গত কয়েকদিনের টানাবর্ষণ ও ভারত থেকে আসা উজানের ঢলে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ৯ স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ১৫টি গ্রাম। ভেসে গেছে পুকুর ও ফসলের ক্ষেত। ক্ষতিগ্রস্ত পরশুরাম এলাকার চিতলীয়া ইউনিয়নের রামপুর ও দূর্গাপুরে দেখা যায়, বাড়িঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। স্থানীয়রা জানায়, প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুম এসে বাঁধের কাজ হয় আবার পরের বছর ভেঙে যায়।চিথলিয়া ইউনিয়নের রামপুর এলাকার বাসিন্দা নিলু মিয়া জানান, গেল মৌসুমে গ্রামের এক পাশের বাঁধ ভেঙে ছিলো। এবার ভেঙেছে অন্যপাশে। এভাবে প্রতিবছরই তাদের পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।
তিনি আরও জানান, দায়সারাভাবে ভাঙা বাঁধগুলো ঠিক করার ফলে পাহাড়ি ঢলের চাপে ভেঙে যায়। একই রকম অভিযোগ পাশের গ্রাম দূর্ঘাপুরের বীনা রানী ও অলকা দেবীর।পরশুরাম উপজেলা মুহুরী নদীর পরশুরামের অংশে মঙ্গলবার (০৯ জুলাই) রাতে ৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন স্থানগুলো হলো- চিথলিয়া ইউনিয়নের উত্তর শালধর গ্রামের মহসিন মেম্বার বাড়ি সংলগ্ন, দূর্গাপুর গ্রামের কালাম মেম্বারের বাড়ি সংলগ্ন স্থান, পৌর এলাকার বেড়া বাড়িয়া শাহপাড়া গ্রামে সংলগ্ন স্থান, উত্তর ধনিকুন্ডা বদু মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন, নোয়াপুর আলত মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন স্থানে। বাঁধ ভাঙনে উত্তর ধনিকুন্ডা, চিথলিয়া, শালধর, রাজষপুর, দুর্গাপুর, নোয়াপুর, রামপুর, বেড়াবাড়িয়া,অলকাসহ ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, পুকুরের মাছ ও রাস্তাঘাট। ফুলগাজী উপজেলা মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে ৯টা দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজী অংশের ৪টি ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলার জয়পুরের ঘনিয়া মোড়া নামক স্থানে, উত্তর শ্রীপুর গ্রামের পূর্বপাড়া, সাহাপাড়া গ্রামের দু’টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এতে উপজেলার অন্তত ৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলো হলো- উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ শ্রীপুর, নীলক্ষি, কিসমত ঘনিয়া মোড়া, পশ্চিম ঘনিয়া মোড়া, জয়পুর, শাহাপাড়া, বৈরাগপুর। এছাড়া রাত ৯টার পর থেকে ফেনী-পরশুরাম সড়কের ফুলগাজী বাজার সড়কে হাটু পানি থাকায় সর ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। বুধবার সকালে পানি কমলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি বাড়তে শুরু করেছে। ইউএনও সাইফুল ইসলাম আরও জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জহির উদ্দিন জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন। মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ১ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি কমলে বাঁধগুলো সারানোর কাজে হাত দেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন