সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান একদিনের সফরে গতরাতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। বাংলাদেশ সময় আনুমানিক রাত ১০টায় যুবরাজকে দিল্লির পালাম বিমানঘাঁটিতে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সউদীর এ নেতার সফরে সন্ত্রাসবাদ ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হবে। পুলওয়ামা হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে সমঝোতা করার ঘোষণা দিয়েছে সউদী। পাকিস্তানে ২৪ ঘণ্টার সফর শেষে গত সোমবারই নয়াদিল্লি পৌঁছানোর কথা ছিল যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের। কিন্তু ইসলামাবাদ থেকে ভারত আসার ক্ষেত্রে আপত্তির মুখে তিনি নয়াদিল্লি না এসে রিয়াদ ফিরে যান।
আজ বুধবার ভারতের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরপর সেখান থেকে তার চীনে সফর করার কথা রয়েছে। চীন সফরের মাধ্যমেই তার এশিয়া সফর শেষ হবে।
বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ এবং আবাসন খাতে দিল্লি এবং রিয়াদের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে একঘরে করার প্রচেষ্টার মধ্যেই সউদী প্রিন্সের পাকিস্তান সফরকে বিপত্তি হিসেবে দেখছে না ভারত। কারণ তার এই সফরের পরিকল্পনা কাশ্মীরের পুলওয়ামার হামলার আগেই গৃহীত হয়েছে।
ভারতীয় একটি সূত্র বলছে, গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাবাসন থেকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত এবং সউদী আরবের মধ্যে সম্পর্ক আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব টিএস তিরুমূর্তি বলেছেন, রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব গাঢ় করার ইচ্ছা রয়েছে সউদী আরবের। ভারতের বিদ্যুত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো সউদী আরব। কারণ, ভারতের শতকরা ১৭ ভাগ বা তারও বেশি অশোধিত তেল এবং শতকরা ৩২ ভাগ এলপিজি সরঞ্জামের সরবরাহকারী হলো সউদী আরব। ২০১৭-০১৮ অর্থ বছরে ভারত ও সউদী আরবের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে ২৭৪৮শ’ কোটি ডলারের। এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্যে সউদী আরবের চতুর্থ বৃহৎ অংশীদার হয়ে উঠেছে এ দেশটি।
ওদিকে পাকিস্তান সফর করে দেশটি ও এর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি ভারতের সঙ্গেও বন্ধন শক্তিশালী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সউদী আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান দ্ব›দ্বযুক্ত ইস্যুগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য চেষ্টা করবেন তারা। এক্ষেত্রে সংলাপই উত্তম উপায় বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নিয়ে সউদী যুবরাজের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাপ্রধানের আলোচনা
এর আগে পাকিস্তান সেনা প্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া সফররত সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাত করে দুই দেশের প্রতিরক্ষা খাতের মধ্যে চলমান সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। পাকিস্তান-সউদী আরব সম্পর্কটিকে বর্তমান আগ্রহপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য সেনাপ্রধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বাজওয়ার পাশাপাশি পাকিস্তানে নিযুক্ত সউদী রাষ্ট্রদূত নাওয়াফ সাইদুল মালকিও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হওয়ার আগে মালকি ছিলেন পাকিস্তানে সউদী মিলিটারি এটাশে। তার সঙ্গে জেনারেল রাহিল শরিফ ও জেনারেল বাজওয়ার উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সউদী আরব সফরে গেলে দেশটি যে বিপুল আর্থিক সহায়তার কথা ঘোষণা করে তা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সহায়ক হয়। ইমরান খানের সফরের আগে গত বছর ২২ আগস্ট সউদী আরব সফর করেন জেনারেল বাজওয়া। তিনি সউদী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। তার এই সফর পাকিস্তানের অর্থনীতির ওপর শুধু ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশিলতা প্রতিষ্ঠায়ও সহায়ক হয়েছে। সূত্র : ওয়েবসাইট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন