কোনো প্রকার সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে একটি প্রভাবশালী বেপরোয়া চক্র মৌলভীবাজারে পাহাড় কেটে ধ্বংস করছে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যকে। এতে করে হুমকিতে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। কেউ কেউ পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকি নিয়ে বসতঘর বানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সড়ক তৈরীর অজুহাতে পাহাড় কাটছেন। পাহাড় কাটা রোধে প্রশাসন দায়ছাড়া অভিযান চালালেও কিছুতেই থামছেনা পাহাড় কাটা।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবলা ইউনিয়নের আথানগিরি ও বোরুতলায় চলছে অবাদে পাহাড় কাটা। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম এলেই নির্বিচারে চলে পাহাড় কাটা। আর বর্ষা মৌসুমে ঘটে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা। প্রতিদিন ওই এলাকা থেকে প্রায় ২০টি ট্রাক পরিবহন করছে পাহাড়কাটা মাটি। এ ভাবে পাহাড় কাটার কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে পাহাড় ও বনাঞ্চলের আয়তন। একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে সরকারে খাস ভুমিতে বসবাস সহ নানা অজুহাতে চালাচ্ছেন এই নিধনযজ্ঞ। আথানগিরি ও রোরুতলার মতো হরদম চলছে জেলার অন্যান্য উপজেলায় পাহাড় কাটা। পাহাড় কাটার ফলে বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই ছোটখাটো ভুমিধস হচ্ছে। অনেক স্থানেই টিলার ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত করে বাড়িঘর তৈরি করা হচ্ছে।
পাহাড় কাটার বিষয়ে আপার কাগাবলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মোঃ আজির উদ্দিন জানান পাহাড় কাটছে একটি প্রভাবশালী চক্র। যখনই পাহাড় কাটার খবর পান তাৎক্ষনিক উপজেলা প্রশাসনকে তিনি জানান। প্রশাসন খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ী আটক করে। আগে পাহাড় কাটা বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি ওই এলাকায় পাহাড় কাটা হচ্ছে বে-পরোয়া ভাবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌলভীবাজার সদরের সঞ্জিত কুমার জানান, কাগাবালা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা বোরুতলায় পাহাড় কাটার খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় কাউকো পাওয়া যায়নি। পরে আবারও পাহাড় কাটা শুরু করে। পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ আইনে নতুন করে কোন মামলা হয়নি। তিনি কর্মস্থলে যোগদানের পূর্বে পরিবেশ আইনের মামলা চলমান রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জানান, আসুক মিয়া ও সবুজ মিয়ার নেতৃত্বেই চলে এই পাহাড় কাটা। তারা প্রশাসন ও সরকার দলীয় রাজনীতিবীদদের ম্যানেজ করেই চালান এই অপরাধকর্ম। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে কেউই এই কর্মযজ্ঞের প্রতিবাদ করতে চান না।
এ বিষয়ে বোরোতলা এলাকার স্থানীয় এক ব্যাক্তি জানান, যারা মাটির ঠিকা রাখে, তারাই প্রকাশ্যে ট্রাকদিয়ে পাহাড় কাটা মাটি পরিবহন করছে। তাদের দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় ট্রাক নিয়ে প্রবেশ করতে না দিলে অথবা ট্রাকগুলো আটকে মামলা দিলে পাহাড়কাটা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সাংাদিক ফোরাম মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি সৈয়দ মহসীন পারভেজ বলেন, সংবাদ সংগ্রহের কারণে জেলার পাহাড়ী এলাকায় গেলে পাহাড় কাটার এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। আথানগিরি ও বোরুতলায় মতো অহরহ জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও পাহাড় কাটা চলছে। এসব পাহাড়ী টিলা জুড়ে রয়েছে মূল্যবান গাছ গাছালি বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। পাহাড় কাটার ফলে বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই ছোটখাটো ভুমিধস হচ্ছে। অনেক স্থানেই টিলার ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত করে বাড়িঘর তৈরি করা হচ্ছে। পাহাড় কাটা রোধে প্রশাসন অনেকটা দায় ছাড়া। এ পর্যন্ত কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়াতে প্রভাবশালী মহল নির্বিচারে পাহাড় কেটে যাচ্ছে।
অভিজ্ঞ মহল মনে করেন এ ভাবে পাহাড় কাটা অভ্যাহত থাকলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সহ পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে উঠা সম্বব নয়। পাহাড় কাটা বন্ধে দ্রুত প্রদক্ষেপ না নিলে আশঙ্কা রয়েছে ভূমিকম্প বা লাগাতার বর্ষণের সময় ভূমিধস হয়ে বড় রকমের বিপর্যয় হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন