মোংলা বন্দরের কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বন্দরের জন্য ‘অত্যাবশ্যকীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আরও বেশি জাহাজ বার্দিংয়ের মাধ্যমে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করার পাশাপাশি নতুন নতুন পণ্য আমদানি-রফতানির দ্বার উম্মোচিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটি নিয়ে গত বছরের ১৬ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেওয়া বিভিন্ন সুপারিশ প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গতি ত্বরান্বিত করার জন্য ঢাকা-মাওয়া-মোংলা মহাসড়ক উন্নয়ন, পদ্মা সেতু নির্মাণ, খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মোংলা বন্দর এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, মোংলা ইপিজেড সম্প্রসারণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ স্থাপন ইত্যাদি কাজ এগিয়ে চলছে। এসব কাজ চলতি বছর থেকে ২০২১ সালে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের আমদানি-রফতানিপণ্য; বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের সামগ্রী মোংলা বন্দরের মাধ্যমে পরিবহনের সহজ সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া ভারত, নেপাল ও ভুটানে ট্রানজিট সুবিধা চালু হলে এ বন্দর ব্যবহারের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হবে। এতদিন মোংলা বন্দরে জেটি নির্মাণের পর থেকে নাব্যতা সংকটের কারণে একটির বেশি জেটিতে জাহাজ হ্যান্ডল করা সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি ড্রেজিং করার ফলে পাঁচটি জেটিতেই কাঙ্খিত নাব্যতা বিরাজ করছে। এরফলে একইসঙ্গে একাধিক জেটিতে জাহাজ হ্যান্ডল করা সম্ভব হচ্ছে। তবে, বর্তমানে ব্যাক-আপ ইকুইপমেন্টের স্বল্পতার কারণে একসঙ্গে দু’টির বেশি জেটিতে জাহাজ হ্যান্ডল করা সম্ভব হচ্ছে না।
বন্দরের জেটিতে গিয়ারলেস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে মোবাইল হারবার ক্রেন কেনার জন্য একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শুধু মোবাইল হারবার ক্রেন না কিনে যে সব যন্ত্র বন্দর পরিচালনার জন্য প্রয়োজন, সেগুলোর স্পেসিফিকেশন প্রণয়ন এবং যথাযথভাবে যাচাইসহ ব্যয় প্রাক্কলন করে জরুরি ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই পরামর্শ অনুযায়ী প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম গুলো হচ্ছে-১৪ সারির কন্টেইনার হ্যান্ডলিং উপযোগী ৩টি মোবাইল হারবার ক্রেন সংগ্রহ, ২টি ৩০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল হারবার ক্রেন, ২টি ৫০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপারপাস ক্রেন, ১০টি স্ট্রাডেল ক্যারিয়ার সংগ্রহ, ২টি ৩০ ক্ষমতা সম্পন্ন ফর্কলিফট ট্রাক সংগ্রহ, ২টি ৪০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ভেরিয়াবেল রিচ ট্রাক, ৪টি ৫টন ক্ষমতাসম্পন্ন লো-মাস্ট ফর্কলিফট ট্রাক এবং ১০ থেকে ১২ টন ক্ষমতা সম্পন্ন রোড রোলার সংগ্রহ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সুবির কিশোর চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অনেক বেশি জাহাজ বার্দিংয়ের মাধ্যমে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব করা হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন পণ্য আমদানি-রফতানির দ্বারও উম্মোচিত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন