সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ফলে দেশে হ্যান্ডসেট আমদানিও বাড়ছে সমানতালে। এর বেশিরভাগই বৈধ পথে আসলেও অবৈধ পথে হ্যান্ডসেট আমদানির সংখ্যাও কম নয়। মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ি প্রতিবছর আমদানির প্রায় ৩০-৪০ ভাগ হ্যান্ডসেট আমদানি হচ্ছে অবৈধ পথে। যার ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে এর কিছু কিছু ব্যবহার হচ্ছে অপরাধমূলক কাজেও। ফলে এবার মোবাইল হ্যান্ডসেটেরও ডাটাবেজ তৈরি করতে যাচ্ছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)।
আজ মঙ্গলবার থেকে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) ডাটাবেজের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বিটিআরসি। কমিশনের সম্মেলন কক্ষে এর উদ্বোধন করবেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল হক। আইএমইআই নম্বর হলো ১৫ ডিজিটের একটি স্বতন্ত্র সংখ্যা, যা বৈধ মোবাইল ফোনে থাকে। একটি মোবাইল ফোনের কি-প্যাডে *#০৬# পরপর চাপলে ওই মোবাইল ফোনের বিশেষ এই শনাক্তকরণ নম্বরটি পর্দায় ভেসে উঠে।
মোবাইল ফোন কেন্দ্রীক অপরাধ কমাতে এবং হ্যান্ডসেট চুরি, অবৈধ আমদানি, নকল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কমিশন বলছে, এই প্রক্রিয়া শুরু হলে অবৈধ হ্যান্ডসেটে প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট একটি সিম ছাড়া অন্য কোন সিম কাজ করবে না। আর নির্দিষ্ট একটি সময় পর অবৈধ হ্যান্ডসেটে কোন সিমই কাজ করবে না। ফলে গ্রাহকরা বাধ্য হবেন অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহার বন্ধ করতে। আর বৈধ হ্যান্ডসেটের সংখ্যা বাড়লে সরকারের রাজস্বও বাড়বে বলে মনে করে সংস্থাটি।
জানা যায়, বাংলাদেশে যে হ্যান্ডসেটগুলো বৈধভাবে আমদানি হচ্ছে এবং স্থানীয়ভাবে যে মোবাইলগুলো অ্যাসেমব্লিং করা হচ্ছে বা উৎপাদিত হচ্ছে সেগুলোর ১৫ ডিজিটের স্বতন্ত্র আইএমইআই নম্বর নিয়ে একটি বৈধ ফোনের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। এতে মানুষ যখন মোবাইল ফোন কিনতে যাবেন তখন তারা সেই সেটটির আইএমইআই নম্বর দিয়ে জানতে পারবেন যে তাদের সেটটি বৈধ নাকি অবৈধ।
এক পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর ছাড়া এর আগে প্রতিবছরই মোবাইল আমদানির সংখ্যা ৫ লাখ করে বেড়েছে। গত বছর দেশে মোবাইল আমদানি হয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ। এর আগে ২০১৭ সালে দেশে এসেছে ৩ কোটি ৪৬ লাখ মোবাইল ফোন। ২০১৬ সালে এই সংখ্যাটা ছিল প্রায় ৩ কোটি। ২০১৫ সালে এসেছিল ২ কোটি ৬০ লাখ হ্যান্ডসেট। কিন্তু এর বাইরে প্রতি বছর অবৈধ পথে আমদানি হচ্ছে ৫০ লাখের বেশি মোবাইল ফোন। অবৈধভাবে আসা এসব মোবাইল ফোন তৈরি করেছে ‘গ্রে মার্কেট’, যা দিন দিন বড় হয়েই চলেছে। মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ মোবাইল ফোন আমদানি হয়, তার প্রায় ৩০-৩৫ ভাগ আসে অবৈধ পথে (হাতে হাতে, লাগেজ ইত্যাদি মাধ্যমে)। মোবাইল ফোন আমদানিকারক ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) সূত্রে জানা যায়, দেশে মোবাইল ফোনের বাজারের আকার ১০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে ২৫ শতাংশের বেশি অবৈধভাবে আসা মোবাইল ফোনের দখলে। এই গ্রে মার্কেটের আকার আড়াই হাজার কোটি টাকার। এ বাজারের কারণে সরকার প্রতি বছর একহাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে বৈধ পথে হ্যান্ডসেট আমদানি করে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। তাই দীর্ঘদিন ধরে তারা আইএমইআই ডাটাবেজ তৈরি ও হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের দাবি জানিয়ে আসছিলো।
বিটিআরসি জানায়, অবৈধ হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর থাকে না বা থাকলেও তা নকল। ফলে হ্যান্ডসেট চুরি হলে বা হিরিয়ে গেলে সেটি সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এ ডেটাবেস চালু হলে একের অধিক আইএমইআই ব্যবহার করতে পারবেনা চোরাকারবারিরা, এছাড়া বৈধ ডিভাইসগুলো শনাক্ত করার পাশাপাশি কোন নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেসে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে বা চুরি হয়েছে, সেটিও শনাক্ত করবে এ ডেটাবেস। এটি সম্পূর্ণ হলে পর্যায়ক্রমে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার-এন/ই/আই/আর চালু করা হবে। যেখানে হ্যান্ডসেটের বিস্তারিত তথ্য থাকবে।
বিএমপিআইএ এর যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, অবৈধ হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর থাকে না বা থাকলেও তা নকল। ফলে হ্যান্ডসেট চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে তা আর সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তবে এ ডেটাবেস চালু হলে একের অধিক আইএমইআই ব্যবহার করতে পারবে না চোরাকারবারিরা। এছাড়া বৈধ ডিভাইসগুলো শনাক্ত করার পাশাপাশি কোন নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেসে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে বা চুরি হয়েছে, তা শনাক্ত করবে এ ডেটাবেস।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, আইএমইআই ডাটাবেজ তৈরি হলে দেশে আর চোরাই পথে মোবাইল আসতে পারবে না। এলেও তা শনাক্ত করা যাবে। তিনি জানান, দেশে বৈধ পথে আমদানির চেয়ে চোরাই পথে মোবাইল আসার হার দ্বিগুণ হয়েছে। ডাটাবেজ তৈরি করা গেলে এমনিতেই চোরাই পথে মোবাইল আসা বন্ধ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন