বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লুটপাট করতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৬ পিএম | আপডেট : ১:৩৭ পিএম, ১৫ মার্চ, ২০১৯

সাধারণ মানুষের পেটে ছুরি মারতে আবারও সরকার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পায়ঁতারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শুধুমাত্র লুটপাটের জন্য বেআইনভাবে গ্যাসের মূল্য শতকরা ১০৩ ভাগ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যা বেআইনি ও মনুষত্বহীন পদক্ষেপ। কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, সাধারণ গ্রাহক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, সাংবাদিকরাসহ দেশের আপামর জনসাধারণ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে তা বাতিলের দাবি জানালেও নিষ্ঠুর নির্দয় সরকার তা শুনছে না। শুক্রবার (১৫ মার্চ) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির মাশুল দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। গ্যাসের দাম বাড়ালে কারখানার বিকাশে বাধাগ্রস্ত হবে। এতে কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। এমনিতে সারাদেশের ঘরে ঘরে বেকার সংখ্যা বেড়েছে এর ফলে ঘরে ঘরে বেকারের কারখানা তৈরি হবে। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গ্যাসের বাড়তি দাম ওঠাবে। পরিবহন ব্যবসায়ীরা বাড়াবেন ভাড়া। সব মিলিয়ে বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়। আবাসিকে একচুলা বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৩৫০ টাকা, দুই চুলা ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৪৪০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। গত ১০ বছরে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৬ বার।
গ্যাস সঞ্চালন মূল্যহার, গ্যাস বিতরণ মূল্যহার এবং পাইকারি গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাবগুলো অযৌক্তিক এবং বেআইনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। রিজভী বলেন, বিইআরসি আইনের ২(ঝ) উপধারা মতে এনার্জি সরবরাহ বা তৎসম্পর্কিত বিশেষ সেবার মূল্যহার এবং ৩৪ (৫) উপধারা মতে কমিশন নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না। যদি না জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনোরূপ পরিবর্তন ঘটে। গত বছরে ১৬ অক্টোবর বিইআরসি এলএনজি মিশ্রিত পাইকারি গ্যাসের মূল্যহার, বিতরণ ও সঞ্চালন মূল্যহার বৃদ্ধিসহ অন্যান্য মূল্যহার বৃদ্ধি/নির্ধারণ করে গ্যাস সরবরাহ ট্যারিফ/মূল্যহার পুনঃনির্ধারণের আদেশ দেয়। তাতে গ্যাস সরবরাহ মূল্যহার ৭ টাকা ১৭ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ৩ মাসের ব্যবধানে সঞ্চালন ও বিতরণী কোম্পানিগুলো পাইকারি গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধিসহ সঞ্চালন ও বিতরণ সেবার মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। তাতে দেখা যায়, গ্যাস সরবরাহ মূল্যহার ৮ টাকা ৬৩ টাকা থেকে ১২ টাকা ১৯ পয়সা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। ৩ মাসের ব্যবধানে পাইকারি গ্যাসসহ সঞ্চালন ও বিতরণ সেবার কোনো পর্যায়ে মূল্যহার পরিবর্তনের কোনো কারণ সৃষ্টি হয়নি, তাই বিতরণ, সঞ্চালন, কিংবা পাইকারি গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবের কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ভারতে এলএনজি আমদানি প্রতি ঘনমিটারে ৬ মার্কিন ডলার খরচ পড়লেও বাংলাদেশে ১০ ডলার খরচ পড়ছে। এটা কেন? এ টাকা যাচ্ছে রাঘব বোয়ালদের পকেটে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে বেশুমার দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের অর্থ উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত আরেকটু সুশ্রাব্য ও প্রসারিত করার জন্য গণশুনানির কথা বলছে সরকার। মূলতঃ জনগনের সঙ্গে প্রতারনা করার এটি একটি প্রহসন মাত্র।
রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়েছে তা প্রমাণিত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন স্টেট ডিপার্টম্যান্টের বাৎসরিক মানবধিকার বিষয়ে রিপোর্টে বলেছেন, “বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সরকার দুর্নীতির শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে,সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত আছে। কিন্তু কার্যত সব ক্ষমতাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে।” সুতরাং আজ আন্তর্জাতিকভাবেও শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিবৃতি আসছে। সকল সাংবিধানিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে শেখ হাসিনা শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় সম্পূর্ণ নির্দোষ বেগম জিয়াকে অন্ততঃ দু’শ বছরের প্রাচীন ও জীর্ন কারাগারে বন্দী করে রেখেছেন শেখ হাসিনা, মার্কিন স্টেটে ডিপার্টম্যান্টের রিপোর্টেও তা প্রমাণিত হলো।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশেই বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেয়া হয়েছে, তাঁকে জামিন নিয়ে টালবাহানা করছে, তাঁকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, বেগম জিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ করতে দেয়া হেচ্ছে না। মিডনাইট ইলেকশনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই বিনা চিকিৎসায় ৭৪ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ছোট্ট অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ফেলে রেখে নারকীয় শাস্তি দেয়া হচ্ছে। দেশ চলছে শেখ হাসিনার নব্য নাৎসী শাসনে। বেগম জিয়ার উপর ভয়াবহ জুলুম নির্যাতন নাৎসীবাদ-সম্ভূত নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। বেগম জিয়ার উপর সরাকরের অসহিষ্ণুতা প্রতিদিনই প্রবল হয়ে উঠছে। তিনি সরকার প্রধানের উদ্দেশ্যে বলেন, ইতিহাস বড়ই নির্মম। বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে, রাতের আধারে ব্যালট পেপারে সীল মেরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে, সংবিধানকে নিজের ইচ্ছামতো সংশোধনের দ্বারা অপরিসীম ক্ষমতাধর হয়ে উঠে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের হিসেব একদিন জনগনের কাছে আপনাকে দিতেই হবে। এখনও সময় আছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তাঁকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগে বাধা সৃষ্টি করবেন না।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং গণবিরোধী গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে দূরে সরে আসার আহ্বান জানান। অন্যত্থায় দাবি আদায়র লক্ষে রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন