ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাবা-মায়ের কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলা সাহিত্যের এই সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদ। গতকাল রোববার বাদ জোহর জেলা শহরের নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তৃতীয় জানাযা শেষে তিনটার দিকে শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল এলাকার কবরস্থানে আল মাহমুদকে দাফন করা হয়।
এর আগে নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জানাযার আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাঠে কবি আল মাহমুদের লাশ নেয়া হয়। সেখানে সর্বস্থরের মানুষ ফুল দিয়ে প্রিয় কবিকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে সমবেত হন। রাজনৈতিক বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন, সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে কবিকে চিরবিদায় দেন। এর আগে মাঠে শহীদ মিনারে চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মহিবুর রহিমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া গবেষক ও ভাষা সৈনিক মুহাম্মদ মুসা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব সভাপতি খ, আ, ম, রশিদুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি নাট্যজন মনজুরুল আলম, ঢাকার কবি কামরুজ্জামান, কবি ফরিদ ভূইয়া, কবি সাদমান শাহিদ, কবি আবিদ আজম, জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, কবির ভাগিনা লে. কর্ণেল (অব.) শাকিল, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ। পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন কবির ছেলে মীর মাহমুদ মনির। নামাজে জানাযায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সমাজের সর্বস্তরের লোকজন অংশ নেন। নামাজে ইমামতি করেন মোল্লা বাড়ি মসজিদের ইমাম মাওলানা আশেক উল্লাহ ভ‚ইয়া। নামাজে জানাযা শেষে জেলা আইনজীবী সমিতি, জেলা বিএনপি, জেলা যুবদল, জেলা ছাত্রদল, জেলা উন্নয়ন পরিষদ, মৌড়াইল গ্রামবাসী, বিডি ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ইউনেস্কো ক্লাব ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দৈনিক সমতট বার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে কবির কফিনে পুষ্পস্তক অর্পন করে শেষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
কবির ছেলে মীর মাহমুদ মনির বলেন, আমার বাবা শুধু একজন কবি নন, একজন মুক্তিযোদ্ধাও। তিনি নদ, নদী ও প্রকৃতি নিয়ে লেখার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ, নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.), ইসলাম, ক্ষুদিরাম, তিতুমীরসহ অনেক বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন। আমার বাবার ভালো গুণ ছিল, তিনি অল্পতেই সন্তুষ্ট হতেন।
এর আগে সকাল ১১টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কবি আল মাহমুদের লাশ নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নেয়া হলে সেখানে সর্বস্তরের লোকজন কবিকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় কবি আল মাহমুদের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মৌড়াইল গ্রামের পৈত্রিক নিবাসে এসে পৌঁছায়। এভাবে প্রাণহীন দেহে কবির বাড়ি ফেরা মেনে নিতে পারছেন না কেউই। তাইতো লাশ বাড়ির উঠানে রাখার পরই শুরু হয় কবির স্বজন ও শুভাকাঙ্খীদের আর্তনাদ। সবার চোখেই টলমল করছে পানি। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এ কবির বিয়োগে হাহাকারে চারপাশ।
এর আগে গত শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি আল আল মাহমুদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন