শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কর্মসূচি থাকা দরকার

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ইতোমধ্যে ২০ দলীয় জোটের একটি শরিক দল জোট থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। জোটে বাকি যারা আছেন তাদের মধ্যে কিছু নিবন্ধিত, বেশির ভাগ অনিবন্ধিত। এক. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (নিবন্ধিত)। দুই. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তিন. ইসলামী ঐক্যজোট। চার. খেলাফত মজলিস (নিবন্ধিত)। পাঁচ. লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি- এলডিপি (নিবন্ধিত)। ছয়. জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপা (নিবন্ধিত)। সাত. বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (নিবন্ধিত)। আট. ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। নয়. বাংলাদেশ ন্যাপ। দশ. ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি- এনডিপি। এগারো. বাংলাদেশ লেবার পার্টি। বারো. বাংলাদেশ মুসলিম লীগ- বিএমএল (নিবন্ধিত)। তেরো. ন্যাপ-ভাসানী। চৌদ্দ. বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি। পনেরো. ডেমোক্র্যাটিক লীগ। ষোলো. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (নিবন্ধিত)। সতেরো. বাংলাদেশ পিপলস লীগ। ২০১৪ সালের জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে যোগ দিয়েছিল যে দু’টি দল, তারা হলো- আঠারো. জাতীয় পার্টি। উনিশ. বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে যোগ দিয়েছিল তিনটি দল; যথা- বিশ. বাংলাদেশ জাতীয় দল। একুশ. পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ। বাইশ. মাইনরিটি পার্টি। এখানে উল্লেখ করতেই হবে, নদীর দুই কূল যেমন স্রোতের চাপে ভাঙে, তেমনি রাজনৈতিক স্রোতের চাপে রাজনৈতিক দল বা জোট ভাঙা-গড়া হতেই থাকে। এর আগেও ১৮ দলীয় জোটের শরিক বেশ কয়েকটি দল বা দলের একটি অংশ, ১৮ দলীয় জোট ত্যাগ করেছিল; তখন ওই দলগুলোর অপর অংশ জোটে থেকে যায়। অপরপক্ষে, অন্তত তিনটি দলের অংশ অন্য জোট থেকে বের হয়ে এসে আমাদের জোটে যোগদান করেছে। ঘটনাগুলোকে কেউ বলবেন ‘স্বাভাবিক’, কেউ বলবেন ‘অস্বাভাবিক’। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে একদফা জোরেশোরে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আরো একদফা জোরেশোরে ২০ দলীয় জোটে ভাঙন ধরানোর জন্য চেষ্টা হয়েছিল; কোনো কোনো দলকে জোট থেকে বের করে নেয়ার জন্য প্রচণ্ড চেষ্টা চালানো হয়েছিল। মেজর জেনারেল ইবরাহিম বীর প্রতীকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, কর্নেল অলি আহমেদ বীর বিক্রমের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি প্রমুখ দল জোটের প্রতি আনুগত্যের চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এখনো আমরা জোটে আছি এবং ইনশাআল্লাহ থাকব। কারণ, বিএনপির ও ২০ দলীয় জোটের কোটি কোটি নির্যাতিত-নিপীড়িত নেতাকর্মীর অনুভূতির সাথে আমরা একাত্ম; আত্মাগুলোর মধ্যে সে সম্পর্ক ছিন্ন করা অসম্ভব।
গত ১৩ মে ২০১৯ অপরাহ্ণ ৪টার সময় ২০ দলীয় জোটের মিটিং ছিল। ৪টা বাজার ৫-৭ মিনিট বাকি থাকতেই প্রায় সবার উপস্থিতি সম্পন্ন হলো। জনাব নজরুল ইসলাম খান আসলেন; তিনি ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক। কিছুক্ষণ পরই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এলেন। লিখিত-পঠিত বা পূর্বঘোষিত কোনো অ্যাজেন্ডা না থাকলেও সা¤প্রতিক রাজনৈতিক বিষয়াবলি নিয়েই যে আলোচনা হবে, এটা বোঝা গেল। অপরাহ্ণ ৪টা ৫ মিনিট থেকে ৫টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হলো। অতঃপর মিনিট দশেক মহাসচিব সমাপনী বক্তব্য রাখলেন। এরপর আসরের নামাজের জন্য বিরতি এবং ইফতারের প্রস্তুতি। আলোচনার জন্য যে বিষয়গুলো উত্থাপিত বা উপস্থাপিত হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে ছিল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান কর্তৃক দেয়া (কথিত বা বাস্তব, যেটাই হোক) আলটিমেটাম, বিএনপির কয়েকজন সংসদে যাওয়ার প্রসঙ্গটি, ২৯-৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কয়েকটি নিবন্ধিত শরিক দলকে আসন না দেয়া, সংসদে যোগদান না করা প্রসঙ্গে গৃহীত সিদ্ধান্তকে ভুল ঘোষণা করা, ঐক্যফ্রন্ট সৃষ্টির জরুরত ও প্রেক্ষাপট, সা¤প্রতিক অসুবিধাগুলো ইত্যাদি। যা হোক, যেহেতু পূর্বনির্ধারিত বা ঘোষিত অ্যাজেন্ডা ছিল না, সেহেতু কোনো একটি বিষয় আগে আলোচিত হয়েছে, কোনো বিষয় পরে আলোচিত হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে অনেক প্রকার কথাই উঠে এসেছে। এক. যেকোনো বড় আন্দোলন করতে হলে বৃহত্তর ঐক্য লাগে। বৃহত্তর ঐক্যের তথা জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই, যেকোনো আন্দোলনে যত বেশি রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত করা যায়, তাতেই কল্যাণ। দুই. জোট গঠন ইত্যাদি প্রসঙ্গে পরোক্ষ আলোচনার সময় এটিও বলা হয় যে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক, ভূ-রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি এক এক সময়ে এক এক রকম থাকে। বাংলাদেশ বিশ্বরাজনীতির বাইরে নয়। অতএব, তার সাথে বিএনপির রাজনীতিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে অনেক প্রকার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এর বেশি ব্যাখ্যায় যাওয়ার সময় পাওয়া যায়নি; এর বেশি ব্যাখ্যা হয়তো বা প্রদান করাও সমীচীন মনে হয়নি। তিন. মিডিয়ার সাথে কথা বলতে গেলে সাবধানতা এবং জোটের প্রধান শরিকের সাথে সমন্বয় করা প্রয়োজন। চার. বগুড়া উপনির্বাচন ও মহিলা সংসদ সদস্যের প্রসঙ্গটি অতি মার্জিনাল স্তরে আলোচনায় এসেছিল, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আলোচনা হয়নি। পাঁচটি বিষয় অতীতে এপ্রিল মাসে যেমন আলোচিত হয়েছিল, তেমনি ১৩ মে তারিখেও আলোচিত হয়েছে। সেগুলো হলো- এক. জোটের শরিক দলের সদস্যরা মিডিয়ার সামনে বেশি কথা না বলাই শ্রেয়। কারণ এতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়; যা বলার তা যেন জোটের ফোরামেই বলা হয়। দুই. সাধারণত মাসে একবার জোটের বৈঠক হবে। তিন. কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে জোটের কোনো একটি বা একাধিক সদস্য যদি প্রয়োজন মনে করে, তাহলে সমন্বয়কারীর মাধ্যমে ও প্রধান শরিকের সম্মতিতে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ডাকা যেতে পারে। চার. ‘জোটের শীর্ষ নেতা’ বলতে বোঝায় দলের চেয়ারম্যান বা সভাপতি বা প্রেসিডেন্ট ও মহাসচিব বা সেক্রেটারি জেনারেল তথা সমমানের পদবিধারী। অতএব, জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে যেন চেয়ারম্যান বা মহাসচিব ব্যতীত অন্য কেউ দলের প্রতিনিধিত্ব না করেন। তাহলে আলোচনার ধারাবাহিকতা রক্ষায় সুবিধা হয়। পাঁচ. বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জোটবদ্ধ কোনো প্রোগ্রাম করাই এখন সময়ের দাবি এবং রাজনৈতিক নৈতিকতার দাবি। জোটবদ্ধ প্রোগ্রামের বাইরে শরিক দলগুলো আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম করা উচিত এবং কেউ কেউ ইতোমধ্যেই তা করেছেন; বাকিরাও করবেন বলে আশা করা হয়। এই মিটিংয়ের পরপরই ১৫ মে সকাল-দুপুরে এলডিপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১৫ মে ২০১৯ বেলা ১১টা ১৫ মিনিট থেকে তিন ঘণ্টা আলোচনা সভা চলে এলডিপির উদ্যোগ ও আয়োজনে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল ‘নাগরিক ঐক্য’-এর আহ্বায়ক ও সুপরিচিত সম্মানিত রাজনৈতিক নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না নিজের অপরিহার্য ব্যস্ততার কারণে মাঝপথে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং তার বক্তব্য উপস্থাপন করেই বিদায় নিয়েছিলেন। মান্না বলেছিলেন, ‘মানুষ আশায় আছে, তাকিয়ে আছে। কবে বের হবেন, বলুন। ঠিক করুন, কবে বেরোবেন। দরকষাকষি বাদ দেন। ওইগুলো পরে কইরেন।’ সর্বশেষ বক্তব্য রেখেছিলেন আলোচনা সভার সভাপতি ও এলডিপির সভাপতি কর্নেল অলি আহমেদ বীর বিক্রম। তার আগে বক্তব্য রেখেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নায়েবে আমির মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পরোয়ার, তার আগে বক্তব্য রেখেছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী, তারও আগে বক্তব্য রেখেছিলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক। বিভিন্ন বক্তার কথাগুলো নিজ হাতে লিখে রাখিনি বা রেকর্ডও করিনি। তাই কথাগুলো মুদ্রিত মিডিয়ায় যেমন ছাপা হয়েছে, তেমন উদ্ধৃত করছি। মানবজমিন, ১৬ মে সংখ্যার ৪ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে আমি উদ্ধৃত করছি। গোলাম পরোয়ার বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মুক্তির আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সাথে ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আর ২০ দলের সবাইকে কৌশলের বিষয়ে স্পষ্ট হতে হবে। জনগণের সাথে রাজনীতি করি বলে তাদের মনোভাবও বুঝতে হবে।’
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে ২০ দলীয় জোটের কার্যকারিতা অনেক নিচের স্তরে আছে। এটাকে কার্যকর করা হবে কি না জানি না। কবে হবে বা হবে না, তার জন্য বসে থাকলে চলবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমাদের প্রত্যেক দলের কর্মসূচি থাকা দরকার।’ কর্নেল অলি আহমেদ বীর বিক্রম যে কথাগুলো বলেন, তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান ছিল। অলির বক্তব্যের অংশ উদ্ধৃত করছি- ‘আমি মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিতে পারিনি, এবার স্বৈরশাসকের হাতে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। বিএনপির যারা আছেন, আপনাদের মধ্যে কথা বলেন। কারা কারা আসবেন, আমাদের সাথে আসেন। এলডিপিকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই। আপনারা নতুনভাবে এটার নামকরণ করেন। আমার নেতৃত্বে আসতে হবে, এটাও না। আপনাদের মধ্যে যদি কেউ নেতৃত্ব দিতে পারেন, তার নেতৃত্বেও আমরা কাজ করতে প্রস্তুত। জাতির কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, জাতির সাথে যে বেঈমানি করেনি, যার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং যে কারো সাথে আপস করবে না, দুর্নীতির কাছে মাথা নত করবে না, তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে আমার কোনো আপত্তি নেই। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক জায়গায় একত্রিত হোন। আমাদের হাতকে শক্তিশালী করুন। না হলে আপনাদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদেরকে বলেন, আমরা সেটা করতে রাজি আছি।’
এলডিপির মিটিংয়ের ব্যানারে দেয়া শিরোনাম ছিল, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং বেগম জিয়ার মুক্তি’। মধ্যবর্তী নির্বাচন মানে পাঁচ বছরের মাঝামাঝি দিন, অর্থাৎ আড়াই বছর যেদিন শেষ হবে- সেদিন নয়। মধ্যবর্তী নির্বাচন একটি রাজনৈতিক শব্দযুগল, একটি রাজনৈতিক শিরোনাম এবং রাজনৈতিক স্লোগান। মধ্যবর্তী নির্বাচনের অপর নাম অন্তর্বর্তী নির্বাচন। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ২৯-৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটি যেহেতু অবৈধ হয়ে পড়েছে, তাই নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন প্রয়োজন। এটার নতুন নির্বাচন বা অন্তর্বর্তী নির্বাচন বা মধ্যবর্তী নির্বাচন- এরূপ কোনো একটি নাম হবে এবং নির্বাচনটি হতে হবে নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য তত্ত¡াবধানে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন বা বর্তমান রাজনৈতিক সরকার কোনো মতেই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নয়। ওই আলোচনা সভায় আরো কয়েকজন সুপরিচিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রেখেছিলেন যেমন, বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী, বর্তমানে বিএনপির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য, সুপরিচিত টিভি আলোচক ও কলাম লেখক গোলাম মাওলা রনি, সুপরিচিত পেশাজীবী নেতা ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য ও সুপরিচিত টিভি আলোচক নিলুফার চৌধুরী মনি, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ, বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে বিশেষ সম্পাদক ডক্টর আসাদুজ্জামান রিপন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকা মহানগরের ঐতিহাসক ক্র্যাক প্লাটুন সদস্য ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় দল-এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এহসানুল হুদা, এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ প্রমুখ।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও প্রশ্ন উঠেছিল, ২০ দলীয় জোট ১৪ জানুয়ারির পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, করা উচিত কি উচিত না। বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, দলীয় তত্ত¡াবধানে বা ক্ষমতাসীন দলের অধীনে আয়োজিত ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপির ওই সিদ্ধান্ত ২০ দলীয় জোট, জোটগতভাবে সমর্থন ও অনুসরণ করেছিল। সময়টি ছিল খুব কঠিন। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট চাচ্ছিল, আওয়ামী লীগের দলীয় তত্ত¡াবধানে যেন নির্বাচন হতে না পারে। অপরপক্ষে-আওয়ামী লীগ সরকার চাচ্ছিল, নির্বাচন যেন অনুষ্ঠিত হয়। ওইরূপ পরিস্থিতিতে, অর্থাৎ ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর নির্বাচনের আগের সপ্তাহগুলোতে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছিলেন, ‘এটি একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। এই নির্বাচনটি হয়ে যাওয়ার পর যথাশীঘ্র সম্ভব সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার চেষ্টা করবে।’ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটিকে অংশগ্রহণমূলক হয়েছে এরূপ চেহারা দেয়ার জন্য, ক্ষমতাসীন সরকার ও তাদের শুভাকাক্সক্ষী প্রতিবেশী দেশের সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। ওই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকা আসেন এবং প্রকাশ্যেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে আসতে বাধ্য করেছিলেন। ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর আগেকার আন্দোলনের কথা সম্মানিত পাঠকদের মনে আছে। নির্বাচনের পরের দিন বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছিল। চূড়ান্ত পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকার আর কোনো নির্বাচনের আয়োজন করেনি, বরং পাঁচ বছর ধরে বিরোধী শিবিরের ওপরে শত প্রকারের নির্যাতন এবং দেশের অর্থনীতিতে শত প্রকারের দুর্নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সময়কালে সরকার বিভিন্ন নিয়মে চিন্তাভাবনা করতেই থাকে, কীভাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায়। সরকার কর্তৃক পর্যালোচনা করা মাধ্যমগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বেগম জিয়াকে রাজনীতির ময়দান থেকে এবং নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। অবাস্তব-অকল্পনীয় মামলার মাধ্যমে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এখানে একটি বাক্য লিখতেই হবে। তা ২০ দলীয় জোটের জোটগত মূল্যায়ন নয়, আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন। মূল্যায়নটি এই. বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রতিপক্ষ তথা আওয়ামী লীগ সরকারের কৌশলগুলোকে যথাসময়ে এবং যথেষ্টভাবে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে ২০ দলীয় জোট। ফলে ২০১৮ সালে আবারো প্রশ্ন আসে, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না।
এবারো বিএনপি সিদ্ধান্ত নেয়, দাবি-দাওয়া করতেই থাকব, আদায়ের চেষ্টা করতেই থাকব; কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেবো। বিএনপির এই সিদ্ধান্তকে ২০ দলীয় জোট জোটগতভাবে সমর্থন ও অনুসরণ করেছে। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বলা ছিল, বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবেই বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোট পার্লামেন্ট নির্বাচনে যাচ্ছে। এখন একটু ভিন্ন কথা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বহুবিধপন্থায় আবিষ্কার করেছিল যে, জনগণের মধ্যে তাদের পপুলারিটি বা গ্রহণযোগ্যতা অত্যন্ত দুর্বল, যার কারণে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই আওয়ামী লীগের সামনে গবেষণার বিষয় ছিল, কীভাবে বা পন্থায় নির্বাচন করলে তারা জয়ী হতে পারবে। সরকার গোপনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, প্রচলিত বা সুপরিচিত ভোট ডাকাতির পন্থাগুলোকে তারা পরিহার করবেন। সরকার গোপনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারা প্রশাসনিক শক্তিকেই ব্যবহার করে নির্বাচনী ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনবেন। তাই তারা নির্বাচনে পুলিশ আর বিজিবিকে এবং উপজেলা স্তরের নির্বাহী বিভাগকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়; ব্যবহার করে; নির্বাচনের ফলাফল তাদের অনুকূলে আনে; রাত্রিকালীন ডাকাতি করা ভোটকে স্বচ্ছ বলে চালানোর প্রয়াস পায় এবং এখনো টিকে আছে ক্ষমতায়।
২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে অথবা ডিসেম্বরের নির্বাচনের সাত-আট সপ্তাহ আগে এমনকি নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগেও বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক আচরণ কী হতে পারে, প্রতিপক্ষ এই সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে এ বিষয়গুলোর কোনো মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ যথেষ্ট ও সময়মতো করতে পারেনি। এটা আমাদের দুর্বলতা। ফলে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট সরকার কর্তৃক পেতে রাখা ফাঁদের মধ্যে প্রবেশ করে। প্রবেশ করা ভুল ছিল; আমি নিজেও সেই ভুলের অংশীদার।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন