শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

‘আংগোর আবার কিসের ঈদ আনন্দ’

ভাঙনকবলিত মানুষের আহাজারি

সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

কখন নদী ভাঙে, আর কখন তল্পিতল্পা গোটাতে হয় এই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে সিরাজগঞ্জ জেলার নদী তীরবর্তী ৫টি উপজেলার নদীপাড়ের মানুষ। ঈদের আনন্দ তাদের এখন কিছুই না। জীবন আগে বাঁচাতে হবে সেই লড়াইয়ে ব্যস্ত সবাই। পেটে ভাত নেই, মনে নেই আনন্দ এমন অবস্থায় তাদের ঈদের খুশী আসে কিভাবে।

সারা দেশে ঈদের আমেজ লাগলেও নদী ভাঙন কবলিত সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর, কাজিপুর চরাঞ্চলের প্রায় হাজার পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ। গত দেড়মাসে যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বসত-ভিটে হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থরা এখন নিজেদের একটু মাথা গোজবার ঠাই খুঁজতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এদের অধিকাংশের ভাগ্যে এখনো জোটেনি ঈদের নতুন পোশাক। তবে জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ভাঙন কবলিত মানুষের মাঝে ঈদের আগেই সহযোগিতার হাত বাড়ানো হবে।

ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের দুঃখের কাহিনী। মোকলেস হোসেন, ছামিউল, কোরবান, আলতাফ ও জহুরার সাথে কথা হলে তারা আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, বসত ভিটা যমুনার প্যাটে, আংগোরে আবার কিসের ঈদ আনন্দ? প্যাটে খাওন না থাইক্যাও যদি বাড়ি ঘর থাকতো তাও ভাল ঠেকতো। এহন বাড়ি ঘর সব নদীতে আমারা আছি মাইনসের বাইত্তে উটুল্লী এর মদ্যে আবার নতুন পেরন দিয়াই কি করমু আর মিষ্টি নাস্তা পায়েসই কোনে পামু। এছাড়া স্কুল শিক্ষার্থী শিফাত, ফাহিমা ও জিলহজদের মতো প্রায় অর্ধশত শিশুর ভাগ্যেও এবার জোটেনি ঈদের নতুন পোশাক। তারাও তাদের পরিবারের অন্য সদস্যের সাথে ঘরবাড়ি সারাতে ব্যস্ত ঈদ তাদের মনেও নাড়া দিচ্ছে না।

সরেজমিন জানা যায়, দুই বছর ধরে তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ এনায়েতপুরের ব্রাহ্মনগ্রাম-আড়কান্দি থেকে পাঁচিল পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়। গত বছরের ভয়াবহ নদী ভাঙনে খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা সকলেই পরিদর্শন করেন এই অঞ্চল। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের এই পরিদর্শন কোন কাজে আসেনি নদী ভাঙনরোধের ব্যবস্থায়। এদিকে গত দেড়মাস ধরে আবারো নদী ভাঙনের কবলে বসতবাড়ি হারিয়েছে অন্তত দুইশতাধিক পরিবারের বসত-বাড়ি। সাথে নদীতে চলে গেছে স্কুল, মাদরাসা, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও বিস্তর ফসলি জমি। বর্তমানে নিজেদের বাড়িঘর সরাতেই এখন ব্যস্ত এই এলাকার মানুষ আবার অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি, ওয়াবদা বাঁধসহ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিচ্ছেন। তাই আসন্ন ঈদুল ফিতরের আনন্দ তাদের মনে আর কোন দাগ কাটছে না। একই সাথে ভাঙন আতঙ্কে আছে নদী পাড়ে অবস্থিত দেশের বৃহৎ কাপড়ের হাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বসবাসরত হাজারো মানুষ।

এ বিষয়ে খুকনী ইউনিয়নের স্থানীয় সদস্য সোহরাব আলী জানান, এই এলাকার মানুষ ঈদের আগে ত্রান নয়, চায় একটি বাঁধ। যা তাদের মাথা গোজার ঠাঁইটুকুকে রক্ষা করবে। এখনই নদী তীর রক্ষা স্থায়ী বাঁধ না হলে ভবিষ্যৎ আরো করুণ অবস্থায় পড়তে হবে এ এলাকার হাজার হাজার মানুষকে।

তবে শাহজাদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রফেসর আজাদ রহমান শাহজাহান জানালেন, ঈদের আগেই ভাঙন কবলিত মানুষের জন্য নগদ অর্থ ও খাদ্যের ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে জেলার কাজিপুর উপজেলায় বর্ষা শুরু হতে না হতেই নদীপাড়ের ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ৩ গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ী ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এই ভাঙনের আতঙ্কে এলাকার মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় মালামাল স্থানান্তর করছে। জানা গেছে, ১৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে ডান তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পটি ২ মাস আগে টেন্ডার হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করেনি ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের।

কাজিপুর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় জানান, ২০০৮ সাল থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি ব্যয়ে ৮০ শতাংশ ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী ৩টি গ্রামের কাজ আগামী অর্থ বছরের মধ্যেই শেষ হবে। এরই মধ্যে কাজ শুরু করার আগেই ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। তাই ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এব্যপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, দাপ্তরিক জটিলতার কারনে কাজ শুরু করতে দেরী হচ্ছে। শিগগিরই এই এলাকার ভাঙন রোধের জন্য জিও ব্যাগ ফেলা হবে। আর বাকী কাজ শুষ্ক মৌসুমে সম্পন্ন করা হবে। সবকিছু মিলিয়ে এবার যমুনা নদী তীরবর্তী ৫টি উপজেলার মানুষের ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন