শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

শৃঙ্খলা ফেরেনি মহাসড়কে

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নৈরাজ্যের পাশাপাশি দুর্ঘটনা বেড়েছে

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:১৯ এএম, ২২ মার্চ, ২০১৯

কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। শৃঙ্খলা ফিরছে না ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিআরটিএ এর তদারকিতেও বিশৃঙ্খলা দূর হয়নি। অসংখ্য মামলা ও বিপুল জরিমানার পরও নৈরাজ্য রয়ে গেছে আগের মতোই। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নৈরাজ্য বন্ধে গোড়ায় হাত দেওয়া হয়নি। আগায় পানি ঢালা হয়েছে। তাই ফল মেলেনি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়া গাড়ি চলাচল, ভাঙ্গা অবকাঠামোযুক্ত রঙচটা বাসে যাত্রী পরিবহন, অপ্রাপ্তবয়স্কদের দিয়ে লেগুনা ও ইজিবাইক চালানো, ফুটপাতের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল এবং সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে মহাসড়কে তিন-চাকার যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি মহাসড়কে যানবাহন চালক এবং পথচারীদের নিয়ম অমান্য আগের মতোই চলছে। পুলিশ বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বিশেষ অভিযান চালালেও সড়কে নৈরাজ্য একটুও কমেনি।
তবে রাস্তায় কাগজপত্র ছাড়া যানবাহন এবং লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে অভিযানও চলছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ কি সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে পেরেছে ? এ বিষয়ে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের প্রভাষক শাহনেওয়াজ হাসনাত-ই-রাব্বী বলেন, সড়কে বড় দুর্ঘটনা না কমে বরং তুলনামূলক বেড়েছে। চালকদের মনোভাবেও খুব বেশি পরিবর্তন দৃশ্যমান হচ্ছে না। সড়কে গাড়ি চালনার ক্ষেত্রে বেপরোয়া মনোভাবের বহি:প্রকাশ এখনো দেখা যাচ্ছে। তবে ট্রাফিক বিভাগ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্তু দুর্ঘটনা আরও কমাতে হলে পথচারীদের রাস্তা পার হওয়ার ক্ষেত্রে আরও সচেতন করে তুলতে হবে।
গত বুধবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কে হেলমেটপরা মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীর সংখ্যা বাড়লেও বাকি সব আগের মতোই বিশৃঙ্খল রয়ে গেছে। বিপজ্জনক ওভারটেকিং বন্ধ হয়নি। যাত্রী পেতে বাসে বাসে রেষারেষি চলছে আগের মতোই। ফিটনেসবিহীন গাড়ি আবার রাস্তায় ফিরেছে। বাস চলছে চুক্তিতে। বন্ধ হয়নি যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, রাস্তা পারাপার। দখলমুক্ত হয়নি সড়ক ও ফুটপাত, যেখানে সেখানে পার্কিং, যত্রতত্র যাত্রী নামাচ্ছেন-ওঠাচ্ছেন। একই পথের ভিন্ন কোম্পানির বাসের মধ্যে যাত্রী তোলা নিয়ে রেষারেষি হচ্ছে। বাসের পাদানিতেও অতিরিক্ত যাত্রী। আইন না মেনে উল্টো পথে গাড়ি চালানো থেমে নেই। পদচারীদের জন্য ফুটওভার ব্রীজ না থাকায় যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। মুঠোফোন ব্যবহার করছেন চালকেরা।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে জনগণের মধ্যেও আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তোলার কথা বলেন ওই কর্মকর্তা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের চান্দিনায় বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা সড়কের মাঝামাঝি চলে এসেছেন। একটি লোকাল বাস এলে যাত্রীরা তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। বাসচালকেরা সড়কের মাঝখানেই বাস থামিয়ে যাত্রী নামাচ্ছেন, ওঠাচ্ছেন। পেছনে অন্য বাস, গাড়ি অনবরত হর্ন দিয়ে যাচ্ছে। নোয়াখালী এক্সপ্রেসের একটি যাত্রীবাসকে দেখা যায় চলন্ত অবস্থাতেই যাত্রীদের নামাচ্ছে, আবার চলন্ত বাসেই যাত্রীরা লাফিয়ে উঠছেন। বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী জসীম উদ্দিন বলেন, বাস যেখানে থামার কথা সেখানে না থামিয়ে রাস্তার মাঝপথে দাঁড়ালে লোকজন কী করবে ? আমাদের বাধ্য হয়েই সড়কের মাঝপথে গিয়ে ওঠা লাগছে।
যাত্রীদের দাঁড়ানোর জন্য নির্ধারিত কোনো জায়গা বা স্টপেজ নাই। তাই সবাই সড়কের ওপরেই দাঁড়াচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাধাইয়া কলাগাঁও কারিগরি কলেজের সামনে হোমনা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে ক’য়েকজন যাত্রী তুললো। অথচ বাস দাঁড়ানোর নির্ধারিত কোন জায়গাই নয় এটি। মহাসড়কের নূরিতলা পাহাড়িকা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহীবাস গতি কিছুটা কমিয়ে চলন্ত বাসেই যাত্রী তুলতে দেখা গেল। কোনো বাসই নির্ধারিত স্থানে গিয়ে থামছে না। অথচ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির অন্যতম ছিল বাসে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না করা। অধিকাংশ বাস ছিল যাত্রীতে বোঝাই। বাসগুলোর পাদানিতে অনেক সময় গেটের বাইরেও যাত্রীদের ঝুলতে দেখা যায়। অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হলেও এসব বাসে আদায় করা হয় সিটিং সার্ভিসের ভাড়া।
দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ক’য়েক মাসেই সড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থা পাল্টে দেওয়া যাবে- বিষয়টি এমন নয়। তবে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। মোটরসাইকেল চালক-আরোহীদের হেলমেট পরার হার এখন প্রায় ৯০ ভাগ। বাসের দরজাও বেশিরভাগ বন্ধ থাকছে। উল্টোপথে গাড়ি চালানো বা ট্রাফিক নির্দেশনা অমান্যের ঘটনাও অনেকটা কমেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন