শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক

আতাউর রহমান আজাদ (টাঙ্গাইল), মো. নজরুল ইসলাম (রাজবাড়ী) | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম | আপডেট : ১২:১০ এএম, ২৪ মে, ২০১৯

রাজধানীর সঙ্গে দেশের ২১টি জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ায় ঈদে ঘরেফেরা মানুষ দুর্ভোগের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃত্রিম ফেরি সংকট, টিকিট কাউন্টার ও গাড়ি সিরিয়ালের ক্ষেত্রে দালালচক্রের তৎপরতা এবং ভিআইপি নামে এসি বাস সিরিয়াল ছাড়াই পারাপার করায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে দীর্ঘ যানজট হচ্ছে। জনদুর্ভোগ বাড়ছে, জনঅসন্তোষের সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের মতে, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ঈদে যানজটের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর’কে কেন্দ্র করে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রী নিরাপত্তায় কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। বিআইডবিøটিসি’র ঘাট ব্যবস্থাপক সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে ৬টি ফেরী ঘাট দিয়ে ২০টি ফেরী যানবাহন পারাপার ও এবং ৩৩টি লঞ্চ চলাচল করবে। নদীতে ফেরী চলাচলের চ্যানেল গুলো পানি বৃদ্ধি ও ¯্রােতের সাথে পরিবর্তন না হলে স্বাভাবিক ভাবেই ফেরী চলাচল করতে পারবে।
জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাতে হঠাৎ আবহাওয়ার পবির্তনে ঝড় বৃষ্টি হওয়ায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে রাত সাড়ে ১০টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বন্ধ ছিলো। ঝর থেকে গেলে ফেরী চলাচল স্বাভাবিক হয়।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ঘাট পর্যন্ত যাত্রী নিরাপত্তায় ছিনতাইকারীদের হাতে থেকে রক্ষার্থে মহাসড়কে সোলারের সাহায্যে বাতি বসানো হবে। ঈদের আগে ৩দিন ও পরের ৩দিন পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে দেখা, যাত্রী পরিবহন, পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার ভ্যান সহ ৩ শতাধিক যানবাহন নদী পারের অপেক্ষায় রয়েছে। এসময় ঈগল পরিবহনের মামুন জানান, গত বুধবার দিবাগত পৌনে ১টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌছালে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফেরীর নাগাল পেয়েছি। এতে করে যাত্রীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
বিআইডবিøটিসি’র ঘাট ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে ৬টি ফেরী ঘাট সচল থাকবে। যানবাহন নদী পারাপারে ১০টি রো-রো ফেরী ও ১০টি ইউটিলিটি ও কেটাইপ ফেরী চলাচল করবে। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে যাত্রী নিরাপত্তায় যানজট নিরসনে দৌলতদিয়া ঘাটে পুলিশ প্রশাসন ট্রাফিক পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, সাদা পোশাকে পুলিশ সহ আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার কাজে দায়িত্ব পালন করবে।
অন্যদিকে, নির্ধারিত সময় পাড় হলেও শেষ হয়নি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে চন্দ্রা হয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর ভোগড়া পর্যন্ত মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের মার্চের মধ্যে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এতে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরত্বের এই মহাসড়ক পাড়ি দিতে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষকে বিড়ম্বনায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মহাসড়কটি নির্বিঘœ করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তবে সাধারণ মানুষ মনে করছেন ঈদ উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ গাড়ির চাপ সামলাতে গিয়ে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হবে।
সরেজমিন গতকাল বৃহস্পতিবার কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা থেকে টাঙ্গাইল সদর, বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, কোথাও কোথাও চারলেনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও অনেক জায়গায় কাজ এখনো বাকি রয়েছে। বিশেষ করে যে সকল স্থানে ওভারপাস ও উড়াল সড়ক নির্মাণাধীন রয়েছে সেখানে যানবাহন গুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারছে না। ফলে এসব এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের রাবনা এলাকায় নির্মাণাধীন উড়াল সড়কের কাজ এখনো অনেক বাকি। একই বাইপাসের বিল ঘারিন্দা এলাকায় ওভারপাসের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তারুটিয়া এলাকায় নির্মাণাধীন ওভারপাসটির কাজ অর্ধেক ও হয়নি। এছাড়াও করটিয়া, জামুর্কি, ধল্যা এলাকার ওভারপাস গুলো নির্মাণাধীন। মির্জাপুর শহর বাইপাসের ওভারপাসটি প্রায় শেষ হলেও ধেরুয়া রেল লাইনের উপর নির্মিত উড়াল সড়কটি বেশ আগেই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
তবে মির্জাপুরের গোড়াই এলাকার ওভারপাসটি এখনো শেষ হয়নি। এছাড়াও মহাসড়কের মাঝখান দিয়ে যে ডিভাইডার নির্মিত হবে সেটিও অনেক জায়গায় অসম্পূর্ণ রয়েছে। এদিকে ধীর গতির যানবাহনের জন্য নির্মিত আলাদা লেনের কাজ কোথাও কোথাও শেষ হলেও অনেক জায়গায় এখনো বাদ রয়েছে। যেসব জায়গায় লিঙ্ক রোড রয়েছে সেখানেও কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। কোথাও আবার কাজ চলমান। সব মিলিয়ে এবারের ঈদ যাত্রায় ভোগান্তির সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন ঈদের আগেই কয়েকটি ওভারপাস ও উড়াল সড়ক উন্মুক্ত করা হবে।
চারলেন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) অমিত কুমার চক্রবর্তী বলেন, চারলেনের এই মহাসড়কে ১২টি ওভারপাস ও দুটি উড়াল সড়ক নির্মিত হবে। এর মধ্যে ঈদের আগেই চারটি ওভারপাস উন্মক্ত করা হবে। বাকিগুলোর কাজ শেষ না হলেও যানবাহন চলাচলের জন্য এবং যানজটমুক্ত রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর ও উত্তর পশ্চিম বঙ্গের সড়ক যোগাযোগের নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। এর পর থেকে প্রতিনিয়ত এই মহাসড়কে বাড়তে থাকে গাড়ির চাপ। এতে দুই ঘন্টার সড়ক পাড়ি দিতে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা লেগে যায়।
ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে এবং এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হিসেবে ‘সাসেক’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল একনেক সভায় প্রকল্পটি পাশ হয়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার নিজস্ব এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি), আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এডিএফডি) সংস্থার অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পটি। জয়দেবপুরের ভোগড়া থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়কটি চারলেনে উন্নীত করণের পাশাপাশি থাকবে ধীর গতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেন। এই মহাসড়কে থাকবে ২টি উড়াল সড়ক, ১২টি আন্ডারপাস, ২৬টি ব্রিজ ও ৬০টি কালভার্ট। মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করায় উচ্ছ¡াস প্রকাশ করে দ্রæত শেষ করার দাবি করেন এলাকাবাসী। জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদে মহাসড়কটি যানজট রাখতে এবং ঘরমুখো মানুষকে নির্বিঘেœ বাড়ি ফেরাতে পুলিশ বিভাগকে সাথে নিয়ে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন