জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে। চলতি অর্থ বছর শেষে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দাড়াবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই হার ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। একই সঙ্গে এবার বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে এক হাজার ৯০৯ ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই তথ্য জানিয়েছেন। অর্থবছরের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৮ মাসের হিসাব তথ্য ধরে এই প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপন করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরে্যা (বিবিএস)। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর সামনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম ও পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন।
গত জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মত সরকার গঠন করার পর থেকেই নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলে আসছিলেন, প্রবৃদ্ধির হার এবারই আট শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। প্রায় এক দশক ৬ শতাংশের বৃত্তে ‘আটকে’ থাকার পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে। এরপর তা আট শতাংশের ঘরে পৌঁছাতে সময় লাগলো মাত্র তিন বছর।
অর্থমন্ত্রী জানান, মূলত শিল্প খাতের হাত ধরে প্রবৃদ্ধির আকার বেড়েছে। কৃষি, শিল্প ও সেবা এই তিনটি বিষয়ের উপর প্রবৃদ্ধি হিসাব উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে কৃষি খাতে চলতি অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা গত গত অর্থবছর ছিল ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১৩ দশমিক ০২ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ১২ দশমিক ০৬ শতাংশ। এছাড়া সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মন্ত্রী বলেন, এ বছর উৎপাদন খাত অনেক ভাল করছে। বছর শেষে এখাতে ১৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। এর উপর নির্ভর করে প্রবৃদ্ধির এই উল্মফন দেখতে পাবো ।
অর্থমন্ত্রী ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুযায়ী চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার দাঁড়াবে প্রায় ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায়। গত অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ২২ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লে বিনিয়োগ খুব একটা বাড়েনি। জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ হয়েছে চলতি বছরে ৩১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৩১ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারী খাতের অবদান ২৩ দশমিক ৪০ শতাংশ, আর সরকারী খাতের অবদান ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ বিষয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ এখনো সেভাবে আসেনি। আগামী বছর বিনিয়োগ আসবে। উন্মোচিত হয়নি, এমন অনেক সম্ভবনার দাড় উন্মোচন হবে। বিনিয়োগ আসতে হবে। এটা করতে যে ধরনের প্রনোদনা দেয়া প্রয়োজন, সেটা দেয়া হবে। তাদেরকে প্রতিযোগি সক্ষম করে তুলবো।
জিডিপি বৃদ্ধির কারন হিসাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, জিডিপি হিসাবের জন্য ১৫টি কম্পোনেন্টের মধ্যে প্রায় সবগুলোই উর্ধমূখী ছিল। বিশেষ করে রফতানী খাত, বিনিয়োগ, উৎপাদনশীল খাতে প্রবৃদ্ধি ভাল ছিল। প্রবৃদ্ধি যে গতি অর্জন হচ্ছে তাতে ২০২০ সালের পরের ৩ বছরে ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন করা অসম্ভব নয়।
বিনিয়োগ কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, এখানে শতাংশের হিসাবে দেখলে হবে না। দেখতে হবে ভলিয়ম। শতাংশে হিসাবে বিনিয়োগ কম হয়েছে বলে মনে হলেও টাকার অংকে অনেক বেড়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায় দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ তিনগুন বেড়েছে। কর্মসংস্থান সে হারে বেড়েছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় উৎপাদন বাড়লেও কর্মসংস্থান সেহারে বাড়ছে না। এজন্য সবাইকে দক্ষ তরে গড়ে তুলতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিষ্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব সরকারী প্রতিষ্ঠান যা বলছে, সেটাই মানতে হবে। এ হিসাব করার জন্য অন্য কোন প্রতিষ্ঠান নেই। তবে বিবিএস যে হিসাব দিয়েছে, তা বিশ্লেষন করে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, এ বছর উৎপাদন বেড়েছে, রফতানীর প্রবৃদ্ধিও ভাল। এছাড়া কমেছে আমদানীর পরিমান। ফলে এই সব উপাদান জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে হচ্ছে।
মাথা পিছু আয় : চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়াবে ১ হাজার ৯০৯ ডলার। গত বছরের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাড়াবে ১৫৮ মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি’ এর আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পোসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল। এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে সাত শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে এবং গত অর্থ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে এবং চলতি অর্থবছরে ৮.১৩ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য, খাদ্য, শিক্ষাসহ প্রায় সকল খাতে অগ্রগতি অর্জন করেছি। ১০ বছর পূর্বের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশ অনেক তফাত রয়েছে। বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্যও উত্তম জায়গা। বাংলাদেশ দিনে দিনে শুধু সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অগ্রগতির সকল খাতে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি’ এর আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, নারীদের কর্মস্থান ও নারী ক্ষমতায়নের প্রশংসা করেন এবং আগামীতে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। এর ইউএনডিপির নতুন রোডম্যাপ ২০২১-২০২৫ মেয়াদী তৈরী করা হবে। বাংলাদেশের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে জাতিসংঘ সহযোগীতা চালিয়ে যাবে বলে মিয়া সেপ্পো জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন