শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

কক্সবাজার উন্নয়নে গৃহীত মাস্টারপ্ল্যানে ব্যাপক অসঙ্গতি

ভোগান্তিতে নাগরিক সমাজ, বাস্তবায়নে হিমশিম খাচ্ছেন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

কক্সবাজার থেকে বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৫২ পিএম | আপডেট : ১:৪৬ পিএম, ৬ এপ্রিল, ২০১৯

কক্সবাজারের পর্যটন এলাকা ঘিরে গৃহীত মাস্টারপ্ল্যানে ব্যাপক অসঙ্গতির কারণে ভুক্তভোগী ভূমি মালিকরা নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে। একই সাথে এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে হিমশিম খাচ্ছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের সাথে ২০১৩ সালে অনুমোদিত মাস্টারপ্ল্যানের বিস্তর গরমিল দেখা যাচ্ছে। এতে করে পর্যটন শহর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকার ভূমি মালিকরা নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

সেলটেক নামের একটি বেসরকারি সংস্থা ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চেষ্টা করে তৈরী করেছিলেন কক্সবাজার পর্যটন এলাকার মাস্টার প্ল্যানটি।এর সাথে এখন বাস্তবতার নিরিখে অনেক গরমিল দেখা যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে অনেক ধরনের পরিবর্তন এবং উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

কয়েকজন ভূমি মালিক জানান, তারা নিজেদের মালিকানাধীন ভূমি সংস্কার ও সেখানে ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাভে ব্যর্থ হচ্ছেন। অথবা ২০১৩ সালের অনুমোদিত মাস্টার প্লান এর সাথে বর্তমান উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপগুলোর গরমিলের কারণে তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ভূমি মালিকরা জানান, মাস্টার প্লানে কিছু এলাকাকে বাণিজ্যিক এলাকা বলে দেখানো হলেও তা বাস্তবে আবাসিক এলাকা। আবার কিছু এলাকাকে প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা বলে উল্লেখ করা হলেও তা বাণিজ্যিক এলাকা।

কক্সবাজার শহরের পরিচিত টেকপাড়ার উকিলপাড়া নামে খ্যাত এলাকাটি একটি উন্নত মানের আবাসিক এলাকা হলেও এটিকে মাস্টারপ্ল্যানে দেখানো হয়েছে বাণিজ্যিক এলাকা বলে। আবার শহরের কচ্চইপ্পা পুকুরের পূর্ব এলাকাকে প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা বলে মাস্টারপ্ল্যানে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে একটি বিরাট আবাসিক এলাকা। সদর উপজেলার লাগোয়া উত্তর পাশের এলাকাটি একটি আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে। সেটিকেও মাস্টার প্ল্যানে প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও টেকনাফ কক্সবাজার-আরাকান সড়কের সংযোগস্থল লিংক রোড এলাকাটি একটি বাণিজ্যিক এলাকা হলেও সেটিকে মাস্টার প্ল্যানে উল্লেখ করা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা হিসেবে। এতে করে ওই এলাকার ভূমি মালিকরা ঘরবাড়ি দোকানপাটসহ ভবন নির্মাণে কউকের অনুমোদন পেতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন। এ সমস্যায় এখন কক্সবাজার শহরের শত শত নাগরিক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

মাস্টার প্ল্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, বাণিজ্যিক এলাকায় ভবন নির্মাণ করতে দুই হাজার এক শত পঞ্চাশ বর্গফুটের জমিতে ২৫০ বর্গফুট পার্কিং রাখতে হবে। আর আবাসিক এলাকায় তিন হাজার দুইশত আটাশ বর্গফুট জমির জন্যও ২৫০ বর্গফুট পার্কিং রাখার বিধান করা হয়েছে। এখানেও আবাসিক এলাকাকে বাণিজ্যিক এলাকা বলে উল্লেখ করায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন আবাসিক এলাকার ভূমি মালিকরা।

এদিকে মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিম পাশে শহরের নাজিরারটেক থেকে নিরিবিলি হ্যাচারী পর্যন্ত জোয়ার ভাটা থেকে এক হাজার ফুট জায়গা খালি রেখে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার নিরিবিলি হ্যাচারী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দেড় হাজার ফুট জায়গা ছেড়ে দিয়ে স্থাপনা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে মাস্টার প্ল্যানে।

অথচ এই পরিমাণ জায়গা ছেড়ে দিলে সৈকত এলাকায় কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ আর থাকে না। এতে করে একদিকে বিস্তীর্ণ মেরিন ড্রাইভ সড়ক এলাকায় পর্যটক আকর্ষণের জন্য কোন ধরনের স্থাপনা যেমন নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ওইসব এলাকার ভূমি মালিকরা। পাশাপাশি এখন যে দেশ-বিদেশের লাখ পর্যটক কক্সবাজার আসছেন সৈকতের সৌন্দর্য হারিয়ে এই পর্যটক স্রোত থেমে যাবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

২০১৩ সালের অনুমোদিত এই মাস্টার প্লান বর্তমান অবস্থানের সাথে মিল নেই বলে উল্লেখ করে বাস্তবতার নিরিখে এ মাস্টার প্ল্যানের সংশোধন দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজারের অভিজ্ঞ ও বিশিষ্টজনরা।
এছাড়াও বাস্তবতার সাথে নানা অসঙ্গতিপূর্ণ এই মাস্টার প্ল্যানের কারণে বর্তমান কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

এখন জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে বাস্তবতার নিরিখে অসঙ্গতি গুলো দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করারও দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড মেম্বার প্রকৌশলী এম বদিউল আলম বলেন, অবশ্যই বাস্তবতার নিরিখে, বৃহত্তর জনস্বার্থে মাস্টার প্ল্যানের এসব অসঙ্গতির সংশোধন করে জন ভোগান্তি লাঘব করা খুবই প্রয়োজন।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত ফোরকান আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, হ্যাঁ, আগের মাস্টার প্ল্যানের বেশ কিছু অসঙ্গতি নজরে এসেছে। সেগুলো সংশোধন করে নতুন করে মাস্টার প্লান এর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই নতুন মাস্টার প্ল্যান পাওয়া যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন