নরসিংদী জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ‘এফপিআই’ পদে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিবপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুরুল আলমের যোগসাজশে নরসিংদী জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক দুর্নীতির আশ্রয়ে সরকারি চাকুরি বিধি লঙ্ঘন করে আহসানুল্লাহ নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার এক ব্যক্তিকে শিবপুরের বাসিন্দা বানিয়ে চাকরি দিয়েছেন। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের কানাহোটা গ্রামের চাকরিপ্রার্থী সুমন খান বাদি হয়ে নিয়োগ কর্মকর্তা মহাপরিচালক ও নিয়োগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছেন।
এ ব্যাপারে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ ভুয়া ঠিকানা দিয়ে চাকরি গ্রহণকারী ‘আহসানুল্লাহর নিয়োগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না’ মর্মে রুল জারি করেছেন। রুলে নিয়োগ কর্মকর্তাসহ নিয়োগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জবাবদিহি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের রাজস্ব খাতভুক্ত ‘পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক’ পৃথক শূন্য পদে নারী ও পুরুষ নিয়োগে ২০১৫ সালে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি চাকুরি বিধি অনুযায়ী জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়ন সমূহের শূন্যপদে কেবল সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাসিন্দারাই আবেদন করতে পারবেন। শূন্য পদের মধ্যে শিবপুরের চক্রধা ইউনিয়নে একজন পুরুষ নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। সেই পদের জন্য ভুয়া ঠিকানা দিয়ে আবেদন করেন আহসান উল্লাহ। যিনি নরসিংদী জেলারই বাসিন্দা নন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামের কাজী খলিলুর রহমানের পুত্র। পরিচয় গোপন করে আহসান উল্লাহ তার স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়েছেন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের কানাহোটা গ্রাম। ভুয়া পরিচয়ে আবেদনকারী আসানুল্লাহর সাথে যোগসাজস রয়েছে শিবপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুরুল আলম, জেলা তৎকালীন উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাকের।
১১ অক্টোবর আহসান উল্লাহর নামে পরিবার পরিকল্পনা ঢাকা বিভাগের পরিচালক ব্রজ গোপাল ভৌমিক (অতিরিক্ত সচিব) স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। পরে ১৬ অক্টোবর আহসানুল্লাহ চাকরিতে যোগদান করেন। যোগ দেওয়ার এক মাস পর স্থানীয় বাসিন্দাদের বিষয়টি নজরে আসে। গত ডিসেম্বরে আহসান উল্লাহ কানাহোটা গ্রামের তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে কিছু সম্পত্তি দানে গ্রহণ করেন। পরে তার স্থায়ী ঠিকানা শিবপুর উল্লেখপূর্বক পুলিশ ভেরিফিকেশন নেওয়ার জন্য আবেদন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, যোগদানের সময় আহসান উল্লাহ তার জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেননি, দিয়েছেন একটি জন্মনিবন্ধন সনদ। নিয়োগপত্রের শর্তাবলীতে থাকা সত্তে¡ও যোগদানের সময় শিবপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পা অফিস কেন তার জাতীয় পরিচায়পত্রের পরিবর্তে জন্মনিবন্ধন গ্রহণ করেন তা রহস্যজনক।
চক্রধা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বেনজির আহম্মেদ বলেন, আমি শুনেছি কাজী আহসান উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি কানাহোটা গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারি চাকরি করছেন। তবে আমার জানামতে কাজী মো. আহসান উল্লাহ উক্ত গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা নয়।
নরসিংদী পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ দত্ত সাংবাদিকদেরকে বলেন, যেহেতু বিষয়টি হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে, সেহেতু হাইকোর্টের সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত। এখানে আমার এখতিয়ার নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন