(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
নামাজ কিভাবে এবং কোন কোন সময় এবং কয় রাকায়াত করে পড়তে হবে এবং এর জন্য কি কি নিয়ম-নীতি, আদর্শ এবং শর্তাবলী রয়েছে, এসবগুলোকে আল-কুরআনের একটি আয়াতে সমষ্টিগতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা যুদ্ধের সময় নামাজ আদায়ের পদ্ধতি সংক্রান্ত আলোচনার প্রাক্কালে পেশ করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, “তোমরা সালাতের প্রতি যতœবান হও, বিশেষত : মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে। যদি তোমরা আশঙ্কা কর তবে পথচারী অথবা আরোহী অবস্থায়, যখন তোমরা নিরাপদ বোধ কর, তখন আল্লাহকে স্মরণ করবে, যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না।” (সূরা বাকারাহ : রুকু-৩১)
এই পবিত্র আয়াতে একথা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে যে, আমরা কিভাবে নামাজ আদায় করব, কোন সময় আদায় করব, কত রাকাআত আদায় করব। আল্লাহপাক স্বয়ং এভাবেই শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআনুল কারীমের এই সংক্ষিপ্ত বিবরণের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ এবং কর্মকাÐের বাস্তব প্রয়োগ আহাদীসে নববীর মাঝে বিস্তৃতভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং এই শিক্ষা বংশানুক্রমিক মুসলমানদের মাঝে চালু রয়েছে। তাছাড়া কুরআনুল কারীমে নামাজের সাথে সংশ্লিষ্ট আমল ও উপাদানগুলোর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
নামাজের পাবন্দি ও সচেতনতা :
এ পর্যায়ে সর্বপ্রথম কথা হচ্ছে এই যে, আমরা নামাজসমূহ পাবন্দির সাথে আদায় করব। এর প্রতি সচেতন থাকব এবং এর উপর সামগ্রিক তৎপরতা গ্রহণ করব। কুরআনুল কারীমে নামাজের পাবন্দি, তৎপরতা ও দৃঢ়তার সাথে প্রতিপালনের জন্য ইউহাফিজুনা শব্দটির ব্যবহার করা হয়েছে। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে নজর রাখা, লক্ষ্য রাখা। এবং এই শব্দের মাঝেই রয়েছে পাবন্দির সাথে আদায় করা, সময়মত আদায় করা, শর্তসমূহ পূরণ করা, সবকিছু (ক) ইরশাদ হয়েছে তোমরা নামাজের প্রতি নজর রাখ। (সূরা বাকারাহ : রুকু-৩১) (খ) এবং যারা স্বীয় নামাজের প্রতি নজর রাখে। (সূরা মায়ারিজ : রুকু-১০) (গ) এবং সে সকল লোক নামাজের প্রতি সচেতন থাকে। (সূরা মুমিনীন : রুকু-১১) (ঘ) যারা নামাজের প্রতি সচেতন থাকে। (সূরা আনআম : রুকু-১১) (ঙ) অপর এক আয়াতে একথাও এসেছে যে, যারা স্বীয় নামাজ দায়েমীভাবে আদায় করে। (সূরা মায়ারিজ : রুকু-১) এই আয়াতসমূহের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নামাজ এমন একটি ফরজ, যা কোনও মুসলমানের উপর থেকে কোনও অবস্থাতেই মাফ হয়ে যায় না। এজন্য সর্বদা পাবন্দির সাথে শর্তসমূহ পরিপূরণসহ সকলেরই উচিত নামাজ আদায় করা।
নামাজের সময়সমূহ সুনির্দিষ্ট :
এরপর এই মাসআলা যে, নামাজের জন্য আল্লাহ পাক সময় নির্ধারিত করেছেন। এরশাদ হচ্ছে, “অবশ্যই নামাজ মুসলমানদের উপর নির্দিষ্ট সময়সমূহে ফরজ ও অপরিহার্য।” (সূরা নিসা : রুকু-১৫) এই আয়াতে পাকের দ্বারা বুঝা যায় যে, আমাদের নামাজসমূহের জন্য সময় নির্ধারিত আছে।
সে সময়গুলো কি?
নামাজ আদায়ের জন্য কুরআনুল কারীমে বেশীর ভাগ তিনটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (১) সালাত অথবা একামাতে সালাত নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, (২) তাসবীহ এবং (৩) জিকরুল্লাহ আল্লাহর জিকির।
প্রথম শব্দটি সালাত বা একামাতে সালাত নামাজের জন্যই সুনির্দিষ্ট। কিন্তুু দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শব্দদ্বয় যাবতীয় তাসবীহ, তাহমীদ এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজের জন্য বলা হয়ে থাকে। যার বৃহত্তর অংশ হচ্ছে তাসবীহ এবং তাহমীদ। আহাদীসেও তাসবীহ শব্দের অর্থ নামাজ পাঠ করা বলা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম : সালাতুদ, দুহা অধ্যায়) এবং আরবী কবিতা (শুয়ায়ানে জাহেলিয়া) ও আরবী অভিধানেও (লিসানুল আরব, ৩খ:) এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
কুরআনুল কারীমে তাসবীহ শব্দটি যদি সময়ের সাথে নির্দিষ্ট হয়, তাহলে এর দ্বারা নামাজ ছাড়া আর কিছুই উদ্দেশ্য হবে না। কেননা নির্দিষ্ট সময়ের সাথে নামাজ ছাড়া ইসলামে অন্য কোনও সাধারণ তাসবীহ ফরজ নয়। অবশ্য সময় নির্ধারণ ছাড়া কুরআনুল কারীমের যেখানে তাসবীহ পাঠের হুকুম দেয়া হয়েছে, এর দ্বারা সাধারণ স্মরণ ও গুণ বর্ণনা বুঝা যাবে। এই মুখবন্ধের পর নি¤œলিখিত আয়াতগুলোর প্রতিও নজর দেয়া দরকার।
১। রাতে দাঁড়িয়ে থাক, কিন্তু কিছু কম অথবা অর্ধরাত এর চেয়েও কম কর বা বাড়িয়ে দাও এবং এতে কুরআন ধীরে-সুস্থে পাঠ কর। (সূরা মুযযাম্মিল : রুকু-১)
২। এবং স্বীয় প্রতিপালকের হামদ বর্ণনা কর, তৃতীয় প্রহরে এবং সকালে। (সূরা মুমিন : রুকু-৬)
৩। তুমি তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা কর সকালে এবং তৃতীয় প্রহরে। (সূরা আহযাব : রুকু-১)।
৪। তোমরা সকালে এবং তৃতীয় প্রহরে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা কর। (সূরা ফতহু : রুকু-১)।
৫। এবং তুমি স্বীয় প্রতিপালককে নিজ অন্তরে ভীত হয়ে মৃদু শব্দে যাঞ্চা সহকারে, সকালে এবং তৃতীয় প্রহরে স্মরণ কর এবং যারা ভুলে যায়, তাদের পর্যায়ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আরাফ : রুকু-২৪)।
৬। এবং (হে রাসূল!) তাদেরকে বের করে দিয়ো না, যারা স্বীয় প্রতিপালককে সকালে এবং তৃতীয় প্রহরে স্মরণ করে। (সূরা আনয়াম : রুকু-৬)
৭। ঐ সকল গৃহ যেগুলোকে বুলন্দ করার হুকুম আল্লাহ পাক প্রদান করেছেণ এবং ঐগুলোতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, এবং সেগুলোতে ঐ সকল লোক যাদেরকে দুনিয়ার কায়-কারবার আল্লাহর স্মরণ হতে গাফেল করতে পারে না, সকালে এবং তৃতীয় প্রহরে আল্লাহর জিকির করে। (সূরা নূর : রুকু-৫)
৮। তুমি (হে রাসূল) নিজেকে ঐ সকল লোকদের সংস্পর্শ হতে দূরে রেখে না যারা স্বীয় প্রতিপালককে সকালে এবং তৃতীয় প্রহরে স্মরণ করে। (সূরা কাহাফ : রুকু-৪)
৯। তুমি স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসাসুলভ পবিত্রতা বয়ান কর যখন তুমি জাগ্রত হও এবং রাতের কিয়দংশে তাঁর তাসবীহ বর্ণনা কর এবং তারকাপুঞ্জের অন্তাচলের সময়। (সূরা তুর: রুকু-২)
১০। এবং নামাজকে কায়েম কর দিনের দু’প্রান্তে, দিনে এবং রাতের কিয়দংশে। (সূরা হুদ : রুকু-১০)।
১১। নামাজ কায়েম কর, সূর্য ঢলে পড়ার সময় হতে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত এবং ফজরে কুরআন পাঠ কর নিশ্চয় ফজরে কুরআন পাঠ করা হয় নিবিষ্ট চিত্তে ; এবং রাতে কিছু সময় জেগে অতিরিক্ত নামাজ পাঠ কর (তাহাজ্জুদ); এটা তোমার জন্য নফল। (সূরা বনী ইসরাঈল : রুকু-৯)
১২। এবং স্বীয় প্রতিপালককে স্মরণ কর সকালে, তৃতীয় প্রহরে, কিছু রাতের সময়ে এবং দীর্ঘ রাত পর্যন্ত তাঁর তাসবীহ পাঠ কর। (সূরা দাহার : রুকু-২)
(চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন