প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর শনিবার থেকে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে যাতায়াতে স্বস্তি ফিরেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীরা।
সেতু চালু হওয়ার পর গতকালই এই পথের সুফল পেতে শুরু করেছেন যাত্রীরা। এখন মাত্র তিন মিনিটেই কাঁচপুর সেতু এলাকা পার হওয়া যাচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী গ্রিন লাইন পরিবহনের চালক কামরুল হাসান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গত তিন দিন ধরে কাঁচপুর থেকে মদনপুর এবং মোগড়াপাড়া থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে আটকে পড়ে থাকতে হয়েছে। কিন্তু কাঁচপুর সেতু খুলে দেয়ায় মাত্র তিন মিনিটে সেতু পার হয়ে শিমরাইলে আসতে পেরেছি। কোনও যানজট পোহাতে হয়নি। ঢাকা-কুমিল্লা এশিয়া লাইন পরিবহনের চালক তফাজ্জল মিয়া বলেন, কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতু খুলে দেওয়ার পর এ এলাকায় আর কোনও যানজট নেই। যানজট এড়িয়ে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে। গত শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তা খুলে দেয়া হয়। যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ায় স্বস্তি এসেছে পরিবহন চালক, যাত্রী ও এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকায় কোন প্রকার যানজট দেখা যায়নি। ঢাকা-চট্টগ্রামগামী যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি যানজট ছাড়াই সেতুর ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।
চালক ও যাত্রীরা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হতো। এতে ভোগান্তি পোহাতে হতো যাত্রীসহ বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিকদের। তবে সেতু চালুর পর যানজট এড়িয়ে চলা যাচ্ছে। আগের তুলনায় বেশ দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছা যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকা সড়ক প্রায় ফাঁকা। নেই গাড়ির কোনো জটলা। গাড়ি চালক আমির হোসেন বলেন, সড়কের এই অংশে যানজট কখনো ৪০ কখনো বা ৬০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যেত। সেতু উদ্বোধন হওয়ায় কাঁচপুর অংশে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। এই সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকার দীর্ঘদিনের যানজট সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী, পরিবহনের চালক ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রামগামী হানিফ পরিবহনের চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু চালু হওয়ায় যানজট কমে যাবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মোল্লা তাসনিম হোসেন জানান, কাঁচপুর সেতু ব্যবহার করে দুটি মহাসড়কের যানবাহন চলাচলের কারণে বছরজুড়েই যানজটের কবলে পড়ে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। বিশেষ করে ঈদ ও সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে দীর্ঘ যানজট হতো। কাঁচপুর সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতুটির ভিত্তি কংক্রিটের ঢালাই। পাঁচটি পিলারের ওপর নির্মিত নতুন এই সেতু ইস্পাতের গার্ডারের। ১০০ বছরের আয়ু নির্ধারণ করে নির্মাণ করা সেতুটির প্রধান ঠিকাদার ছিল যৌথভাবে জাপানি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওবায়শি করপোরেশন, শিমিজু করপোরেশন, জেএফআই, আইএইচআই। সেতুর উপঠিকাদার ছিল বাংলাদেশের মীর আকতার হোসেন। মূল সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। চার লেনের সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩৯৭ দশমিক ৫ মিটার, প্রস্থ ১৮ দশমিক ৩ মিটার।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগের কাঁচপুর সেতুর সমান উচ্চতায় এই সেতু নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। বাংলাদেশে এ প্রথম এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের কাঁচপুর সেতু পুনর্বাসনের ফলে এর আয়ুষ্কাল নির্ধারিত ৫০ বছর মেয়াদের সঙ্গে আরো ৪০ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট যেতে এখানকার দীর্ঘদিনের যানজট, দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে মানুষ। ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮ মিটার প্রস্থ দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুটি যানচলাচলের জন্য খুলে দেয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট অনেকটা কমে আসবে। ৩৯৭ দশমিক ৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেন বিশিষ্ট দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯৫০ কোটি টাকা। আগামী জুনে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবার কথা ছিল, তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় চার মাস আগেই সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতি সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে এবং খুব শিগগির এ সেতু দুটিও যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। কাঁচপুর, মেঘনা ও মেঘনা গোমতি সেতুর পাশাপাশি তিনটি চার লেনের সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম এই সড়কে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হবে জানান আরএইচডির কর্মকর্তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন