উন্নত জীবনের আশায় ও পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে ভিনদেশে পাড়ি জমিয়ে বিভিন্ন সময়ে খুনের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। সবশেষ গত তিনদিনে দক্ষিণ আফ্রিকায় দুর্বৃত্তের হানায় ৩ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, দেশটির নর্থ ওয়েস্ট প্রভিন্সের অট্টস্যাডেল এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল (৪৯) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হন।
স্থানীয় সময় গত ২৭ জানুয়ারি রাত ১২টার দিকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। গত ২৮ জানুয়ারি নিহতের গ্রামের বাড়িতে এ খবর পৌঁছায়। এ খবরে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
নিহত ইব্রাহিম নোয়াখালীর করিবহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের নূর সোনাপুর গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের ছেলে।
নিহতের ছোট ভাই মাঈন উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান ইব্রাহিম। পরে তিনি দেশের নর্থ ওয়েস্ট প্রভিন্সের অট্টস্যাডেল শহরে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। একপর্যায়ে তার শালা জসিম উদ্দিনকেও আফ্রিকায় নিয়ে যান তিনি। জসিম যাওয়ার পর আরো একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। তারা দু’জন গত কয়েক বছর ধরে ভালোভাবেই ব্যবসা করে আসছিলেন। প্রতিদিনের মতো রোববার রাতে নিজ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন ইব্রাহিম। এসময় দোকানের পেছনের দরজা দিয়ে কয়েকজন সন্ত্রাসী প্রবেশ করে তাকে কুপিয়ে ও কয়েক রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ইব্রাহিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, তার ভাই ইব্রাহিমের বাড়িতে নতুন ঘরের কাজ চলছে। তিন মাস পর বাড়িতে আসার কথা ছিল তার। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ইব্রাহিম ছিলেন তৃতীয়। তিনি তার ভাইয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
অপর এক ঘটনায় গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার জুলু নাটাল প্রভিন্সের পিটা মেরিজবার্গ শহরে মোহাম্মদ শাহপরাণ নামে বাংলাদেশি এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।
আরাফাত চৌধুরী রাহাত নামে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানকারী আরেক প্রবাসী বলেন, ঘটনার সময় প্রবাসী বাংলাদেশির সুপার মার্কেটের (দোকান) ভেতরে স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে দোকানের পণ্যের মূল্যকে কেন্দ্র করে শাহপরাণের বেশ কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তাকে ছুরিকাঘাত করেন ওই ব্যক্তি।
নিহত শাহপরাণ ফেনী শহরের মহিপাল মধ্যম চাড়িপুর ভূঞা বাড়ির ছেলে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার টেম্বিসা অকমো এলাকায় একদল সন্ত্রাসী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা (৩০) নামে এক বাংলাদেশিকে গুলি করে।
ঘটনার দুইদিন পর রোববার (২৭ জানুয়ারি) রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত সিরাজুল ইসলাম শিবচরের সন্যাসীরচর এলাকার মৃত হাজি নুরুদ্দিন মোল্লার ছেলে।
জানা যায়, শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার টেম্বিসা অকমো এলাকায় দোকান থেকে ফেরার পথে একদল সন্ত্রাসী তাকে বহনকারী গাড়ির গতিরোধ করে। এ সময় গাড়ি থেকে তাকে জোর করে নামানোর চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। সিরাজুল ইসলাম বাধা দিতে গেলে তাকে গুলি করলে তার পেট ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়।
নিহতের ভাই মাসুদুর রহমান বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার টেম্বিসা অকমো এলাকায় আমার ভাইকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এক বছর আগে ওর কাছ থেকে আরেকবার টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছিল সন্ত্রাসীরা।
তিনি আরো বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববার রাতে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে সিরাজুল ইসলামের মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে আসে পরিবারে। পরিবারের সদস্যরা শিগগির নিহত সিরাজুল ইসলামের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন