বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বগুড়া যুবলীগের সাবেক নেতা মাকছুদুল গ্রেফতার

ব্যাংকের ৩১ কোটি টাকা আত্মসাৎ

বগুড়া ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) বগুড়া শাখা থেকে ৩১ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলায় বগুড়া যুবলীগের সাবেক নেতা মাকছুদুল আলম খোকনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে শহরের নামাজগড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পারিবারিক প্রভাবের কারণে পুলিশ গ্রেফতারের বিষয়টি গোপন রেখে গতকাল শনিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় চার্জশিটভুক্ত ওয়ারেন্টের আসামি মেসার্স মাসফা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাকছুদুল আলম খোকন নিয়ম মেনে আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। জানা যায়, ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ৪০ কোটি ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বগুড়া সদর থানায় ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে দুদক মামলাটি তদন্ত করে ৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে আর আত্মসাৎকৃত টাকার অংশ দাঁড়ায় ৩১ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল একই মামলায় বগুড়ার শুকরা এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল মান্নান আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে তাকে জেলহাজতে পাঠান আদালত। সে বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান।
চার্জশিটের বিবরণ অনুযায়ী জানা যায়, ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্রের হোতা হিসেবে ব্যাংকের বগুড়া শাখার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক (সাময়িক বরখাস্ত) রফিকুল ইসলাম, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ শাখার ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (সাময়িক বরখাস্ত) মো. আতিকুল কবির, বগুড়া শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্ত) মো. মাহবুবুর রহমানের যোগসাজশে ব্যাংকের গ্রাহকদের হিসাব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। আত্মসাৎকৃত অর্থের মধ্যে মাকসুদুল আলম খোকন একাই আত্মসাৎ করেন ৬ কোটি টাকা ।
বিবরণে আরো জানা যায়, ব্যাংকের একটি তদন্ত দল ওই সময়ের হিসাবপত্র খতিয়ে দেখে জানতে পারে, অর্থ আত্মসাৎকারীরা এই শাখার বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণকারী গ্রাহক মেসার্স আবু বকর সিদ্দিক ও মেসার্স আবদুল কুদ্দুস অ্যান্ড ব্রাদাসের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে বিনিয়োগ সুবিধা সৃষ্টি করে যোগসাজশকারীদের ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা স্থানান্তর করে। সেই টাকা তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ জালিয়াত চক্র আত্মসাৎ করে। ব্যাংকের অনুসন্ধানে ১৯টি ভুয়া হিসাবের সন্ধান পাওয়া যায়। এগুলো হলো মেসার্স এমএম ট্রেডিংয়ের মালিক মো. আকতার হোসেন ১০ কোটি ১০ লাখ, মেসার্স রিমা ফ্লাওয়ার মিলসের মো. জহুরুল হক ১০ কোটি ১৮ লাখ, মেসার্স নিলয় এন্টারপ্রাইজের মো. এনামুল হক প্রায় ৭ কোটি ৬০ লাখ, মেসার্স রুমা ট্রেডাসের আইরিন হোসাইন ১৫ লাখ, মেসার্স মাসফা এন্টারপ্রাইজের মাকছুদুল আলম প্রায় ৬ কোটি ৪৭ লাখ, মেসার্স ফিরোজ কনস্ট্রাকশনের ফিরোজ আহম্মেদের ৩ কোটি ৪২ লাখ, মেসার্স অতিথি ফিলিং স্টেশনের জাহাঙ্গীর আলম ৫ লাখ, মেসার্স হাসান কনস্ট্রাকশনের মো. ইমরুল ২৩ লাখ এবং মেসার্স জাহিদ কনস্ট্রাকশনের মো. জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
এ ছাড়া মেসার্স হীরা মোটরসের নিখিল রঞ্জন কর্মকার ৬০ লাখ, নিশিতা এন্টারপ্রাইজের নাহিদুজ্জামান ৩০ লাখ, মেসার্স আবদুল মতিন ট্রেডাসের আবদুল মতিন ২০ লাখ, মো. আখতার হোসেন ১৪ লাখ, মেসার্স আর রহমান এন্টারপ্রাইজের সোহেল রানা ১৪ লাখ, মেসার্স সুমন এন্টারপ্রাইজের মো. মাহবুবুর রহমান ১৩ লাখ, মো. রফিকুল ইসলাম ৩ লাখ, মো. ফেরদৌস আলম ২০ লাখ, আরিফুল কবির ৩২ লাখ এবং মাসুদ আহমেদের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
দুদক সূত্রে আরো জানা গেছে, এই মামলা তদন্তের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু করেন প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আখতার হামিদ ভূঞা। পরে এ মামলার তদন্ত করেন উপ-পরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হক। ২০১৪ সালের ৪ জুন তিনি আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আদালত চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সব আসামিকে অব্যাহতি দেন। এরপর হাইকোর্টে নারাজি আবেদন দাখিল করে ব্যাংক। নারাজি আমলে নিয়ে বিষয়টি আবারও তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন আদালত। পরে দুদকের সমন্বিত কার্যালয়ের (বগুড়া) তৎকালীন উপপরিচালক (বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত) মো. আনোয়ারুল হককে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।
আনোয়ারুল এ ঘটনা তদন্ত করে নয়জনের নামে অভিযোগপত্র জমা দেন ২০১৭ সালের আগস্টে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ব্যাংকের বরখাস্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, আতিকুল কবির, মাহবুবুর রহমান, জালিয়াত চক্রের সদস্য মো. আকতার হোসেন, মো. জহুরুল হক, মো. এনামুল হক, মাকছুদুল আলম, ফেরদৌস আলম ও শুকরা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আবদুল মান্নান। তবে এজাহারে থাকা অন্য আসামিদের টাকা পরিশোধ এবং ব্যাংকের পাওনা দাবি না থাকায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammed Kowaj Ali khan ২৬ মে, ২০১৯, ১০:২২ এএম says : 0
এই ..........রা জামীন পাইবে। কিন্ত জামীন পাইলেন না। খালেদা জিয়া। রুখে দাড়াও রাখতে বাংলাদেশের মান। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন