ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতী সেতু এলাকায় ক’দিন পরইপরই সৃষ্টি হয় দীর্ঘ ও দুঃসহ যানজট। গাড়ির যাত্রীদের তখন যন্ত্রনাকর অবস্থায় পড়তে হয়।
গতকাল শুক্রবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার রাজারহাট থেকে মেঘনা সেতু পেরিয়ে সোনারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টা থেকে এই যানজট সৃষ্টি হয়। গতকাল শুক্রবার এই যানজট কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার রাজারহাট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ছুটির দিনে মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ব গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার গাড়ি মহাসড়কের ওপর দিয়ে পার হওয়া, মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতু এলাকায় ধীর গতিতে গাড়ি পারাপারের কারণে যানজটের তীব্রতা বেড়েছে। মেঘনা-গোমতী সেতুর গজারিয়া অংশে ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজের কাছে মহাসড়ক সংস্কারের কাজ করায় এ যানজটের সৃষ্টি। যানজটের কবলে পড়ে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি কাজে নিয়োজিত যানবাহনও আটকা পড়েছে যানজটে। শিশু ও বয়স্কদের জন্য খুবই পীড়াদায়ক হচ্ছে এই যানজট। কয়েকটি পরিবহনের চালকরা জানিয়েছেন, রাত তিনটা থেকে যানজটে আটকে আছেন।
শুক্রবার সকাল ৭ টায় কুমিল্লা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত শাফিন জোবায়ের। তিনি বলেন, ১১ ঘণ্টা পর তিনি ঢাকা পৌঁছেছেন। মহাসড়কের গজারিয়ায় এলাকায় ১০ কিলোমিটার সড়কে যেতে সময় লেগেছে প্রায় ৬ ঘন্টা।
ওই দিন সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে শিক্ষক আব্দুর বাশার কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা হন। দুপুর সোয়া ২টা পর্যন্ত যানজটে আছেন ভবেরচর এলাকায়। তিনি বলেন, এক মিনিট গাড়ি একটু সামনে চললে পরে আধাঘণ্টা এক জায়গায় থাকে। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে অসহ্য লাগছে। যানজটের কারণে মহাসড়কের ফোরলেনের সুবিধা এখন কেউ পাচ্ছে না। ঢাকাগামী লোকাল বাসের যাত্রী হাজীগঞ্জের স্কুলশিক্ষক মো. শাহজাহান বলেন, বাসটি উল্টো পথে যাওয়ার পরও দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে যানজটে আটকে আছে। মহাসড়ক একেবারেই স্থবির।
এক থেকে দেড় কিলোমিটার রাস্তা পার হতেই সময় লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টারও বেশি। এতে জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। যানজটের ফলে যে শুধু সময় নষ্ট হয়, তা নয়। ক্ষতি হয় বিপুল পরিমাণ জ্বালানিরও। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কারণ কী এ নিয়ে হয়েছে বিস্তর গবেষণা। যানজট নিরসনে নেয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা এবং মহাপরিকল্পনা। এ কারণেই অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি ৩ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। করা হয়েছে ‘ওয়ান ওয়ে, বন্ধ করা হয়েছে মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচলও কিন্তু তার ফলাফলও শূন্য।
যানজটের কারণে সম্প্রতি সময়ে কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতুটিও খুলে দেওয়া হয়েছে। তারপরও যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা মুক্তি পাচ্ছেন না যানজটের দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথেই আটকে থাকছে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন।
সরেজমিন মহাসড়কের ভবেরচর, দাউদকান্দি, শহীদনগর, গৌরীপুর, মাধাইয়া, চান্দিনা ও আলেখারচর এলাকায় দেখা যায় মহাসড়কের দুই পাশে গাড়ির সারি। হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করছে বলে জানান এসআই ফিরোজ। মহাসড়কে ছুটির দিনে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ থাকার কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজট নিরসনে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া অনেক যাত্রীদের পায়ে হেঁটে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা যায়। যানজটের কবলে পড়ে নারী, শিশু ও বয়স্কদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যানজটের কবলে পরে অনেক ভিআইপি যাত্রী পুলিশের স্কট দিয়ে উল্টো পথ ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন