শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

আনারসে ভরপুর ভিটামিন সি

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

আমরা পিছিয়ে নেই। এখন দ্রæত এগিয়ে চলেছি। আর সে কারণে আমাদের খাদ্য তালিকার মধ্যে ফাস্ট ব্যাপারটা ঢুকে পড়েছে। ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার-সর্বত্রই ফাস্টফুড বা রেডিমেড ফুডের রাজত্ব। আর পানগুমটি থেকে পাঁচতারা হোটেল সর্বত্রই কোল্ডড্রিংক্সের ছড়াছড়ি। যদিও ফাস্টফুড বা ঠান্ডা পানীয় গুলোর মধ্যে খাদ্য গুণ খুঁজে পাওয়াই কঠিন। আসলে খাবারের মধ্যে আমরা সব সময় যেটা খুঁজি, সেটা হল স্বাদ। আর এ স্বাদ মনে তৃপ্তি ও আনন্দ আনে। তাই যতক্ষণ না তৃপ্তি আসে, আমরা কিন্তু খেতেই থাকি। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় এমন কিছু খাদ্য অবশ্যই রাখা উচিত যা হবে একদিকে পুষ্টিকর, অন্যদিকে তৃপ্তিদায়ক। আর সে খাদ্য হল, ফল। এখন আমের পাশাপাশি আনারস, কাঁঠাল ইত্যাদি পুষ্টিকর ফলও রাখা যেতে পারে।

আনারস এককালে ছিল ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ের বাসিন্দা। এটা ছিল ১৪৯৩ সাল। গুডালোপ দ্বীপে এ গোল্ডেন কুইন বা সোনালী রানিকে আবিস্কার করলেন নাবিক কলম্বাস। তারপর তিনি এ রানিকে নিয়ে গেলেন পেনে যেখান থেকে এ ফলটি সমগ্র বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ে। আনারস এখন বিশ্বের সবত্রই খাবারের প্লেট আলোকিত করে। এদের খাদ্যগত গুণমান প্রচুর। ভিটামিন এ,বি,সি ছাড়াও থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন।
পানি ঃ ৮৫ শতাংশ, শর্করা ঃ ১৩ শতাংশ, প্রোটিন ঃ ০.৬ শতাংশ, খনিজ লবণ ঃ ০.০৫ শতাংশ, ফাইবার ঃ ০.৩ শতাংশ, ক্যালসিয়াম ঃ ০.০২ শতাংশ, ফসফরাস ঃ ০.০১ শতাংশ, আয়রন ঃ ০.৯শতাংশ, অ্যাসিড ঃ ০.৬ শতাংশ, ভিটামিন এ ঃ ৬০শতাংশ, ভিটামিন বি ঃ ১২০ মি. গ্রাম/ আই ইউ, ভিটামিন সি ঃ ৬৩ মি. গ্রাম।
তাছাড়া প্রতি কেজি আনারস থেকে পাওয়া যায় ৫০০ ক্যালরি শক্তি। এবার আসা যাক ঔষুধি গুণের কথায়। আনারসে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায়, প্রাচীন নাবিকরা এর খুব ব্যবহার করতেন নিজেদেরকে সার্ভি রোগের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। কারণ তখন বাজারে ভিটামিন সি পাওয়া যেত না। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে আমাদের শরীরের রক্ত সংবহন তন্ত্র। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের শরীরের রক্তে চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে। আর সে চর্বি ধমনীর দেওয়ালে জমে গিয়ে ক্রমশ প্লাক তৈরি করে। এ প্লাক রক্ত সঞ্চালনে বাধা দেয়। যার ফলে শরীরে বিশেষ করে হƒৎপিন্ডে গন্ডগোল দেখা দেয়। আনারসে এ পÐাক গুলোকে ধমনীর দেওয়াল থেকে ছাড়াতে সাহায্য করে। যারা মূত্রনালীর ইনফেকশনে ভোগেন তারা আনারস খেলে উপকার পাবেন। হঠাৎ করে গলায় ব্যথা হচ্ছে, বাড়িতে আনারস থাকলে একটু খেয়ে নিলে ব্যথা কমে যাবে। খাবারে অরুচি, আনারস খান, মুখের রুচি ফিরে আসবে। যাদের একটুতেই সর্দি-কাশি হয়, তারা অবশ্যই আনারস খাবেন, প্রকোপ কমে যাবে। আনারস পেট পরিস্কার করতেও সাহায্য করে। অল্প খেলেও যাদের পেট ফাঁপে তারা নিয়মিত আনারস খান। গাঁটের ব্যথার রোগীরা যত খুশি আনারস খেতে পারেন, ব্যথা কম থাকবে। এছাড়া খেলতে গিয়ে কেটে গেছে, বাড়িতে ব্যান্ড-এইডজ নেই, এক টুকরো আনারস কেটে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। ব্যান্ড-এইডজ লাগবে না। যারা নিজেদের ত্বকটাকে বেশি ভালোবাসেন তারা আনারসকে ভালোবাসুন। আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা অনেক গুণ বেড়ে যাবে।
আনারস কেনার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। গায়ের রং যেন কমলা বা হলুদ হয়। অনেকদিনের হলে রং হালকা হয়ে যায়। পাতা যেন টাটকা থাকে। ওপরের পাতা কুঁচকে গেলে কিনা ঠিক হবো না। আনারসের চোখ যদি মেটে রং-এর হয়ে যায় এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ে, তাহলে বুঝবেন পচে গেছে। গন্ধ নিয়ে-গন্ধ চিনে আনারস কিনুন। তৃপ্তির সঙ্গে উপভোগ করুন এবং তরতাজা থাকুন।
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।
বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার (১ম স^র্ণপদক) প্রাপ্ত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন