চট্টগ্রামে হঠাৎ খুনোখুনির ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মাত্র ৭২ ঘণ্টায় নগরী ও জেলায় চাঞ্চল্যকর ছয়টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় নির্বাচনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগের মধ্যেই ঘটেছে এসব খুন, গণপিটুনি, অপহরণ আর গুপ্তহত্যা। আকস্মিক এমন ভয়ঙ্কর অপরাধে চিন্তিত পুলিশের কর্তা-ব্যক্তিরাও।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার ভোরে সীতাকুন্ডের বারবকুন্ডে নিজ বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এক মাদরাসার শিক্ষককে। নির্মম খুনের শিকার ইমরান হোসেন রিয়াদ (২৮) সীতাকুন্ড আলিয়া মাদরাসার প্রভাষক। তার আগে সোমবার সকালে নগরীর পাহাড়তলী বাজারে পিটিয়ে হত্যা করা চাঁদাবাজ আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেলকে। পিটুনিতে গুরুতর আহত অপরজন এখনও হাসপাতালে। একই দিন নগরীর পতেঙ্গায় মোবাইল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা মো. ফারুক নামে এক যুবককে।
ওইদিন স›দ্বীপে দুই দল সন্ত্রাসীর মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় থানার শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা মনির। পুলিশের দাবি তারা বন্দুকযুদ্ধের পর গুলিবিদ্ধ ১৪ মামলার আসামি কালা মনিরের লাশ উদ্ধার করে। তার আগের দিন গভীর রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার মোল্লা পাড়ায় পাওয়া গেছে এক তরুণীর বস্তাবন্দি লাশ। ওই দিন হাটজারীর শিকারপুর থেকে উদ্ধার করা হয় ব্যবসায়ী নুরুল আলমের (৫৫) ক্ষতবিক্ষত লাশ। আগের দিন বিকেলে নিজবাড়ি রাউজানের উড়কির চর থেকে ছুরিকাঘাত করে তাকে অপরহণ করা হয়। কয়েক ঘণ্টার পর তার লাশ মিলে।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এসব খুনের ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বছরের প্রথম দিন সীতাকুন্ডে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এক যুবলীগ নেতাকে। জাতীয় নির্বাচনের পর হঠাৎ করে খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি ঘটনা গুরুত্বের সাথে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের গ্রেফতারেও অভিযান চলছে।
নির্বাচনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মহানগরীর ১৬টি থানা এলাকায় নানা তৎপরতা শুরু করে পুলিশ। চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির পাশাপাশি অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেফতারে নিয়মিত অভিযানও জোরদার করা হয়। জেলা পুলিশও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগ নেয়। এরমধ্যে খুন আর অপহরণের ঘটনায় শঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
নগরীর পাহাড়তলীতে গণপিটুনির ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহির হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বিকেল পর্যন্ত নিহত মহিউদ্দিন সোহেলের পরিবারের কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি। তবে তারা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়তলী এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল সোহেল ও তার সহযোগীরা। রেলওয়ের দুটি কক্ষ দখল করে সেখানে রীতিমতো অফিস খুলে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও চাঁদা নিয়ে আসছিল সে। হঠাৎ করে চাঁদার পরিমাণ দ্বিগুণ করে দেয়ায় বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা তাকে পিটিয়ে মারে। আগুন ধরিয়ে দেয় তার আস্তানায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাকে পিটিয়ে হত্যার পর তার সহযোগীরাও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তবে এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
নিহত সোহেলের পরিবার ও তার অনুসারীরা দাবি করছেন আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। থানার পরিদর্শক জহির হোসেন বলছেন, পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার পর হত্যাকান্ডের কারণ উদঘাটন করা হবে। রোববার রাতে মোল্লা পাড়া থেকে উদ্ধার বস্তাবন্দি তরুণীর পরিচয় গতকাল পর্যন্ত মেলেনি। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে বলে জানান পরিদর্শন জহির হোসেন। তিনি বলেন, নিহতের পরিচয় পাওয়া গেলে খুব সহজে খুনের রহস্য উদঘাটন করা যাবে।
এদিকে পতেঙ্গার মাইজপাড়ায় মোবাইল চোর সন্দেহে যুবক মো. ফারুককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গতকাল ভোর পর্যন্ত টানা ২৪ ঘণ্টার অভিযানে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- মো. রাশেদ (৩৫), মো. মামুনুর রশিদ (৩০), মো. সজিব (২০) ও মো. ইলিয়াছ (৩২)। গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চার আসামিকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর জোন) মো. হামিদুল আলম।
তিনি বলেন, ওই চারজনসহ ৭-৮ জন মিলে ফারুককে খুন করে। তবে খুনের রহস্য এখনও পরিষ্কার নয়। আমরা খুনের কারণ উদঘাটনে কাজ করছি। পতেঙ্গা থানার পুরাতন কন্ট্রোল মোড়ে ফারুককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মো. রাশেদকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন ফারুকের ভাই মো. জসিম। ফারুক খুনের ঘটনায় জড়িত অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন