গোলাম আশরাফ খান উজ্জ্বল
বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বড় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্কুল পালানো যার নিত্যদিনের কাজ। বাড়ির নিয়ম পড়া আর পড়া। তিনি শুরু করলেন লেখালেখি। হয়ে গেলেন উপমহাদেশের সেরা কবি। কী-নাটক, উপন্যাস, ছোট গল্প, কবিতা ও ছড়া সব জায়গায়ই তার বিচরণ। এই কীর্তিমানের জন্ম ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বাংলা। জন্মস্থান কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। বড় কবি হয়েও তিনি কিন্তু সাহিত্য সাধনে ছোটদের ভুলে থাকেননি। বাংলা সাহিত্যের খুব বড় কবি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক ও গান সব জায়গাতেই বিচরণ ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তিনি যে কত বড়মাপের কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন তা বলে শেষ করা যাবে না। রবীন্দ্রনাথকে বলা হয় চির সুন্দরের কবি ও চির নতুনের কবি। তিনি বড়দের জন্য লিখেছেন অনেক অনেক গল্প ও কবিতা। তাই বলে রবীন্দ্রনাথ ছোটদের ভুলে থাকেনি। ছোটের জন্য লিখেছেন অনেক কবিতা, ছড়া ও গল্প। খুব ছোট বেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের মাথায় সাহিত্য চিন্তা এসেছিল। তিনি যখন খুব ছোট। তখন এক বৃষ্টির দিনে বলে উঠলেন “জল পড়ে/পাতা নড়ে”। সবে মাত্র শিশু রবীর যাত্রা শুরু। ছোট বেলায় তিনি বাড়িতে একাই খেলতেন। তার সঙ্গী ছিল একটি কাঠের ঘোড়া। একদিন সে ঘোড়াটিকে কোপাতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন “সঙ্গী মামা কাটুম/হাড্ডি বসে বাটুম” রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন ১১ বছর। গৃহ শিক্ষক সেজে বাড়ির বিড়াল ছানাটিকে পড়াতে বসেন- “আমি আজ কানাই মাস্টার/পড় মোর বিড়াল ছানাটি”। রবীন্দ্রনাথের প্রথম কবিতা কিন্তু ছাপা হয় অমৃত বাজার পত্রিকায়। কবিতার নাম “হিন্দু মেলার উপহার”। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৩ বছর ৮ মাস। ষোল বছর বয়সে লিখলেন “ভানু সিংহের পদাবলী”। এসবই রবীন্দ্রনাথের ছোট বেলার কীর্তি। লিখলেন বিখ্যাত কবিতা “আমাদের ছোটনদী, ছুটি, বীরপুরুষসহ আরো কত শত কবিতা।” “আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে। বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গরু। পায় হয় গাড়ী। দুই ধার উঁচুতার ঢালু তার পারি।” আমাদের ছোট নদীর কয়েকটি চরণ মাত্র। এ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ গ্রামীণ সৌন্দর্য এত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মনে হবে শিল্পীর আঁকা ছবি। রবীন্দ্রনাথের “ছুটি” কবিতার কয়েকটি লাইন এখানে তুলে ধরা হলো- “মেঘের কোলে রোধ হেসেছে বাদল গেছে টুটি/আজ আমাদের ছুটিও ভাই/আজ আমাদের ছুটি/কী করি আজ ভেবে না পাই/পথ হারিয়ে কোন বনে যাই/কোন মাঠে যে ছুটে বেড়াই/সকল ছেলের জুটি” বীর পুরুষ কবিতায় কবি লিখলেন- “মনে করো জেন বিদেশ ঘুরে/মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে/তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে/দরজা দুটো একটু ফাঁক করে।” রবীন্দ্রনাথের ছোটদের কবিতাগুলো কতনা সুন্দর। আর চমৎকার। শুধু পড়তেই ইচ্ছে করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটেদের জন্য অনেক গল্পও লিখেছেন। “ছুটি” রবীন্দ্রনাথের একটি শ্রেষ্ঠ ছোট গল্প। এ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে ফটিক চক্রবর্তী। সে বালকগণের সর্দার। দারুণ দুষ্টু। এ গল্পে দুষ্টু ফটিকের করুন পরিণতিই মর্মস্পর্শী ভাষায় তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ। আবার আমরা কাবুলীওয়ালা নাটকে মিনিকে দেখি ভীনদেশী, এক লোককে আপন করে নিতে। এখানে মিনির শিশু চরিত্রকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন রবীন্দ্রনাথ। ডাকঘর নাটকে অমল কত করুণ সুরে। দইওয়ালাকে ডাকে। “দইওয়াল ..... দইওয়ালা ..... ও দইওয়ালা”। পোস্ট মাস্টার বড়দের গল্প হলেও ছোট গ্রাম্য বালিকা রতনকে কতনা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। “রতন কোন কথা কহিল না সে নীরবে কাঁদিতে লাগিল।” রবীন্দ্রনাথ ছোট বড় সবার জন্য সমান প্রিয়। আমাদের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাকে আমরা স্মরণ করি শ্রদ্ধার সাথে। ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বাংলা সন। এদিনে বাংলা সাহিত্যের একমাত্র নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু দিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন