ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পানির চাপে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া ও রাজাপুরে বিষখালী নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামে পানি ঢুকে কাচা বাড়িঘর, বীজতলা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এদিকে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি দেখে জেলার ৪৯টি সাইক্লোন সেল্টারসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে তিন হাজার মানুষ। নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চসহ সব ধরণের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সকাল থেকে ঝড়ো হাওয়া বইছে। এর সাথে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
জানা যায়, রাজাপুরে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের বিষখালী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বড়ইয়া, উত্তর পালট, দক্ষিণ পালট ও নিজামিয়া গ্রামসহ অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বিষখালী নদী তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কাঁঠালিয়ার লঞ্চঘাট এলাকা, জয়খালী, চিংড়াখালী, মশাবুনিয়া, হেতালবুনিয়াসহ ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষক। রাজাপুরে বাঘড়ি এলাকার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ধানসিঁড়ি নদীর খনন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন ওইসব এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বড়ইয়া গ্রামের কৃষক মো. হাতেম আলী জানায়, বড়ইয়া ইউনিয়নের বিশখালী নদীর পাশে থাকা সবজি ক্ষেতগুলো জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে মরিচ, ডালসহ সবজির ক্ষেতে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে পানি না নামলে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবেন।
বড়ইয়া গ্রামের শাহিনুর বেগম বলেন, ‘গরু-বাছুর, হাঁস-মুরগি, ঘরবাড়ি কার ভরসায় থুইয়া (রেখে) জামু। এয়ার নিরাপত্তা কেডা দেবে?। নিরাপত্তা পাইলো আশ্রয়কেন্দ্রে যাইতাম।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘উপজেলার মোট ১৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে তিন হাজার মানুষ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও মানুষকে আসার জন্য আহবান করা হয়েছে। তবে ফণীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় রাজাপুরের বাসিন্দারা সবাই নিরাপদে আছেন।’
কাঁঠালিয়া লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, পানি অল্প বেড়েছে, এতেই বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। পানি ঢুকেছে আমাদের বাড়ির মধ্যে। রাতে যদি পানি আরো বাড়ে, তখন সমস্যা বাড়বে। ছেলে মেয়ে নিয়ে আগেই আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছি।
স্থানীয় কৃষক জালাল আহম্মেদ বলেন, আমাদের বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছি। রাতে পানি বাড়লে ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়বে।
কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীন বলেন, কাঁঠালিয়ার বেড়িবাঁধটি ভেঙে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে পানি ঢুকে পড়েছে। আমরা নদীতীরের মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হলে দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে কাঁঠালিয়ার মানুষ।
ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র মো. লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, আমরা আবহাওয়া দপ্তর থেকে যে তথ্য পেয়েছি, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষগুলোকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। তাদের জন্য শুকনো খাবার দিয়েছি। প্রয়োজনে তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন