বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ওষুধ না থাকা ও জনবল সংকটে ৮৫ হাজার পরিবারের পশুর চিকিৎসা মিলছে না

প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এএফএম ফারুক চান মিয়া, ছাতক (সুনামগঞ্জ) থেকে

সুনামগঞ্জের ছাতক প্রাণী সম্পদ অফিসে প্রয়োজনীয় উপকরণ, ওষুধ, চিকিৎসক ও তীব্র জনবল সংকটে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার প্রায় ৮৫হাজার পরিবার। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাঁস-মোরগ, গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া, কবুতর-কোয়েল খামারসহ অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর মালিকরা। প্রাণী সম্পদ অফিসের দেয়া তথ্যে মতে, ১৩ইউনিয়নও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ছাতক উপজেলায় গরুর (রেজিঃ) খামার ১৮টি ও ছোট-বড় মিলে আরো রয়েছে ৫০/৬০টি। ছাগলের খামার ৩টি, হাঁসের খামার ২শ’টি ও মোরগের খামার রয়েছে ৩শ’টি। এছাড়া উপজেলায় মোট গরু রয়েছে প্রায় ২লাখ, মহিষ ৫হাজার, ছাগল ৬হাজার, ভেড়া ৩হাজার, হাঁস ২লাখ, মোরগ ৩লাখ, কবুতর ৪হাজারসহ অন্যান্য গৃহপালিত পশু-পাখি রয়েছে আরো প্রায় লক্ষাধিক। সরকারি হিসেবে গৃহপালিত প্রাণীর সংখ্যা মোট ৭লাখ ১৮হাজার হলেও এর চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে এ উপজেলায়। এসব গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগীসহ গৃহপালিত প্রাণীকে সম্পদে পরিণত করতে সরকার প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় গঠন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রতি উপজেলায় সাবেক পশু হাসপাতালকে প্রাণী সম্পদ অধিদফতর নামে নামকরণ করে এর মাধ্যমে কৃষকদের গবাদি পশু ও খামরিদের পরামর্শ প্রদান, ওষুধ বিতরণসহ সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে। সরকারের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে- কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উন্নতজাতের গবাদি ও হাঁস-মুরগী উৎপাদন করা। যাতে-দেশে ডিম, দুধ ও মাংশের চাহিদা বৃদ্ধি করে বিদেশে রফতানি করা যায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় উপকরণ, জনবল, ওষুধ ও ডাক্তার সংকটে পিছিয়ে পড়েছে এখানের ডেইরি ও পোল্ট্রি খামারিসহ কৃষকরা। দোলারবাজার, জাউয়া, দক্ষিণ খুরমা, ভাঁতগাঁও, সিংচাপইড় ও ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নের একাধিক কৃষক জানান, তারা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে আমেরিকান ব্রাহমা জাতের গরু উৎপাদন করতে আগ্রহী। কিন্তু এখানে একজন ভেটেরিনারী ডাক্তার বিশাল এলাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউপির কৃষকরা বলেন, সুরমা নদী ও দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার ফলে পশু-পাখি নিয়ে হাসপাতালে আসা-যাওয়া যেমনি কষ্টকর ও ব্যয় বহুল, তেমনি সদরে এসে ডাক্তার নেয়া সময় সাপেক্ষ। অনেক সময় দেখা যায় ডাক্তার নিয়ে বাড়ি পৌঁছার আগেই পশু মারা যায়। এজন্যে তারা প্রত্যেক ইউনিয়নের একজন করে পশু চিকিৎসক ও পরামর্শক নিয়োগের জন্যে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। এখানে ১১টি পদের মধ্যে ৭টি পদ দীর্ঘদিন থেকে শূন্য রয়েছে। মাত্র চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়েই হযবরল অবস্থায় চলছে অফিসের কার্যক্রম। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ১জন, ভেটেরিনারী সার্জন ১জন, ভেটেরিনারী কম্পিউটার ১জন, এফএএআই ১জনসহ ৪জন কর্মরত থাকলেও ভিএফএ ৩জন, ইউএলএ ১জন, অফিস সহকারি ১জন, ড্রেসার ১জন, এমএলএসএস ১জনসহ অফিসের প্রধান ৭টি পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাক্তার মোর্শেদ উদ্দিন আহমদও ভেটেরিনারী সার্জন ডাক্তার আব্দুস শহীদ হোসেন জানান, এখানের অধিকাংশ পদ শূন্য থাকায় বিপুল জনগোষ্ঠির প্রাণী সম্পদ চিকিৎসায় তারা হিমিশিম খাচ্ছেন। এছাড়া পৌরসভার নিজস্ব প্রাণী সম্পদ অফিসার না থাকায় পৌরবাসীকে তারা অতিরিক্তি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এখানে প্রয়োজনের তুলনায় ওষুধ খুবই কম বরাদ্দ আসে। আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট ও রয়েছে এখানে। তবে ফিল্ড অফিসার না থাকায় ১৩ইউনিয়নের বিশাল এরিয়ায় গিয়ে সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ৭টি পদ শূন্য থাকায় দিন-রাত তারা ব্যবস্থাপত্র, চিকিৎসা সেবা, ওষুধসহ মোবাইল ফোনে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন