পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে নতুন করে মাষ্টার প্ল্যান তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত ১১ তম একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানাগেছে। একইসাথে কক্সবার জেলা প্রশাসককে সমন্বিত উদ্যোগে কক্সবাজারের জন্য আরো একটি মাষ্টার প্ল্যান করার নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার ১৬ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রী ও একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত বর্তমান সরকারের ১১ তম একনেক সভায় এ নির্দেশ দেয়া হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই তথ্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান দেশের বাইরে থাকায় তার পক্ষে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন একনেক সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন।
কক্সবাজারে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে সচিব নূরুল আমিন বলেন, ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, তাদের শহরের নতুন করে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হবে আগে। তারপর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলোর মান খুবই উন্নত হতে হবে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনও একটি মাস্টারপ্ল্যান করবে। যেন শহরের যত্রতত্র বিল্ডিং গড়ে না ওঠে।’ একনেকের ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী মূলতঃ কক্সবাজারের বিভিন্ন প্রসংগ নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা করেন ও নির্দেশনা দেন।
একনেকের সভায় কক্সবাজারের অন্যান্য আলোচিত ও অনুমোদিত প্রকল্প গুলো হলো: কক্সবাজার শহরের জিরো পয়েন্ট 'হলিডে মোড় থেকে বাজারঘাটা-লারপাড়া (বাস টার্মিলাল) পর্যন্ত সড়ক সংস্কার ও প্রসস্তকরণ প্রকল্পটি (একনেক) অনুমোদন দেয়া।
এতে আরো রয়েছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত রক্ষায় ঝাউবন রক্ষা করা ও নতুন ঝাউবাগান সৃজন করার নির্দেশ।
কক্সবাজার জিরো পয়েন্টের 'হলিডে মোড়-বাজারঘাটা-বাস টার্মিনাল (লারপাড়া)' প্রকল্পটি সহ একনেকের এ সভায় প্রায় ৫ হাজার ১৪২ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ৮টি প্রকল্প মঙ্গলবার অনুমোদন করা হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার দেবে ৪ হাজার ১২৯ কোটি ৮১ লাখ এবং বিদেশি ঋণ থেকে আসবে প্রায় ১ হাজার ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো:
(১)গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘হলিডেমোড়-বাজারঘাটা-লারপাড়া (বাসস্ট্যান্ড) প্রধান সড়ক সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ’ প্রকল্প
(২) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্প
(৩) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক সিটি-২ এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ’ প্রকল্প
(৪) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প
(৫) কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন’ প্রকল্প
(৬) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায় (তৃতীয় সংশোধনী)’ প্রকল্প
(৭) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদারকরণ’ প্রকল্প
(৮) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প।
এছাড়া একনেক সভায় উত্থাপিত হলেও দুটি প্রকল্প অনুমোদন পায়নি। সেগুলো হলো- রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক এবং ঢাকার মধ্যে শাটল ট্রেন চালুর লক্ষ্যে ডিইএমইউ (ডেমো) সংগ্রহ’ প্রকল্প এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘নির্বাচিত ছয়টি উপজেলায় স্টেডিয়াম নির্মাণ’ প্রকল্প।
একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন-কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী ড. নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য ২০১৩ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কর্তৃক কক্সবাজার উন্নয়নে প্রণীত মাষ্টার প্লানটিতে ইতিমধ্যে নানা ধরনের অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে এই মাষ্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন অসঙ্গতি দেখাদেয়।
সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাব এ বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। ২০১৩ সালে প্রণীত কক্সবাজার উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যানে দেখা দিয়েছে নানা অসঙ্গতি এই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কউক চেয়ারম্যান কর্নেল ফোরকান আহমদ বলেন বাস্তবতার নিরিখে ২০১৩ সালে প্রণীত মাষ্টার প্লানে নানা অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। তাই নতুন করে মাস্টার মাষ্টার প্লান করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধান্যবাদ জানা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন