বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলা ফিচার

ইউরোপের নতুন রাজা

প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইমামুল হাবীব বাপ্পি
২০০৯ থেকে ২০০৫। টানা ৬ বছর ইউরোপিয়ান শীর্ষ ফুটবলে দুই মহারথির বীরত্ব দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। বার্সেলোনার হয়ে একের পর এক সাফল্য এনে এই তালিকায় শীর্ষে আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি। আর দলের সাফল্য তেমন বলার মত না হলেও আপন আলোয় উজ্জ্বল ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এসময় দু’জনই সমান তিনবার করে হন ইউরোপের শীর্ষ গোলদাতা। তাঁদের ভীড়ে এবার নতুনভাবে নিজেকে জানান দিলেন একজন ল্যাটিন আমেরিকান। আরেক ল্যাটিন আমেরিকান মেসিরই ক্লাব সতীর্থ তিনি। তবে এই তারকার তারকা খ্যাতি অর্জনে তাঁর পাশে থেকে পূর্ণ সহযোগিতা করে গেছেন মেসিই। পেয়েছেন নেইমার-ইনিয়েস্তাদেরও সহযোগিতা। দলের জয়ই যাদের কাছে সব তখন ‘গোলটা স্ট্রাইকার দিয়েই হোক না’ ধরনের মন্ত্রে দিক্ষিত হয়ে একের পর এক গোল করে দলের জয়ের পেছনে আবদান রেখেছেন তিনি। মেসির কাঁধ থেকেও যেন আক্রমনের শেষ ফিনিশিংয়ে বলটি জালে পাঠানোর দায়ীত্বটা অনেকটা নেমে গেল এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের উপস্থিতিতে। নাম লুইস সুয়ারেজ। পুরো নাম লুইস আলবার্তো সুয়ারেজ দিয়াজ।
ইউরোপিয়ান শীর্ষ ফুটবলে তার আগমনটাও ছিল রাজকীয়। ডাচ ফুটবল ক্লাব আয়াক্সে ৫ বছরের চুক্তিতে নাম লেখানোর পর দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মত বড় আসরে। অভিষেকেই গোল করে দলের জয়ে অবদান রাখেন সুয়ারেজ। প্রথম মৌসুমেই ৩৩ ম্যাচে করেন ১৭ গোল। দলের হয়ে ধারাবাহিক নৈপূণ্যের দরুণ এই স্ট্রাইকারের ওপর নজর পড়ে ইউরোপের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দল লিভারপুলের। ৫ বছরের চুক্তিতে আনফিল্ডের দলে যোগ দেন তিনি। চেয়ে নেন প্রিয় ৭ নম্বও জার্সিটা। সেখানে লাল জার্সি গায়ে আলো ছড়াতে থাকেন ধারাবাহীক ভাবেই। এর মধ্যে ২০১১ কোপা আমেরিকায় হন প্লেয়ার অব দ্যা টুর্নামেন্ট। ক্লাবের হয়ে প্রতিনীয়ত আলো ছড়ালেও সেবার ষষ্ঠ হয়ে লিগ শেষ করে তার দল। তবে লিগ কাপ জেতাতে ছিল তার ভুমিকা। তবে বিতর্ক সব সময়-ই ছায়া সঙ্গি হয়েই থেকেছে ২৯ বছর বয়সির। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড খেলোয়াড় পাত্রিক এভরার বিরুদ্ধে বর্ণবাদের শিকার হন তিনি। ৮ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার খড়ক জোটে তার ভাগ্যে। সাথে ৪০ হাজার ডলার জরিমানাও গুনতে হয় তাকে। পরের মৌসুমে হয়েছিলেন লিগের দ্বিতীয় শীর্ষ গোলদাতা (২৩)। পরের মৌসুমে সুয়ারেজ ছিলেন আরো শানিত। ৩১ গোল করে অর্জন করেন প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ গোলদাতার খেতাব। একই মৌসুমে রোনালদোর সাথে হন ইউরোপীয়ান লিগে শীর্ষ গোলদাতার খেতাব। চোটের কারণে সেবার দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে ছিলেন তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি লিওনেল মেসি।
ঊল পায়ে ক্ষিপ্রতা, অল্প জাগায় ও অল্প সময়ে গোলের সুযোগ তৈরীর সক্ষমতা এবং গোলমুখে নিখুত ফিনিশিংয়ের দরুন বার্সেলোনা ক্লাব কর্তাদের নজর পড়েন সুয়ারেজ। লিভারপুল থেকে ঐ মৌসুমই ৯৫.৬ মিলিয়ন ইউরোতে তাকে দলে ভেড়ায় বার্সা। এর ফল পেতে অবশ্য একটু অপেক্ষা করেতে হয়েছে কাতালান দলকে। বিশ্বকাপে ‘কামড় কান্ডের’ কারনে আবারো দীর্ঘ দিন মাঠের বাইরে থাকতে হয় তাকে। এরপর কাতালান জার্সি গায়ে অবশ্য ‘সুবোধ’ বালকের ভুমিকায়-ই দেখা গেছে তাকে। তবে কাতালান জার্সি গায়ে অভিষেকটা নিশ্চয় ভুলে যেতে চাইবেন স্বয়ং সুয়ারেজ নিজেই! এল ক্লাসিকোর মত ম্যাচে অভিষেক ম্যাচে নিতে হল হারের স্বাদ। দলের হয়ে প্রথম গোলটি পেতেও অপেক্ষা করেতে ‘বার্সা নাম্বার নাইন’কে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ ৮ ম্যাচ। এরপর ধীরে ধীরে মেসি-নেইমার-ইনিয়েস্তাদের সাথে মাঠে গড়ে তোলেন ফুটবলীয় সখ্যতা। সেই সখ্যতা এমনই শৈল্পিক তাতে মুগ্ধ ফুটবল ভক্তরা। যে সখ্যতা প্রতিপক্ষের জন্য কতটা ভয়ের তাও দেখিয়ে চলেছেন প্রতিনীয়তই। গত মৌসুমে দলের ট্রেবল জয়ে তার ছিল অন্যতম ভুমিকা। ফিফা বর্ষসেরার তালিকায় গতবার মেসি-নেইমার-রোনালদোরা থাকলেও অনেকে রোনালদোর স্থলে সুয়ারেজের নাম থাকাকেই যুক্তিযুক্ত মনে করেছিলেন। আর চলতি মৌসুমকে তো সুয়ারেজ অন্য আলোয় আলোকিত। হয়েছেন ইউরোপিয়ান ফুটবলে লিগের শীর্ষ গোলদাতা। সব প্রতিযোগিতা মিলের ক্লাবের হয়ে ৬০ গোল তার নামের পাশে। এখনো একটি ম্যাচ বাকি। সেই ম্যাচেও নিশ্চয় সংখ্যাটা বাড়িয়ে নেবেন সময়ের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকার।
সদ্য সমাপ্ত লা লিগার ফাইনাল ম্যাচে গ্রানাডার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন সুয়ারেজ। চলতি মৌসুমে এটি ছিল তার ষষ্ঠ হ্যাটট্রিক। এর মধ্যে দিপোর্তিভো ও স্পোর্টিং গিজনের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে ৪টি করে গোলও আছে তাঁর নামের পাশে। বার্সার হয়ে প্রথম ৭ ম্যাচ গোলহীন থাকা এই তারকা শেষ ৫ ম্যাচে একাই করেন ১৪ গোল। মৌসুমের শেষদিকের এই লম্ফন শুধু স্প্যানিশ লা লিগাতেই নয় ইউরোপিয়ান শীর্ষ লিগগুলোর হিসাবেও সর্বোচ্চ গোলদাতা বার্সেলোনা স্ট্রাইকার। ফলে পিচিচি ট্রফির পাশাপাশি এবারের ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুটও উঠছে সুয়ারেজের হাতে। গোল স্কোরিংয়ের কারনে একসাথে এই দুটি ট্রফি জয়ের রেকর্ড আছে শুধুমাত্র লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রোনালদো লিগে এবার গোল করেছেন ৩৫টি, আর চোটের কারনে ২ মাস মাঠের বাইরে থাকা মেসি ২৬ গোল করে লিগের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। লিগ অনুযায়ী গোল প্রতি পয়েন্টের হিসেবে সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারীই জেতেন গোল্ডেন বুট। লুইস সুয়ারেজের এটি দ্বিতীয় অর্জন। ২০১৩-১৪ মৌসুমে লিভারপুলের হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানোর পর ‘স্বর্ণ জুতা’র এই স্বীকৃতি পেয়েছিলেন উরুগুইয়ান তারকা।
ইউরোপিয়ান শীর্ষ লিগের গোলদাতা ও অর্জিত পয়েন্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন