মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মহাসড়কে নৈরাজ্য চলছেই

গাড়ি দাঁড় করে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

শৃঙ্খলা ফেরেনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। সড়কে যানবাহন চালক এবং পথচারীদের নিয়ম না মানা যেন নিয়ম হয়ে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নৈরাজ্য কমেনি একটুও। গত দুইদিনে মেঘনা সেতু এলাকা থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাসচালকরা যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছেন। একই স্থানে ভিন্ন কোম্পানীর বাসের মধ্যে যাত্রী তোলা নিয়ে রেষারেষি হচ্ছে। আইন না মেনে মহাসড়কের ওপরেই অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করা হচ্ছে। মহাসড়কে অবাধে চলছে অবৈধ তিন চাকার যানবাহন। এই সবের কারনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনা যেন নিত্য নৈতিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেপরোয়া যান চলাচল আর নিয়ম না মানার কারণে প্রতিদিনই একাধিক মানুষকে জীবন দিতে হচ্ছে। হাত-পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে অনেককে।
গত এক সাপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কুমিল্লার সাথে বিভিন্ন সংযোগ সড়কগুলোতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৮ জন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীরা বলছেন, সড়কে তো কোন আইন নেই। যে যার মতো চলছে। সড়কে বিআরটিএ বা পুলিশ কেউ তাদের অরাজকতা দেখে না। কেউ তাদের বাধ্য করছে না, আইন মানতে। এতে দিন দিন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যাত্রীরা বলেন, চালকদের আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চালকদের এই বেপরোয়া আচরণ দেখার দায়িত্ব হাইওযে পুলিশের। হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা এনফোর্সমেন্টের বাইরে সচেতনতার কাজও করছি। আসলে সড়কে এত বেশি গাড়ি- কাকে কী বলব। চালকদের দোষ তো আছেই। রাস্তার মধ্যে দেখবেন মানুষ দৌড়ে পার হচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে আমরা বিআরটিএ ও পরিবহন মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এত দুর্ঘটনা কেন? তা জানতে গত দু’ দিনে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত চলাচলরত বিভিন্ন পেশার যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সড়কে পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। সড়কে নেমে সবাই রাজা। ট্রাফিক আইন আছে, তবে আইন প্রয়োগের চেষ্টার চেয়ে ঘুষের দিকেই সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ বেশি। মূলত ট্রাফিক পুলিশ ও পরিবহন মালিকদের কারণে সড়ক থেকে শৃঙ্খলা বিদায় নিয়েছে। পথচারীরাও নিয়ম লঙ্ঘন করে চলেছে। এশিয়া লাইন পরিবহনের যাত্রী এনামুল হক বলেন, ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে ড্রাইভার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে হবে। ঘাতক চালকের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের সততা ও গণমানুষের সতর্কতা জরুরি। সাধারণ মানুষের উচিত ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করা। জনগণ যাতে এসব ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরিতে পুলিশের বিশেষ ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বাসের হেলপার ধাক্কা দিয়ে যাত্রীকে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছেন এমন ঘটনা আমরা আর দেখতে চাই না। রিফাত হোসেন নামের অপর এক যাত্রী বলেন, শুধু ট্রাফিক সপ্তাহে লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও চালককে জরিমানা ও মামলা করে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে সচেতন হতে হবে, ট্রাফিক আইন মানতে হবে। গ্রীন লাইন পরিবহনের মাধ্যমে চট্রগ্রাম থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন। তার সাথে কথা হয় কুমিল্লার মাতৃভান্ডার হোটেলে গ্রীন লাইন পরিবহনের যাত্রা বিরতিকালে। তিনি বলেন, সড়কে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে যেন মানুষ ট্রাফিক আইন মেনে চলতে সচেষ্ট হয়। ঝিমিয়ে পড়া ট্রাফিক সদস্যদের মধ্যেও উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে হবে। আয়েশা আক্তার নামে এক যাত্রী বলেন, এমন চালক চাই, চালকদের বিবেক যেন অন্য চালককে প্রতিদ্ব›িদ্ব না ভাবে। গাড়ি চালানো যাদের কাছে প্রতিযোগিতা নয়। আমরা দায়িত্ববান চালক চাই। বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মোঃ আকরাম খান নিজ প্রাইভেটকারে করে নোয়াখালী থেকে ঢাকা ফিরছিলেন। যাবার পথে কুমিল্লার মায়ামী হোটেলে যাত্রা বিরতিকালে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ফিটনেস ও লাইসেন্স ছাড়া কোনো গাড়ি রাস্তায় যেন চলতে না পারে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। ড্রাইভারদের ড্রাইভিং বিষয়ক পর্যাপ্ত কারিগরি জ্ঞানের পাশাপাশি মাদকাসক্তির কুফল, ওভারটেকিংয়ের কুফল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
মহাসড়কের চান্দিনার বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে কথা হয় স্কুল শিক্ষক কামরুজ্জামানের সাথে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িচালক, বাণিজ্যিক সংস্থার গাড়িচালক, সরকারি আমলা ও মন্ত্রীদের গাড়িচালককে এক নাগাড়ে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। ক্লান্তি এবং ঘুমকাতুরে হয়ে তারা হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটায় কিংবা দুর্ঘটনার কবলে পতিত হয়। এদিকে নজর দিলে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে দেশ ও জাতি অনেকাংশে নিস্তার পাবে।
চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোঃ রেজাউল করিম বলেন, দেশের নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটেছে, কিন্তু আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। একই বিশ্ববিদ্যালয়েল ছাত্র রোমান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত সকাল প্রত্যাশা করার জন্য সবাইকে আবার জেগে উঠতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে একযোগে পাল্টাতে হবে। নইলে কোনো দিনই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। এত আন্দোলন, এত হত্যা, তার পরও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যায়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন