জনবল সংকটের কারণে চরম ভাবে ভুগছে রাজবাড়ী-ফরিদপুর ও রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রেলরুটের ২২ টি ষ্টেশন। এ দুটি রেলরুটে মোট ৬৪ জন ষ্টেশন মাস্টার থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১৩ জন। এর মধ্যে ১৫ টি রেল ষ্টেশনে নেই ষ্টেশন মাস্টার। জনবল সংকটে নিরাপত্তার অভাবে ঝুকিপূর্ণ ও বন্ধের উপক্রম হয়ে উঠেছে।
রাজবাড়ীর কালুখালী ও গোপালগঞ্জ রেলপথ উদ্বোধন হয় ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর এবং রাজবাড়ী-ফরিদপুর রেলপথ উদ্বোধন করা হয় ২০১৪ সালের শেষের দিকে। কিন্তু এই রেলপথে দুটিতে ষ্টেশন মাস্টারসহ অন্যান্য পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি দীর্ঘদিন। ডেপুটিশনে জনবল দিয়ে কয়েকটি ষ্টেশনে কাজ চালানো হচ্ছে।
রাজবাড়ী রেল ষ্টেশন মাস্টাররে র্কাযালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী-ফরিদপুর রেলপথে ৭টি ষ্টেশন রয়েছে। ষ্টেশনগুলো হলো পাঁচুরিয়া, খানখানাপুর, বসন্তপুর, আমিরাবাদ, অম্বিকাপুর ও ফরিদপুর। ৩০ কিলোমিটার দুরত্বের রেলপথের শুধুমাত্র রাজবাড়ী, পাঁচুরিয়া ও ফরিদপুর ষ্টেশন মাস্টার রয়েছে। রাজবাড়ীতে ৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছে ২জন, ফরিদপুরে ৩টি পদের বিপরীতে ডেপুটিশনে ১ জন কাজ করছেন। পাঁচুরিয়াতে দুটি পদে বিপরীতে দুইজন ষ্টেশন মাস্টার কর্মরত রয়েছে। অপর ৪টি রেলস্টেশনে কোনো ষ্টেশন মাস্টার নেই।
সূত্রটি আরো জানায়, লোকসানের কারণে ১৯৯৮ সালে রাজবাড়ী-ফরিদপুর রেলপথ বন্ধ করে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেললাইন পুনঃস্থাপন কাজ শুরু করে ২০১৪ সালে আগস্টে পরীক্ষামূলক ভাবে রাজবাড়ী-ফরিদপুর রেলপথ চালু করা হয়। এ রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনটিকে গত বছর মেইল ট্রেনে রূপান্তর করা হয়েছে।
অপরদিকে রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথে রেল ষ্টেশন রয়েছে ১৫ টি। ষ্টেশনগুলো হলো সূর্যনগর, বেলগাছি, কালুখালী, রামদিয়া, বহরপুর, আড়কান্দি, নলিয়াগ্রাম, মধুখালী, ঘোড়াখালী, সাতৈর, বোয়ালমারী, সস্রাইল, বেসপুর, কাশিয়ানী ও ভাটিয়াপাড়া। এই পথের দূরত্ব ৯৪ কিলোমিটার। রেলস্টেশনগুলোর মধ্যে স্টেশন মাস্টার রয়েছে ৪টিতে। স্টেশনগুলো হলো কালুখালী, মধুখালী, বোয়ালমারী ও ভাটিয়াপাড়া। বাকী ১১ টি রেলস্টেশনে কোনো স্টেশন মাস্টারের পদই মঞ্জুরী হয়নি। সংকট রয়েছে অন্যান্য জনবলের।
রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথটি ১৯৯৭ সালে ১৯ আগস্ট থেকে রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় রেললাইন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে রেললাইন পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া রেললাইন উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করতো। গত বছরের ১৫ আগস্ট থেকে ট্রেনটি তুলে দেওয়া হয়। এখন প্রতিদিন ১টি মেইলট্রেন এই রেলপথে নিয়মিত যাতায়াত করছে।
রাজবাড়ী রেলস্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বলেন, রাজবাড়ী রেলস্টেশনে ১জন ষ্টেশন মাস্টার ও ২জন সহকারী ষ্টেশন মাস্টারের থাকলেও কর্মরত আছেন ২জন। এছাড়া পোর্টার, বিশ্রামাগার এটেনডেন্ট, কেবিনম্যান, ট্রেনের ক্লাক ও স্টেশন সহকারী পদেও সংকট রয়েছে। ষ্টেশন চালাতে শুধু ষ্টেশন মাস্টার নয় বিভিন্ন দপ্তরে জনবল প্রয়োজন। ষ্টেশনগুলোতে মাস্টার না থাকায় সেখানে ট্রেন ক্রসিং করা যায় না। অন্য স্টেশনে ক্রসিং করতে সময়ের অনেক অপচয় হয়।
রেলওয়ের পাকশি বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, জনবল না থাকায় রেলষ্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ইতি মধ্যে পূর্ব অঞ্চলের ১২৪ টি রেলষ্টেশনের মধ্যে ৫২ টি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েছে। পুনরায় স্থাপিত রেলপথে জনবল এখনো মঞ্জুরিই করা হয় নাই। ষ্টেশন মাস্টার না থাকায় ষ্টেশনগুলো নিরাপত্তায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তেমনি ষ্টেশনের আশেপাশের গেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আবার ষ্টেশনে টিকিট বিক্রি না হওয়ায় সরকারের রাজস্ব কম হচ্ছে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আইনী জটিলতায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বন্ধ ছিলো। সম্প্রতি রেলওয়ের স্টেশন মাস্টারসহ বিভিন্ন পদে একটি বড় নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
চলতি এপ্রিল মাসের ৪ তারিখে রাজবাড়ী রেল ষ্টেশন পরিদর্শনে আসেন রেলমন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন। ওই সময় তিনি জানান, রেল যোগাযোগে সুদিন ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার কাজ করছেন। ২০১৫ সালে একটি মামলাজনিত জটিলতার কারনে আর কোন নিয়োগ হয়নি রেল বিভাগে। মামলার জটিলতা শেষ হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন