ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক চার লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীত হচ্ছে। নতুন দুটি লেন হবে এক্সপ্রেসওয়ে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, মহাসড়কটি তিনটি প্যাকেজে ভাগ করে প্রকল্পটির বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জ্বালানি তেল খরচ যেমনি কমবে তেমনি সময়েরও সাশ্রয় হবে। কমবে যানজটের যন্ত্রণা। সচল হয়ে উঠবে দেশের অর্থনীতির চাকা। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলতে গেলে যানবাহনগুলোকে বাড়তি টোল দিতে হবে।
জানা যায়, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ও প্রধান সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য বিগত সরকারের আমলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু ওই সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সেটি আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম ছয় লেন কন্ট্রোল অ্যাকসেস এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটিকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। মার্চের মধ্যে প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ, ইউটিলিটি রি সেটেলমেন্ট কাজের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন হবে। জুলাইয়ের মধ্যে বিনিয়োগকারী বাছাই করতে রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফকিউ) আহ্বান করবে পিপিপি কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যানবাহন চলাচল করায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণ তথা এক্সপ্রেসওয়েরর কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। ২১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নতুন এক্সপ্রেসওয়েটি বর্তমানের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই নির্মাণ করা হবে। এ জন্য মহাসড়কের পাশের বিভিন্ন স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসত-ঘর স্থানান্তরের প্রয়োজন পড়বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এই এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণের লক্ষ্যে ভূমিঅধিগ্রহণসহ সড়কের পাশে বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ, টেলিফোন লাইন এবং ঘরবাড়ি সরিয়ে পুনঃস্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে তার ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল গত বছর। তবে প্রশাসনিক অনাপত্তি চেয়ে ওই সময় ডিপিপি ফেরত পাঠায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ উন্নত করতে চার লেন মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়। তবে ত্রুটিপূর্ণ নকশা, সমন্বয়হীন দুই লেনের সেতু আর অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দুর্ভোগ কমেনি। মেলেনি পণ্য পরিবহনের কাঙ্খিত সুবিধা। এতে করে মহাসড়কটি চাল লেনে উন্নীত করার পরেও খুব একটা সুফল মেলেনি। এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিনটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে এ মাসেই খুলে দেয়া হবে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু। বাকি দুটি দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু আগামী এপ্রিল মাসে খুলে দেয়া হতে পারে। এই তিনটি সেতু খুলে দিলে মহাসড়কে যাবাহনের গতি আগের তুলনায় অনেক বাড়বে, কমবে যানজট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন ১৭ হাজার যানবাহন চলাচলের বাস্তবতা নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সড়ক নির্মাণ করা হয়। দেশের দক্ষিণ ও পূর্বঞ্চল থেকে রাজধানীতে প্রবেশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধারণক্ষমতার থেকে বেশি যানবাহন যাতায়াত করায় এই মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণ তথা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়েটির দৈর্ঘ্য হবে ২১৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার এলিভেটেডওয়ে ও ১৯৮ কিলোমিটার হবে এক্সপ্রেসওয়ে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ছয় লেনের এ মহাসড়ক প্রকল্পটি নির্মাণ করা হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৮ লেন রয়েছে। সে কারনে কাঁচপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটির আওতায় সার্ভিস রোড, সাতটি ইন্টারচেঞ্জ, তিনটি সার্ভিস স্টেশন, ৬৪টি ওভারপাস, ৪৪টি ভেহিকল আন্ডারপাস, চারটি মাঝারি সেতু ও ২৮টি ছোট সেতু নির্মাণ করা হবে। এর আগে প্রস্তাবিত প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১০ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। হালনাগাদ ফিজিবিলিটি স্টাডিতে ব্যয় প্রাক্কলন ও প্রকল্পের নির্মাণকাল নতুন করে নির্ধারণ করা হবে।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে যে মূল্যে ভূমির দাম ধরা হয়েছিল, এখন তার চেয়ে তিনগুণ বেশি দামে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এতে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ যে ডিপিপি চূড়ান্ত করা হচ্ছে সেখানে ১৭ হাজার কোটি টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করা হচ্ছে। তিনটি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম প্যাকেজের আওতায় ঢাকার কাঞ্চনপুর থেকে কুমিল্লা, দ্বিতীয়টি কুমিল্লা থেকে ফেনী ও শেষ প্যাকেজটি হবে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত। এটি হবে কন্ট্রোল অ্যাকসেস এক্সপ্রেসওয়ে। মূল সড়ক হবে চার লেনের, বাকি দুই পাশে থাকবে দুই লেনের সার্ভিস রোড। সার্ভিস রোড দিয়ে স্থানীয় ধীরগতির যানবাহন চলাচল করবে। আর চারলেনের কন্ট্রোল অ্যাকেসেস রোড দিয়ে নূন্যতম ১০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন যানবাহনগুলোই চলাচলের সুযোগ পাবে। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা-নামার ব্যবস্থা থাকবে নির্ধারিত কিছু এলাকায়। দীর্ঘ ওই পথে যাতায়াত করতে টোল দিতে হবে। এ পথে সাতটি স্থানে যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারবে। যেসব জায়গায় যানবাহন থামবে সেগুলো হচ্ছে- নারায়ণগঞ্জের মদনপুর, কুমিল্লার দাউদকান্দি, ময়নামতি ও পদুয়ার বাজার, ফেনী, চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট ও সলিমপুর।
যানজটবিহীন বাধামুক্তভাবে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে এই এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়িত হলে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন