দেশের সব বিভাগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি করে বিশেষায়িত কিডনি হাসপাতাল ও একটি করে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মান করা হবে। এছাড়া দেশের প্রত্যেক জেলা হাসপাতালে ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপণ করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার নবনিযুক্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক তার প্রথম কার্য দিবসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, দেশে অসংক্রামক রোগ বিশেষ করে কিডনি ও ক্যান্সার রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এসব রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। দেশের সর্বত্র এই সব রোগের চিকিৎসাসেবা প্রদানের পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। তাই জেলা পর্যারের হাসপাতালগুলোতে ক্যান্সার ও কিডনি ইউনিট স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে দেশের সব মানুষের জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এক্ষেত্রে শিগগিরি নিয়োগপ্রাপ্ত ১০ হাজার চিকিৎসক এবং ৩ হাজার মিডওয়াইফের পদায়ন নিশ্চিত করা হবে। যাতে করে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষরা গ্রাজুয়েট নিবন্ধীত চিকিৎসকাদের সেবা পান। সারাদেশের সব হাসপাতালে জরুরী চিকিৎসা সেবা বা ইমার্জেন্সি প্রটোকল নিশ্চিত করা হবে। যাতে করে দূর্ঘটনাসহ জরুরী রোগীদের সেবা বিলম্বিত না হয়। যেসব ইনস্টিটিউট এখনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি দ্রুততার সঙ্গে সেগুলো চালু করা হবে।
গত দশ বছরে স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়নের খন্ডচিত্র তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, গত দশ বছরে ব্যাপক সফলতার মুখ দেখেছে স্বাস্থ্য সেক্টর। দেশে রোগী শয্যার সংখ্যা ২৭ হাজার থেকে বেড়ে ৪২ হাজার হয়েছে। একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়েছে চারটি। নতুন ২২টি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। চারটি নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮টি। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। প্রায় ৯১ দশকি ৩ শতাংশ শিশুকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। পোলিও এবং ধনুস্টংকারমুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যখাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা-২০১১’। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা গ্রহন করে থাকেন।
এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, যেখানে কোন কিছুর অভাব থাকে সেখানেই সুশাসন বাধাগ্রস্থ হয়। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যখাতে চিকিৎসক নার্সসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার অভাব ছিল। তাই স্বাস্থ্য সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশে অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অপর এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে যে বাজেট বরাদ্ধ হয় তা জিডিপির এক শতাংশের কম। আবার স্বাস্থ্য বাজেটের ৪৫ ভাগই ব্যয় ওষুধের পেছনে। তাই চিকিৎসা ক্ষেত্রে মানুষের আউট অব পকেট এখন ৬৭ শতাংশ। বাজেট বাড়াতে পারলে আউট অব পকেট কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
জনগণের দোরগোড়ায় স্বল্প খরচে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করে নতুন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করে সকলকে নিয়ে তা মোকাবেলা করা হবে। এ লক্ষ্যে তিনি মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে রাজধানীসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন