমন্ত্রনালয় বদলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিগত সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, তার এই ঘোষণা রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর নয়। তাঁর উপর আস্থা রাখার যোগ্যতার প্রমাণ তিনি বিভিন্ন সময়ে দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিশ্বের ৪১তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বলে একটি জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মত প্রতিবেশীদের ডিঙ্গিয়ে ভারতের পর দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি এখন বাংলাদেশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৯ ধাপ এগিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে ২৪ তম অবস্থানে উঠে আসবে বলে ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে। চলতি বছরে সাড়ে ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে অর্থমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি তার লক্ষ্যে স্থির, দৃঢ়, নিরলস এবং সচেতন। দুই দশকেরও বেশী আগে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ইমার্জিং টাইগার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। শুধুমাত্র সিদ্ধান্তহীনতা যোগ্য নেতৃত্বের অভাব এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা থেকে বিচ্যুত হতে দেখা গেছে। নাইজেরিয়া তার অন্যতম উদাহরণ। বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করেই অর্থমন্ত্রী তাঁর সাফল্যের ধারা আরো বেগবান করতে চান। এ ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো তাঁকে মোকাবেলা করতে হবে তার অন্যতম হচ্ছে, বিনিয়োগের পরিবেশ ও আস্থা পুন:প্রতিষ্ঠা করা। বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোতে বাংলাদেশের নাগরিক ও পাসপোর্টের মর্যাদা পুন:প্রতিষ্ঠা করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে নতুন সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়, পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রনালয় ও দফতরে কর্মকান্ডে একটি কার্যকর সমন্বয় সৃষ্টি করা জরুরী। বিগত সময়ে অনেক সম্ভাবনাই কাজে লাগানো যায়নি। জাতীয় রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা ও অনিশ্চয়তার কারণেই বেশীরভাগ সম্ভাবনা নষ্ট হয়েছে। চলতি বছরে দেশের অর্থনীতিতে যে ইতিবাচক প্রত্যাশার কথা বলা হচ্ছে, তার বিপরীতে নানাকারনেই জাতীয় রাজনীতিতে এক ধরণের অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতার আশঙ্কাও রয়েছে। এ ধরণের আশঙ্কা দূর করতে সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে সুস্থ একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক বাতাবরণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন